সানি-অমিশা। ছবি: সংগৃহীত।
সকাল থেকে মু্ম্বইয়ের আকাশের মুখভার। বেলা গড়াতেই তুমুল বৃষ্টি। শহর জুড়ে জল থইথই, সিগন্যালে দাঁড়িয়ে গাড়ি— বর্ষাকালে বাণিজ্যনগরীর চেনা ছবি। তবে, এ বার ভারী বৃষ্টির জন্য শহর জুড়ে জারি কমলা সর্তকতা। এই সব দুর্যোগ পেরিয়ে কমলা রঙের পাকিস্তানি সালোয়ার পরে শহরে এক প্রেক্ষাগৃহে হাজির শাকিনা! সঙ্গে রয়েছে তারা সিংহও।
শাকিনা আর তারা সিংহকে কিন্তু এখনও দিব্যি মনে রেখেছেন ভারতীয় দর্শক। ২০০১ সাল হিট ছবি ‘গদর’। মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন অমিশা পটেল ও সানি দেওল। এ বার সেই হিট ছবিরই সিক্যুয়েল তৈরি হচ্ছে। ভরা বর্ষায় মুম্বইয়ে প্রকাশ্যে এল সেই সিক্যুয়েল ‘গদর ২’ ছবির বহু প্রতীক্ষিত ট্রেলার। এর আগে ছবির কিছু ঝলক দেখা গেলেও বুধবার সন্ধ্যায় মুক্তি পেল ছবির ট্রেলার। তা-ও আবার কার্গিল দিবসের দিনই ভারত-পাকিস্তানের পুরনো দ্বৈরথ উস্কে সপরিবারে প্রকাশ্যে এল তারা সিংহ।
‘গদর ২’ ছবির কলাকুশলী। ছবি: সংগৃহীত।
নির্ধারিত সময়ের প্রায় দু’ঘণ্টা পিছিয়ে শুরু হল প্রচার ঝলক প্রকাশের অনুষ্ঠান। মুম্বইয়ের এক প্রেক্ষাগৃহেই থিকথিক করছে লোক। অপেক্ষা তারা-শাকিনার। যদিও প্রথমে শোনা যায়, শাকিনাকে ছাড়াই আসছে তারা। তবে অমিশা পটেল, মানে শাকিনা দর্শকদের হতাশ করেননি। একেবারে জুটিতেই দেখা মিলল সানি-অমিশার। প্রেক্ষাগৃহে তাঁদের দেখা যেতেই ঘন ঘন স্লোগান ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ’। ছবির ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠান, না কি দেশাত্মকবোধ কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বোঝাই দায়। অবশ্য সানি মঞ্চে উঠতেই পঞ্জাবি দর্শকদের একাংশের মুখে শুধুই ‘সানি পাজি তুসি গ্রেট হো’ বুলি। অভিবাদন জানালেন অভিনেতাও। প্রায় ২২ বছর আগে নির্মিত ছবি ‘গদর’। এর মাঝে পেরিয়ে গিয়েছে দু’টি প্রজন্ম। কিন্তু ছবি নিয়ে উৎসাহ কমেনি। আগের গল্পে পাকিস্তানের মাটিতে হইচই ফেলে দিয়েছিল তারা, শুধু মাত্র স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে। এই গল্পে নতুন কী? জানা গেল, গল্পে টুইস্ট রয়েছে। সময় পেরিয়েছে, বড় হয়েছে তারা-শাকিনার ছেলে জিৎ।
সানি-উৎকর্ষ-অমিশা। ছবি: সংগৃহীত।
এ বারের গল্প জুড়ে রয়েছে ছেলেকে ভারতে ফিরিয়ে আনা। ‘গদর’-এ যে শিশুশিল্পীকে দেখা গিয়েছিল জিতের চরিত্রে, এ বার ছবির দ্বিতীয় পর্বেও তারা-শাকিনার ছেলের ভূমিকায় সেই উৎকর্ষ শর্মা। যদিও তাঁর অন্য একটি পরিচয়ও রয়েছে। তিনি এই ছবির পরিচালক অনিল শর্মার পুত্র। যতই গল্পের গতি কুড়ি বছর এগিয়ে যাকে, তাতে কী! এই ছবিতেও সানিকে ‘গদর’-এর মতোই ভরপুর অ্যাকশন করতে দেখা যাবে তা ট্রেলারেই স্পষ্ট। সঙ্গে থাকবে একই রকম সংলাপ। তবে পর্দায় তিনি যতই মারধর করুন, বাস্তব জীবনে যে সানি খুবই শান্ত, ধীর-স্থির তা সহজেই বোঝা যায়। ট্রেলার মুক্তির অনুষ্ঠানেও তাই একেবারে মেপে কথা বললেন অভিনেতা। তবে অনেকেরই কৌতুহূল ছিল ‘গদর’-এর সাফল্যের পর এত বছর পর কেন ‘গদর ২’ করতে রাজি হলেন অভিনেতা! তার জবাব দিলেন সানি। ছবির দ্বিতীয় অংশের চিত্রনাট্য শুনেই চোখ ভিজে গিয়েছিল তাঁর। ব্যাস, পাঁচ মিনিটের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেন, এই ছবি করছেন তিনি। এই ছবিকে ঘিরে তাঁর যে আবেগ জড়িয়ে রয়েছে, সে কথা বলতে গিয়ে চোখের কোণ চিকচিক করে উঠল সানির।
অমিশা জানালেন, ছবিতে বয়ঃজ্যেষ্ঠ শকিনা হয়ে উঠতে তাঁকে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। তবে এই ছবির যাত্রা যে গোটাটাই সুখকর ছিল, তা নয়। বিতর্ক পিছু নেয়। ছবির শুটিং শেষ করার পর পরিচালকের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তোলেন অভিনেত্রী। পারিশ্রমিকে কারচুপি, শুটিংয়ে অব্যবস্থা-সহ নানা অভিযোগ ছিল অমিশার। যদিও ট্রেলার মুক্তির অনুষ্ঠানে একেবারে অন্য কথা অভিনেত্রীর। জানান, পরিচালকের সঙ্গে তাঁর বাবা-মেয়ের মতো সম্পর্ক। মাঝেমধ্যে সমাজমাধ্যমের পাতায় ব্লক করে দেন তাঁকে। ফের অভিমান কেটে ভাব হয়ে যায়। এমনই নাকি অম্লমধুর সম্পর্ক তাঁদের।
প্রথম পর্বের মতো এই ছবির দ্বিতীয় পর্বেও বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে গানের উপর। ‘ম্যায় নিকলা গাড্ডি লে কে’, ‘ঘর আজা পরদেশি’র মতো হিট গানগুলি যেমন রাখা হয়েছে, তেমনই নতুন কিছু গান বানিয়েছেন সুরকার মিথুন। যদিও গোটা সংবাদিক বৈঠকে বিতর্ক এড়িয়ে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তারকা। আগামী ১১ অগস্ট মুক্তি পেতে চলেছে ‘গদর ২’ ছবি। পরিচালকের মতে, দেশের স্বাধীনতা দিবসে এটাই হবে দেশকে দেওয়া তাঁর সেরা উপহার।