গৌরব এবং দেবলীনা। ছবি: ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে।
তিনি উত্তমকুমারের নাতি। হ্যাঁ, এটাই ইন্ডাস্ট্রিতে ছিল তাঁর প্রাথমিক পরিচয়। তবে ইদানীং তাঁকে নিজের নামেও চিনতে শুরু করেছেন দর্শক। তিনি গৌরব চট্টোপাধ্যায়। নিজের মতো থাকতে পছন্দ করেন। পার্টি না-পসন্দ। কোনও গসিপে পাত্তা দেন না। কিন্তু তাঁকে নিয়েই চলছে গসিপ! ইন্ডাস্ট্রির নয়া গসিপ, প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর ইদানীং গৌরব নাকি নতুন রিলেশনশিপে রয়েছেন। আর সেই বিশেষ মানুষটিও পরিচিত মুখ। খবরটা কি সত্যি? এ প্রশ্ন নিয়েই ‘আদরিনি’র শুটিং ব্রেকে পৌঁছেছিলাম গৌরবের কাছে। মেকআপ রুমে বসে মন খুললেন অভিনেতা। লভ লাইফ, কেরিয়ার, ফিউচার প্ল্যান— আড্ডায় উঠে এল অনেক কথা। আর ওই বিশেষ গসিপ কনফার্ম করলেন ওই বিশেষ পরিচিত মানুষটিও।
‘ও বলতে বারণ করেছে’
সোশ্যাল মিডিয়ায় গৌরবকে যাঁরা ফলো করেন, তাঁরা অনেকেই দেখছেন, গত কয়েক মাস ধরে বিশেষ এক জনের সঙ্গে বহু ছবি শেয়ার করেছেন অভিনেতা। সেই বিশেষ মানুষটি হলেন অভিনেত্রী দেবলীনা কুমার। তা হলে কি রিলেশনশিপে রয়েছেন গৌরব-দেবলীনা? প্রশ্নটা করতেই ডিফেন্সিভ গৌরব। ‘‘আমার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ফলো করলেই সবটা বোঝা যাবে। দেখুন, আমি খুব অনেস্ট। আমার ফ্যামিলির কাছেও সব পরিষ্কার। কিন্তু তার বাবা-মায়ের কাছে মার খাওয়ার ভয় রয়েছে। ফলে লোকে আমার রিলেশনশিপ নিয়ে জানতেই পারে, কিন্তু আমি নিজে থেকে কিছু মেনশন করতে চাই না। বলিও না।’’ হেসে বললেন গৌরব। সে কী! দেবলীনার নামও বলবেন না? আর যখন সকলেই জানেন, তখন আর অফিশিয়ালি আপনার বলতে আপত্তি কোথায়? মুচকি হেসে গৌরবের জবাব, ‘‘ও বারণ করেছে।’’
উইথ পারমিশন
দেবলীনাকে তিনি যে বেশ সমঝে চলেন, তা বোঝাই যাচ্ছে। কারণ সম্পর্ক নিয়ে মিডিয়ায় কী লেখা হবে, তা আগাম বান্ধবীকে দেখিয়ে, তবেই পারমিশান দিলেন অভিনেতা। যদিও হেসে ব্যাখ্যা করেছেন, ‘‘আই অ্যাম অ্যান ওপেন বুক। তবে কিছু কিছু ব্যাপারে সুপারস্টিসাস আমি। যেমন, শুটিং শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনও কাজ মেনশন করি না। তেমনই আর কি।’’
আরও পড়ুন, ‘শট রেডি, ডাকতে আসবে, কিন্তু উঠব না, এ ভাবেই মরতে চাই’
প্রথম আলাপ
গৌরব জানিয়েছেন, দেবলীনা তাঁর দিদি নবমীতা এবং বোন মৌমিতার বন্ধু। নিজের ২৫ বছরের জন্মদিনেও নাকি নবমীতা ও মৌমিতাকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন দেবলীনা। গত বছর লক্ষ্মীপুজোতেই তিনি চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে গিয়েছিলেন গভীর রাতে। গৌরব শেয়ার করলেন, ‘‘দু’বছর আগে একটা মহালয়ার শো হয়েছিল। তখন শুধু লুক এক্সচেঞ্জ হয়েছিল। তার পর তো বোনের বিয়ের সময়, সবাই জানে…।’’
এখনও তেমন কিছু নয়…
গৌরব সাক্ষাত্কারে কী কী বলেছেন, তা পাবলিশ হওয়ার আগেই পড়ে ফেলেছেন দেবলীনা। কিন্তু সম্পর্কের বিষয়ে মুখ খোলার সময় বেশ সাবধানী অভিনেত্রী। ‘‘আসলে এখনও সে ভাবে কিছু ম্যাচিওর করেছে, তেমন নয়। মিকুন মানে ওর বোন মৌমিতার বিয়ের সময় আমাদের কথাবার্তা বেশি করে হয়েছিল। আমাদের একটা নাচও ভাইরাল হয় সে সময়। তারপরই…।’’
বিয়ে কবে?
ফিউচার প্ল্যান নিয়ে এখনই কিছু ভাবতে নারাজ গৌরব। তাঁর কথায়, ‘‘বিয়ের কথা এখনই ভাবছি না। সকলেই জানেন আমার একটা ফেলড ম্যারেজ আছে। ফলে আই ওয়ান্ট টু টেক থিং স্লো। আমি কিছু নষ্ট করতে চাই না।’’
আদরের নাম
এই প্রশ্নেও প্রবল অস্বস্তিতে পড়লেন গৌরব। একটু সময় নিয়ে বললেন, ‘‘আমি ওকে ওর ডাকনামে ডাকি। তিথি। আর ও আমাকে….। ওর ফোনে আমার নম্বরটা সেভ করা রয়েছে গৌরব অ্যাক্টর নামে (হাসি)।’’কিন্তু গৌরব যেটা বলতে গিয়েও আটকে গেলেন, সেখান থেকেই খেই ধরলেন দেবলীনা। ‘‘আমি ওকে খুব ফানি একটা নামে ডাকি। পটলা। কেন এই নামে ডাকি জানি না। পটল আমার খুব ফেভারিট এমনও নয়। তবে কী ভাবে মুখ দিয়ে এই নামটা বেরিয়েছিল জানি না….’’ ব্লাশ করতে করতে বললেন দেবলীনা।
আরও পড়ুন, ‘জীবনে কত প্রেমিকাকে যে না বলতে হয়েছে…’
উত্তমকুমারের নাতি টেলিভিশনে আটকে কেন, ছবির অফার নেই?
এমন কথা হামেশাই শুনতে হয় বলে জানালেন গৌরব। তবে টেলিভিশনে কাজ করার পিছনে তাঁর নিজস্ব যুক্তি রয়েছে। গৌরবের যুক্তি, ‘‘টেলিভিশনে লিড ক্যারেক্টার করি। ফিনান্সের দিক থেকে এটাই আমার ব্রেড অ্যান্ড বাটার। প্রথমত সেটার পর খুব একটা সময় পাওয়া যায় না। আর খুব পছন্দের কাজ না হলে হ্যাঁ বলি না। যেমন ক’দিন আগেই রিঙ্গোদার ‘সেনাপতি’তে কাজ করলাম। আমার খুব ভাল লেগেছে।’’
ফিল্ম নাকি টেলিভিশন, কোনটা পছন্দের?
গৌরবের প্রথম পছন্দ ফিল্ম। কিন্তু তিনি মনে করেন, ‘‘এই মুহূর্তে ফিল্মের থেকে টেলিভিশনের পপুলারিটি অনেক বেশি। টেলিভিশন যা দিয়েছে, আমি জানি না ফিল্ম কোনওদিন আমকে অতটা দেবে কি না। আর তা ছাড়া জাস্ট কোনও একটা কাজ করার জন্য করি না। লাইমলাইটে থাকার জন্য চার-পাঁচটা কাজ একসঙ্গে করতে হবে, এটা আমার মনে হয় না।’’
আরও পড়ুন, সিভিতে তিনটে ছবি, ইন্ডাস্ট্রিতে কতটা জায়গা তৈরি করলেন যশ?
উত্তমকুমার নামের ব্যাগেজ
তিনি উত্তমকুমারের নাতি। চলচ্চিত্র জগতে এই নামটার ব্যাগেজ থাকবে না, তা-ও আবার হয় নাকি? গৌরব ব্যতিক্রম নন। তবে ‘‘দাদুর ব্যাগেজটা ছিল প্রথম দিকে। আর এখন দাদুর নাম তো নয়ই, আমার নিজের নামেও আমাকে চেনেন না অনেকে। কারণ টেলিভিশনে রোজ মানুষ দেখেন আমাকে। যে ক্যারেক্টারে দেখেন, সেই ক্যারেক্টারের নামেই চেনেন। সেটাই বেশি ইম্পর্ট্যান্ট হয়ে গিয়েছে এখন। যখন ‘দুর্গা’ করেছি, তখন‘রূপম’
মেকআপ রুমে গৌরব।— নিজস্ব চিত্র।
উত্তমকুমার নামের প্রেশার
মহানায়কের সঙ্গে যদি কারও পারিবারিক সূত্রে দূর সম্পর্কের আত্মীয়তার সন্ধান পাওয়া যায়, আর সেই ব্যক্তি অভিনয়কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন তা হলেই আলাদা প্রেশার থাকবে। আর গৌরব তো উত্তমকুমারের নাতি। কিন্তু গৌরবের দাবি, ‘‘ইনিশিয়ালি এক্সট্রা প্রেশার ফিল করতাম। কিন্তু এখন আর সে ভাবে মনে হয় না। শুধু যদি কখনও রেগে যাই, চিত্কার করে ফেলি, তখন মনে হয় এটা হয়তো আমার করাটা ঠিক নয়। এ ভাবে কথা বলা উচিত নয়।’’
আরও পড়ুন, ‘বিশ্বাস করুন, আমি বেকার, আমার কাছে কোনও কাজ নেই’
এ সব কিছু নিয়েই নিজের মতো করে কেরিয়ার গ্রাফ এগিয়ে নিয়ে চলেছেন গৌরব চট্টোপাধ্যায়। তবে উত্তমকুমারের নাতি বলে কঠিন বাস্তব তাঁকে রেয়াত করেনি। ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাক বাইটিংয়ের শিকার হতে হয়েছিল তাঁকেও। গৌরব শেয়ার করলেন, ‘‘ব্যাক বাইটিং হয়েছে। তার জন্য কাজ হাতছাড়া হলেও হতে পারে। কিন্তু কারও নাম বলতে পারব না। ওটা আমার স্বভাব নয়। ইন্ডাস্ট্রিতে আমি অ্যালুফ থাকি। এক্সট্রা হাসি না। এখনও আমার বন্ধু বলতে স্কুল ফ্রেন্ডস।’’
আরও এক জন স্পেশাল বন্ধু রয়েছেন। তিনি দেবলীনা কুমার। তাঁর কথা এক্সক্লুসিভলি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন।
ডিসক্লেমার: উইথ হার পারমিশন।
তবে দেবলীনাও শেয়ার করেছেন গৌরবের কথা। নতুন এই জুটিকে অনেক শুভেচ্ছা।