তিনি সলমন খান। তিনি ‘ভাইজান’। পর্দায় প্রতিপক্ষকে এক তুড়িতে উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন যিনি। কিন্তু বাস্তবে এই ‘দবং’ অভিনেতার সুরক্ষার দায়িত্ব যাঁর কাঁধে ন্যস্ত, তাঁকে এখনও পর্যন্ত অনেকেই শুধুমাত্র ‘শেরা’ নামে চেনেন। কিন্তু সলমনের এই ছায়াসঙ্গীর জীবন তাঁর ‘মালিক’-এর থেকে কম বর্ণময় নয়।
শেরার প্রকৃত নাম গুরমিত সিংহ জলি। ১৯৬৯ সালে ১৯ মে মুম্বইয়ের এক শিখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। একাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীন স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলেন শেরা। বাবার সঙ্গে গ্যারাজে কাজ শুরু করেন তিনি। ছোট থেকেই শরীরচর্চার দিকে মন ছিল গুরমিতের। ১৯৮৭ সালে 'মিস্টার মুম্বই জুনিয়র' নামে এক বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতায় জয়ী হন তিনি।
প্রতিবেশী আন্ড্রে টিমিনসের উপদেশে তাঁর সংস্থায় নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ শুরু করেন গুরমিত। সেখানে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে ১৯৯৫ সালে নিজের সংস্থা খোলেন তিনি। নাম রাখেন ‘টাইগার সিকিউরিটি’। সেই বছরই সলমন খানের ভাই সোহেল খানের কাছ থেকে ডাক পান গুরমিত। চণ্ডীগড়ের একটি অনুষ্ঠানে সলমনের সঙ্গে থাকার জন্য নিয়োগ করা হয় তাঁকে।
সেখানে অনুরাগীদের তুমুল ভিড় থেকে সলমনকে রক্ষা করেন গুরমিত। এর পরেই সোহেল পাকাপাকি ভাবে তাঁকে সলমনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেন। গুরমিত এত বড় তারকার সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ পেয়ে সাত-পাঁচ না ভেবেই রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। তখন থেকেই সলমনের সঙ্গে গুরমিতের পথ চলা শুরু। ‘ভাইজান’-এর সান্নিধ্যে এসে গুরমিত হয়ে ওঠেন ‘শেরা’।
সলমনের জীবনের বহু ওঠাপড়ার সাক্ষী শেরা। তাঁর সঙ্গে দেশ-বিদেশে শ্যুট থেকে আদালত পর্যন্ত ঢাল হয়ে সামনে থেকেছেন তিনি। এমনকি সলমনের গ্রেফতারের সময়ও পুলিশের তোয়াক্কা না করে তাঁর সঙ্গে ছিলেন শেরা। শুরু থেকেই সলমনকে ‘মালিক’ বলে ডাকেন তিনি। টানা ২৬ বছর একসঙ্গে থেকে এখন শেরাও খান পরিবারের সদস্য।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, সলমন তো বটেই, তাঁর ভাই-বোন অর্থাৎ সোহেল, আলভিরা, অর্পিতার সঙ্গেও শেরার আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাঁর সঙ্গে সলমন বা বাকিরা কখনও বৈষম্যমূলক ব্যবহার করেননি। শেরার কথায়, “ওঁদের সঙ্গে আমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই গিয়েছি, সব হোটেলে ওঁদের ঘরের পাশে ঘর পেয়েছি। ওঁরা আমার নিজের ভাই-বোনের মতোই।”
শোনা যায়, শেরার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১১ সালে ‘বডিগার্ড’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য রাজি হন সলমন। সেই ছবির একটি গানে দেখা যায় শেরাকেও। সেখানে ক্যাটরিনা কইফের দেহরক্ষীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। শুধু অভিনয় নয়, সলমনের গুরুগম্ভীর দেহরক্ষীকে নাচতে পর্যন্ত দেখা গিয়েছিল সেই ছবিতে।
শেরা মনে করেন, ‘বডিগার্ড’ ছবিতে সলমন তাঁর জন্যই অভিনয় করেছিলেন। এমনকি শেরার সংস্থার তকমা বসানো ব্লেজার পরেছিলেন তাঁর ‘মালিক’। কিন্তু সলমনের বাকি দেহরক্ষীদের থেকে শেরা আলাদা কেন? তিনি বলেছিলেন, দীর্ঘ দিন একসঙ্গে থাকার ফলে সলমনের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া খুবই ভাল। সলমন জানেন, শেরা কখনও তাঁর কথা অমান্য করবেন না।
সলমনের পরিবারের সঙ্গে যেমন শেরার আত্মিক সম্পর্ক, তেমন শেরার ছেলে টাইগারকেও বলিউডে আনার পরিকল্পনা করছেন সলমন। ২০১৯ সালে সলমন জানিয়েছিলেন, টাইগারের জন্য চিত্রনাট্য বাছাই করছেন তিনি। কারণ শেরা মনে করেন, সলমনের থেকে ভাল এই কাজ আর কেউ করতে পারবেন না।
সলমনকে আগলে রাখার জন্য প্রতি মাসে ১৫ লক্ষ টাকা বেতন পান শেরা। তাঁর বার্ষিক আয় দু’কোটি টাকা। শেরার সংস্থা ক্যাটরিনা কইফ, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ এবং নোরা ফতেহির মতো তারকাদেরও নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। এ ছাড়াও জাস্টিন বিবার, কিনু রিভসরা যখন ভারতে এসেছিলেন, তখন তাঁদের নিরাপত্তা দিয়েছিলেন শেরা। ফলে হলিউডেও শেরার পরিচিতি কম নয়।