জয়তী-টিনা-দেবিনা
গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে হিন্দি সিরিয়ালের শুটিং। মুম্বইয়ে ছোট পর্দায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন অনেক বাঙালি অভিনেতাই। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা কেমন আছেন, কী ভাবে শুরু করছেন ‘নিউ নর্মাল’ শুটিং?
কাজে ফিরলেন
পারিশ্রমিক কমবে না, এটা নিশ্চিত হওয়ার পরই ‘আলাদীন - নাম তো সুনা হোগা’ ধারাবাহিকের শুটিং শুরু করলেন অভিনেত্রী দেবিনা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘নিজের যোগ্যতায় এই পারিশ্রমিক অর্জন করেছি। কিন্তু এখন বাড়তি খরচ বইতে হচ্ছে। ড্রাইভারকে নিজের বাড়িতে এনে রেখেছি। এখন শুটিং করলে নিজের সঙ্গে ড্রাইভারের সুরক্ষাও দেখতে হবে। টাকা কমালে বাড়তি খরচ বহন করা সম্ভব নয়,’’ বললেন দেবিনা। শুটিংয়ে তিনি রোজ সঙ্গে নিয়ে যান নিজের ও ড্রাইভারের জন্য লাঞ্চ, জল, স্যানিটাইজ়ার। জীবনবিমা নিশ্চিত করেই পারিশ্রমিকের ১৫ শতাংশ কমানোর শর্ত মেনে নিয়েছেন ‘কুণ্ডলী ভাগ্য’র রমোনা খন্না অর্থাৎ কস্তুরী বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিকে প্রথম হিন্দি ধারাবাহিকের শুটিং ও বাড়ির কাজ, একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ‘পবিত্র ভাগ্য’র সংগ্রাম খুরানা অর্থাৎ জয়দীপ সিংহ। বললেন, ‘‘স্টুডিয়োতে ঢুকে রোজ ডাক্তারি পরীক্ষায় পাশ করলে শুটিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়। প্রতি ইউনিটে একজন ডাক্তার, দু’জন নার্স ও একটি অ্যাম্বুলেন্স রাখা থাকে। শুটিং এখন বিরাট ঝক্কির।’’
ওয়েবে ডেবিউ
ছোট পর্দার সফল অভিনেত্রী টিনা দত্ত সিরিয়ালে আর ফিরছেন না। ওয়েবে ডেবিউ করতে চলেছেন ‘উতরন’-এর ইচ্ছা। টিভিতে ‘ডাইন’ ছিল শেষ কাজ। তাঁর প্রথম ওয়েব সিরিজ়ের শুটিং শুরু হবে অগস্টে। টিনার কথায় ‘‘ওয়েবে টানা শুটিং করতে হয় না অথচ অভিনয়ের সুযোগ বেশি।’’ আর এক বাঙালি অভিনেত্রী মৌলি গঙ্গোপাধ্যায়ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকেই এগিয়ে রাখলেন। ‘‘কহিঁ কিসি রোজ’-এর শায়নার চরিত্রটা রেকর্ড গড়েছিল। দুই ডিজিটের টিআরপি দেখেছি তখন। এখন তো তিন-চার রেটিং উঠলেই লাফায় সকলে। ফর্মুলা মেনে সিরিয়াল করতে আর ভাল লাগছে না,’’ বললেন মৌলি। শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছেন। একটি ওয়েব সিরিজ়েরও শুটিং করছেন।
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
শুটিং শুরুর ছাড়পত্র মিললেও কাজে ফেরার নিশ্চয়তা নেই অনেকেরই। যেমন চিন্তিত সায়ন্তনী ঘোষ। বন্ধ হতে চলা ধারাবাহিকের তালিকায় ‘নাগিন ৪’ রয়েছে। যদিও সায়ন্তনী অভিনীত মান্যতা চরিত্রটি শেষ হয়ে গিয়েছে মার্চেই। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘জীবনটাই এখন অনিশ্চিত, সেখানে শুধু কাজ নিয়ে না ভেবে নিজেকে মোটিভেট করার চেষ্টা করছি নানা ভাবে। বহু বছর পর বাবা-মা, ভাই মুম্বইয়ে এসেছে। পরিবারকে কাছে পেয়ে মানসিক অস্থিরতা অনেকটাই কাটিয়েছি।’’
অভিনেতাদের কাজের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কমলিকা গুহ ঠাকুরতা, ‘‘শুধু যাঁরা খালি পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরলেন, তাঁরাই পরিযায়ী? আমরা যাঁরা অভিনয় বা নানা কাজের সূত্রে মুম্বইতে পড়ে রয়েছি, তাঁরা কী?’’ ‘কিঁউ কি সাস ভী কভি বহু থী’-র গায়ত্রী হিসেবে এখনও দর্শক মনে রেখেছেন কমলিকাকে। নতুন ধারাবাহিক নিয়ে কথা চললেও তা বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চয়তা নেই। হাতে কাজ নেই দেবলীনা ভট্টাচার্যেরও। গত বছর ‘বিগ বস’-এর পর থেকে দেবলীনাকে আর পর্দায় দেখা যায়নি। বিষণ্ণতায় ডুবে আছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
শিকড়ের টানে
প্রায় ১৮ বছর কাটিয়ে মুম্বই ছাড়লেন রেশমি ঘোষ। এত বছরের যাত্রাপথ খুব একটা মসৃণ ছিল না। তবে লড়াইয়ের পর সাফল্যও পেয়েছেন। এ বার টলিউডে কাজ করতে চান। রেশমির কথায়, ‘‘কলকাতাকে অনেক নিরাপদ মনে হচ্ছে এখন। কাজের দিক থেকেও, মা-বাবার সঙ্গে থাকতে পেরেও।’’ ‘তানসেনের তানপুরা’ ওয়েব সিরিজ়ে বাংলায় ডেবিউ করলেন জয়তী চট্টোপাধ্যায় ভাটিয়া। ‘সসুরাল সিমর কা’, ‘সিঁদুর তেরা নাম কা’ মতো বহু জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘‘৪৫ বছর বয়সে ডেবিউ করলাম বাংলায়। ভাল কাজের অপেক্ষায় রয়েছি। মুম্বই ছাড়তে রাজি,’’ বললেন জয়তী।
দোলাচলে যাঁরা
কলকাতায় ফিরলেও কাজ শুরু করা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেননি অঙ্কিতা চক্রবর্তী। হিন্দি ওয়েব সিরিজ়, ওয়েব ফিল্মে কাজ করছিলেন তিনি। ধারাবাহিকের অফার ফেরালেও অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে ছোট পর্দাতেই ফিরতে হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধান্বিত ‘ইষ্টি কুটুম ’-এর কমলিকা। একই অবস্থা চিত্রাঙ্গদা শতরূপারও। মনের মতো কাজ পেলে থেকে যাবেন কলকাতায়, নয়তো আবার ফিরতে হবে মুম্বইয়ে।
লকডাউন বদলে দিয়েছে সব হিসেবনিকেশ। আবার নতুন করে যাত্রাপথ তৈরি করছেন অভিনেতারা...