বাবা নামজাদা পরিচালক। মা অভিনেত্রী। জনি ওয়াকার, কিশোরকুমার এবং শাম্মি কপূরদের কোলে ঘুরেছেন একসময়। অথচ বলিউডে গুড্ডি মারুতির পরিচিতি ছিল স্থূলকায় অভিনেত্রী হিসেবে। এক কালে যে ওজনের জন্য হীনমন্যতায় ভুগতেন তিনি, সেই ওজনই ব্যতিক্রমী করে তুলেছিল তাঁকে। আবার সেই ওজনের জন্যই বলিউডকে বিদায় জানান তিনি।
১৯৫৯ সালের ৪ এপ্রিল জন্ম হয় তাহিরা মারুতির। পরিচালক মারুতিরাও পরব তাঁর বাবা। মা কমলও ছিলেন অভিনেত্রী। তাহিরার ডাক নাম ছিল গুড্ডি। পরবর্তী কালে সেটিকেই তাঁর স্ক্রিন নাম হিসেবে বেছে দেন পরিচালক মনমোহন দেশাই।
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে গুড্ডির বাবা মারুতিরাও অভিনয়ও করতেন। ‘খান দোস্ত’, ‘কহিঁ আর কহিঁ পার’-সহ একগুচ্ছ ছবিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। পরবর্তী কালে পরিচালনায় হাত দেন। ‘হম সব উস্তাদ হ্যায়’, ‘হম সব চোর হ্যায়’, ‘বাগি শাহজাদা’, ‘কহিঁ আর কহিঁ পার’-এর মতো ছবি পরিচালনাও করেছেন তিনি।
বাবার সূত্রেই ছোট্ট বয়স থেকে স্টুডিয়ো পাড়ায় আনাগোনা ছিল গুড্ডির। ছোট থেকেই স্থূলকায় ছিলেন তিনি। তার জন্য স্কুলে সহপাঠীদের বিদ্রুপের শিকার হতে হয় তাঁকে। যে কারণে স্কুলে তাঁর তেমন বন্ধু ছিল না। বরং বাবার সঙ্গে স্টুডিয়ো পাড়ায় সময় কাটানো ঢের বেশি পছন্দ ছিল তাঁর।
স্টুডিয়ো পাড়ায় এই যাতায়াতের সূত্রেই ১০ বছর বয়সে ‘জান হাজির হ্যায়’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়ের সুযোগ পান গুড্ডি। তাঁর বাবার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল কিশোরকুমার, শাম্মি কপূর, জনি ওয়াকারদের। তাঁদের ‘আঙ্কল’ বলে ডাকতেন গুড্ডি।
বাবা বেঁচে থাকাকালীন নেহাত শখের বশেই অভিনয় করতেন গুড্ডি। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর দুই ভাই-বোন এবং মা-সহ গোটা পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর উপর। রোজগারের জন্য তাই অভিনয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। প্রখ্যাত অভিনেতা জগদীপের কাছে তালিমও নেন।
ভারী ওজনের জন্য সেই সময় মূলত কৌতুকাভিনেত্রীর চরিত্রই পেতেন গুড্ডি। টুনটুন, প্রীতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে মতো মহিলা কৌতুকাভিনেত্রীদের সঙ্গে তুলনা শুরু হয় তাঁর। তাই ভারী ওজনই যে তাঁর ইউএসপি, তা বুঝতে পারেন গুড্ডি। তাই তা নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগার চেয়ে, সাফল্য উপভোগ করতে শুরু করেন তিনি।
পরিবারের জন্য রোজগার করলেও অভিনেত্রী হিসেবে খিদে মেটাতে পারছিলেন না গুড্ডি। তাই নিজের ওজনকে হাতিয়ার করে ‘লোক হাসানো’র চেয়ে, চরিত্রাভিনেত্রী হওয়ার দিকে ঝোঁকেন তিনি। তার জন্য ওজন কমাবেন বলেও সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু তা করতে গিয়ে বাধা পান গুড্ডি। তাঁকে বলা হয়, ভারী ওজনই তাঁর পরিচিতি। ওজন ঝরিয়ে ফেললে আর পাঁচ জনের সঙ্গে তাঁর আর কোনও ফারাক থাকবে না। সে ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাবে। তাই ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে সে যাত্রায় সরে আসেন গুড্ডি।
১৯৯৫ সালে টেলিভিশন সিরিজ ‘সরি মেরি লরি’-তে অভিনয়ের সুযোগ পান গুড্ডি। সেই সময় তাঁর ওজন ১০ কেজি কমে গিয়েছিল। কিন্তু তাতে পরিচালক রেগে যান। গুড্ডিকে ফের ওজন বাড়ানোর নির্দেশ দেন তিনি। সেই মতো ওজন বাড়িয়ে ওই সিরিজে অভিনয়ের সুযোগ পান গুড্ডি।
১৯৯৭ সালে গুড্ডির জীবনে এক বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসে। সেই সময় বলিউডের তারকারা প্রায়শই আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়াদের থেকে হুমকি পেতেন। বলিউডের বহু তারকার আন্ডারওয়ার্ল্ড সংযোগও ধরা পড়ে। গুড্ডির পরিবারেও তার ছায়া পড়ে। তাঁর ভাইকে গুলি করে খুন করে ছোটা শাকিলের এক শাগরেদ।
সেই শোক কাটিয়ে ফের কেরিয়ারে মন দেন গুড্ডি। নব্বইয়ের দশকে একের পর হিট ছবিতে অভিনয় করেন তিনি, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ‘শোলা অউর শবনম’, ‘দুলহে রাজা’, ‘দিল তেরা আশিক’, ‘ছোটে সরকার’, ‘বিবি নম্বর ওয়ান’, ‘খিলাড়ি’।
বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও চুটিয়ে অভিনয় করেন গুড্ডি। ‘ইধর উধর’, ‘আগডম বাগডম টিগডম’, ‘মিসেস কৌশিক কি পাঁচ বহুয়েঁ’, ‘ডোলি আরমানোঁ কি’, ‘ইয়ে উন দিনোঁ কি বাত হ্যায়’, ‘হ্যালো জিন্দেগি’ তাঁর অভিনীত কিছু জনপ্রিয় সিরিয়ালের মধ্যে পড়ে।
২০০৫ সালে বলিউড থেকে দীর্ঘ বিরতি নেন গুড্ডি। অশোক নামের এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে সেই সময় সংসারে মন দেন তিনি। সন্তানধারণে যাতে সমস্যা না হয় তার জন্য ওজনও ঝরিয়ে ফেলেন।
২০১৬-য় ফের টেলিভিশনে কামব্যাক করেন গুড্ডি। তবে কৌতুক চরিত্র ছেড়ে সেই সময় খলনায়িকার চরিত্রের দিকে ঝোঁকেন তিনি। বর্তমানে মুম্বইয়ের বান্দ্রার একটি অভিজাত এলাকায় স্বামী-সংসার নিয়ে থাকেন গুড্ডি। অভিনয় এবং সংসার, দু’টোই সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।