‘হামি’র দুই খুদে ব্রত এবং তিয়াসা।
শনি এবং রবির বিকেল। ছুটির বিকেল। ‘হামি’র বিকেল।
শহর কলকাতা হোক বা আধা মফস্বল— লাস্ট উইকেন্ডে চিত্রটা অনেকটাই এরকমই। হল মালিকদের বেশিরভাগই জানালেন, ইভনিং শো এই দু’দিন হাউজফুল। আর বাদবাকি শো-এও ৯৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়েছে।
উত্তর কলকাতার স্টার থিয়েটারের পক্ষ থেকে রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘গতকাল এবং আজ দু’দিনই আমাদের ছ’টা ২৫-এর শো হাউজফুল। দুপুরের শো-এর টিকিটও ৯৫ শতাংশ বিক্রি হয়েছিল।’’ আবার দক্ষিণ কলকাতার নবীনা সিনেমার কর্ণধার নবীন চৌখানির কথায়, ‘‘সাতটার শো হাউজফুল। অ্যাডভান্স বুকিংও হয়েছে। সাড়ে চারটের শো দু’দিনই ৯৩ শতাংশ ফুল ছিল।’’ অর্থাত্ প্রথম উইকেন্ডে ‘হামি’র রেজাল্ট ভাল বলেই মনে করছেন ইন্ডাস্ট্রির একটা বড় অংশ।
কিন্তু এই ‘হামি’ই হলের কাঁটায় জেরবার। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়ের ট্র্যাক রেকর্ড বলছে, পর পর কয়েকটা ছবিতে তাঁরা লক্ষ্মী-সরস্বতীকে এক সূত্রে বেঁধেছেন। অর্থাত্ ছবির বিষয় বা অভিনয় যেমন সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে, তেমনই বক্স অফিসে দারুণ স্কোর করতে সাহায্য করেছেন দর্শক। সেই পরিচালক জুটির এই অভিজ্ঞতা প্রথম। দীর্ঘ কেরিয়ারে এই প্রথম তাঁদের ছবির হল পাওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন, ‘হামি’ মানে কী? উত্তরে ওরা বলল...
আসল ঘটনাটি ঠিক কী?
গত ১১ মে গোটা বাংলার ৯০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘হামি’। কিন্তু সেই তালিকায় বাদ কলকাতার সাতটি হল। প্রিয়া, বসুশ্রী, প্রাচী, মেনকা, অজন্তা, অশোকা, মালঞ্চে দেখানো হচ্ছে না এই ছবি। শিবপ্রসাদের অভিযোগ ছিল, ‘‘নবীনায় ‘হামি’ চালানো হলে এই সাতটি হলে ‘হামি’ দেখানো হবে না বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পিছনে মুখ্য উদ্যোক্তা হলেন প্রিয়া হলের কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত। অথচ নবীনা ও প্রিয়া দুটোতেই ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ইনফিনিটি ওয়ার’ চলছে। দু’টিতেই ‘রাজি’ও মুক্তি পেয়েছে। ইংরেজি-হিন্দি ছবির ক্ষেত্রে সমস্যা নেই। যত সমস্যা বাংলার ক্ষেত্রে। আজ ‘হামি’র সঙ্গে হচ্ছে। কাল অন্য ছবির সঙ্গে। এ ভাবে চলতে পারে না।’’ নন্দিতা বলেছিলেন, ‘‘এ ভাবে চললে পিছিয়ে পড়বে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি।’’
‘হামি’র দৃশ্যে শিবপ্রসাদ এবং গার্গী।
যদিও, অরিজিৎ দত্তকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সে সময় পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেন, ‘‘আপনাদের ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে। আমার সিনেমা হলে ‘দৃষ্টিকোণ’ খুব ভাল চলছে। ছবিটা নামাতে পারব না। ‘অ্যাভেঞ্জার্স..’-এর সঙ্গে আমি চুক্তিবদ্ধ। আর ‘রাজি’র ডিস্ট্রিবিউটার্সের সঙ্গে অনেক দিনের সম্পর্ক। শিবুর ছবিকে নাইট শো দিতে পারি। ওরা সেটা নেবে না। তাই সেখানেও ‘রাজি’ চালাচ্ছি।’’
অরিজিতের কথা শুনে শিবপ্রসাদ বলেছিলেন, ‘‘নাইট শো দেওয়ার ব্যাপারে আমাকে কিছু বলা হয়নি। সাফ বলা হয়েছে, শো দেওয়া হবে না। আমার কাছে লিখিত প্রমাণ আছে। সিনেপলিসে রাত দশটার শো আছে। তা হলে প্রিয়ার নাইট শো আমি কেন নেব না?’’
আরও পড়ুন, লাইভ আড্ডায় টিম ‘হামি’
অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের চাপানউতোর চলছেই। তবে এর মধ্যেই আসল জবাব দিচ্ছেন দর্শক। অন্তত তেমনটাই মত নবীনার কর্ণধারের। নবীনের মতে, ‘‘দেখুন, ভাল ছবি সব সময় চলবে। যেটা হয়েছে সেটা খুব খারাপ। বাংলার প্রোডিউসারকে সাপোর্ট করা উচিত ছিল। ওরা ‘রাজি’ চালাচ্ছে নবীনার সঙ্গে। আর বাংলা ছবিটা চালাতে পারল না। এই তর্কটাই খুব খারাপ লেগেছে। এর আগে শিবুর যা ছবি আমরা নিয়েছি ৫০ দিন চালিয়েছি। এটাও যা ট্রেন্ড চার-পাঁচ সপ্তাহ ভাল ভাবেই চলবে।’’
একই মত স্টারের তরফে রঞ্জনেরও। তাঁর মতে, ‘‘প্রথম উইকেন্ডের ট্রেন্ড দেখে মনে হচ্ছে ‘হামি’ ভালই চলবে।’’ আইনক্স, এসভিএফ সিনেমাস সহ বাকি সিনেমা হলের অধিকাংশের পাল্লা ভারি ‘হামি’র দিকে। প্রথম উইকেন্ডে দর্শক অফুরান ভালবাসা দিয়েছেন ব্রত-তিয়াসা-লাল্টু-মিতালিদের।
আরও পড়ুন, ছেলেকে নিয়ে অন্য উড়ান ‘মিসেস ইন্ডিয়া’ চুমকির
‘হামি’-র এই ঘটনার জেরে প্রিয়া,নবীনা এই দুই হলের দীর্ঘদিনের অলিখিত শত্রুতাই আরও প্রকট হল বলে মনে করছেন ইন্ডাস্ট্রির একটা বড় অংশ। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে আখেরে ক্ষতি কিন্তু বাংলা ইন্ডাস্ট্রিরই।
তবে শিবপ্রসাদ-নন্দিতা জুটি সব সময়ই ভরসা রাখেন দর্শকের ওপর। এই সমস্যার পরেও তাঁরা সবটাই ছেড়ে দিয়েছেন দর্শকদের ওপরই। ‘হামি’ও সেই মার্কশিটে ভাল রেজাল্ট করবে বলেই আশা তাঁদের।