‘ত্রিনয়নী’র সেটে। নিজস্ব চিত্র।
দিন গড়িয়েছে সন্ধ্যের দিকে। একে একে জ্বলে উঠছে স্ট্রিট লাইট। জ্বলে উঠছে ভারতলক্ষ্ণী স্টুডিয়োর বাইরের আলোগুলোও। স্টুডিয়োর গাছপালাগুলোয় রাতের আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছে পাখি। ফ্লোরে ফ্লোরে শুটিংয়ের ব্যস্ততা। ‘ত্রিনয়নী’-র ফ্লোরেও নায়ক-নায়িকার এক রোম্যান্টিক দৃশ্য শুটের আয়োজন। চলছে তারই মহড়া। মহড়ার ফাঁকে ধরা গেল নায়িকা-নায়ককে। গল্পের ত্রিনয়নী এবং দৃপ্ত, শ্রুতি দাস ও গৌরব রায়চৌধুরীকে।
শ্রুতি মজা করে বললেন, “গৌরব অনেক ক্ষণ ধরে চুপ করে থাকে। তার পর কানের কাছে একটা কথা বলে টুক করে বেরিয়ে যায়। মানে, ওইটাই হচ্ছে দশটা চড়ের সমান। হা হা হা...”, শ্রুতি হেসেই চলেছেন। গৌরবের চোখে ঝিলিক দিয়ে যায় দুষ্টুমি। হাসি থামিয়ে মজার গলায় আক্ষেপ শ্রুতির, “আমি ওকে শত চেষ্টা করলেও ফলস পজিশনে ফেলতে পারি না। ওই আমাকে সব সময় ফলস পজিশনে ফেলে দেয়!”
গৌরব মৃদু হাসছেন। হাসিতে শ্রুতির কথার সমর্থন যেন বা। কিন্তু মুখে বলছেন, “আমি কিছুই জানি না, কিছুই বুঝি না।”
ট্র্যাকের উপর ক্যামেরা। ক্যামেরার চলন মসৃণ কি না দেখে নিচ্ছেন ট্রলি সেটিং ও ক্যামেরার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। কালো কাপড়ের প্রেক্ষাপটে জ্বলে উঠছে নীলচে আলো। ‘রুস্তম’ ফিল্মের ‘দেখা হাজারো দাফা...’ গানটি বেজে উঠলো স্পিকারে। এই গানের ওপরেই হবে রোম্যান্টিক মুডের দৃশ্যায়ন। অক্ষয় কুমার, ইলিয়ানা ডি’ক্রুজের বদলে গৌরব ও শ্রুতি মেলে ধরবেন নিজেদের রসায়ন। তাঁদের রসায়নটা ঠিক কেমন?
আরও পড়ুন: কী হইতে কী হইয়া গেল
আরও পড়ুন: সঞ্চালক হিসেবে ছোট পর্দায় ফিরছেন প্রিয়ঙ্কা
‘ত্রিনয়নী’র একটি দৃশ্য।
শ্রুতি শেয়ার করলেন, “আমরা সারা দিন কম কথা বলি... আড্ডা হয় না। কারণ, সময় হয় না। তবে ভাল বন্ধুত্ব। সিন করার সময় আমরা এত ডেডিকেটেডলি করি যে সিনের বাইরে যেমনই সম্পর্ক থাক সেটা এফেক্ট করে না। সে জন্যই দর্শক আমাদের এতটা ভালবাসে।”
গৌরব ধরতাই দেন, “ঠিক। প্রথম কথা, আমাদের এখানে প্রেসার থাকে। ও সিন মুখস্থ করে। আমাকেও করতে হয়। যদিও ওর মতো পড়াশোনা আমি করি না।”
শুটের বাইরে না হয় সময়ের অভাব। তা বলে শুটের সময় দুষ্টুমি হয় না? গৌরবের মতো নায়ক সেটে থাকলে সেটা না হওয়ার কথা নয়।
শ্রুতি বলেই ফেললেন, “গৌরব দুষ্টুমি করে মাঝে মাঝে।”
গৌরব ধরিয়ে দিলেন, “যখন আমার ক্লোজ যায় তখন। ও তখন ব্যাক টু দ্য ক্যামেরা থাকে।”
শ্রুতি স্বীকার করে নিলেন, “হ্যাঁ, যখন ওর প্রেফারেন্স থাকে তখন ওর কনসার্ন থাকা উচিত। কিন্তু ও ঠিক ওই সময়ে বদমায়েশি করে। আমি ব্যাক টু ক্যামেরা থাকলেও আমাকে এত হাসায় যে হাসির আওয়াজগুলো ওর ডায়ালগের সঙ্গে রেকর্ড হয়ে যায়। কিন্তু আমার প্রেফারেন্সের সময় ও কোনও দিন হ্যারাস করে না আমাকে। এটা একটা ভাল বিষয়।”
সে জন্য ওকে ধন্যবাদ দেবেন? শ্রুতি উদার, “ধন্যবাদ না। ওর ট্যালেন্টের প্রশংসা করছি। এত মিচকে। সিরিয়াস সিন চলছে, চোখে গ্লিসারিন নিয়েছে। দুষ্টুমি করে আবার চোখে জল বের করে দেয়। এমন ট্যালেন্টেড। ইন্ডাস্ট্রিতে কি এমনি এমনি ওর আট বছর কাটলো?”
গৌরব শ্রুতির কথা সমর্থন করেন, “হয়ে যায়, মুড ভাল থাকলে হয়ে যায়।”
আর্ট সেটিংয়ের লোকজন সাদা রঙের লাইটপোস্ট দিয়ে সেট সাজিয়েছেন। সেই থাম ধরেই চলবে রোম্যান্টিক দৃশ্যায়ন। রিহার্সালে যাওয়ার আগে বড় বড় চোখ মেলে শ্রুতি বললেন, গৌরব ও তাঁর গোপন খুনসুটি, “গৌরব এতটাই বুদ্ধিমান ভদ্রলোক, আনফরচুনেটলি ও আমার সবটা জানে, কিন্তু আমি ওর কিছুই ধরব ধরব করেও ধরতে পারি না।”
গৌরব দুষ্টুমির মুডে গান ধরলেন, “সবটা... দেব না, দেব না, দেব না রে...”
সবাই রেডি। পরিচালক বললেন, ‘অ্যাকশন।’
নীলচে আলোর ভেতর জ্বলন্ত মোমবাতি ও সাদা লাইটপোস্টকে কেন্দ্র করে অ্যাকশনে মেতে উঠলেন শ্রুতি ও গৌরব। শুটের ফাঁকে চলল সেলফি তোলা। গৌরবের দুষ্টুমিও!