অভিনেতা সৌরভ সাহা
অভিনয় করতে ভালবাসি বলেই অভিনয় করি। সে কথা অনঃস্বীকার্য। তবে এখন শুধু ভালবাসার পর্যায়ে আটকে নেই। অভিনয় আমার পেশা। সেখান থেকেই খাই ও খাওয়াই। আমার দিন যাপন নির্ভর করে ধারাবাহিকের উপরে। এ কথা তো শুধু আমার নয়, আরও অগুন্তি ধারাবাহিক শিল্পীর গল্প এটাই। তা হলে যদি সেই শিল্পকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিকল্প রাস্তা পাওয়া যায় সেই পথে হাঁটব না কেন? ফেডারেশন বা ফোরাম কারও বিপক্ষে দাঁড়িয়ে নেই আমি। সবাই আমাদের মাথায় ছাতা ধরেছেন। কিন্তু কঠিন সময়ে বিরোধে না নেমে এক জোট হয়ে সমাধান খুঁজে বার করা দরকার। আমি এই শিল্পের পক্ষে। চাই, দর্শকের যেন অভ্যাস না চলে যায়। তা হলে ফেডারেশন এখন যাঁদের কথা ভেবে পথ আটকাচ্ছেন, কয়েক মাস পরে তাঁদের মুখে ভাত জোটাতে পারবে না। কারণ শিল্পের গুরুত্বই কমে যাবে।
সমস্ত কলাকুশলীদের কথা ভাবতে ভাবতে কোথাও গিয়ে প্রতিহিংসা পরায়ণের মতো কাজ হয়ে যাচ্ছে না তো? কোনও ১০ জন কাজ করতে না পারলে বাকি ১০ জনকেও কাজ করতে দেব না। এ রকম ভাবনা কি এই সময়ের উপযোগী? কেউ কেউ কাজ করতে পারলে তবেই তো শিল্পের চাকা ঘুরবে। টাকা আসবে। বাকিদের হাতেও টাকা পৌঁছনো যাবে। উপায় থাকলেও কাজ করব না, বসে থাকব, কারণ কয়েক জন কাজ করতে পারছেন না বলে, এটা তো হতে পারে না। এতে সকলের ক্ষতি হবে।
তবে হ্যাঁ, এক জন নাগরিক হিসেবে কখনওই চাই না, যে ভাবে ইচ্ছা দল বেঁধে কাজ করি। না, তাতে সংক্রামন বাড়বে, মানুষের প্রাণ বিপন্ন হবে। আমার বাড়িতে খুব ছোট ছেলে রয়েছে। আমি বাড়ি থেকে বেরোলে তারও বিপদ। আমি চেষ্টা করলেও গরম জল খাওয়াতে পারব না। ওষুধ না খাওয়ার জন্য জেদ ধরবে। গরম জলের ভাপ তো দূরেই থাক।
কাকা, কাকি, স্ত্রী এবং পুত্রের সঙ্গে সৌরভ
চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চলাই জীবনের ধর্ম। একটা রাস্তা বন্ধ হলে ‘বাইপাস’ ধরতে হবে। সেই ‘বাইপাস’ ধরেই হয়তো কিছু দিনের জন্য চলতে হবে। যদি বলা হয়, এতে কাউকে কাউকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তা হলে সেই যুক্তি ধরেই বলতে হয়, প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বঞ্চিত করেছেন। কিন্তু তা তো নয়। তাঁরা তো পরিস্থিতির শিকার হয়ে, সকলের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একইসঙ্গে তার মধ্যেও যাতে মানুষের রোজগার হয়, সে দিকেও নজর রাখছেন।
সাময়িক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে অন্য পথে কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমাদের শিল্প জরুরি পরিষেবার আওতায় পড়ে না। মানুষের খাওয়ার খরচ জুটছে না, সেখানে টাকা দিয়ে ‘হটস্টার’, ‘জিফাইভ’ বা কেবল টিভির কিছু চ্যানেল আনতে হচ্ছে। সেখানেই আমার বক্তব্য, এমনি এমনি তো এই টাকাটা খরচ করবেন না কিছু মানুষ। তাঁরা যদি নিজেদের টাকা খরচ করে আমাদের অভিনয় দেখতে চান, নতুন গল্প শুনতে চান, সেই চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব কিন্তু আমাদেরই নিতে হবে।
শ্রীরামকৃষ্ণের বেশে সৌরভ
সব শেষে একটা কথা বলে রাখা ভাল, শ্রীরামকৃষ্ণের মতো চরিত্রে অভিনয় করি আমি। আমার বাড়ির বসার ঘরের প্রেক্ষাপটে তাঁকে মানাবে না। তাই আমি নিজে যে ধারাবাহিকে অভিনয় করি, তার কত পরিমাণ বাড়ি থেকে শ্যুট করা সম্ভব, তা নিয়ে ধন্দে সবাই। তাই এত যে কথা লিখলাম, তা নিজের জন্য নয়। সেই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জন্য, যাঁরা আবার অভিনয় করার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন।
দর্শকদের উদ্দেশে আমার বক্তব্য, আপনারা সতর্কতা বজায় রেখে ঘরের বাইরে পা রাখুন। যখন সব ঠিক হয়ে যাবে, তখন আপনাদের সকলকে টেলিভিশনের সামনে চাই। এই অতিমারিতে আর কোনও দর্শককে হারাতে চাই না। তাই সাবধানে থাকুন, সচেতন থাকুন, রোজগারের জন্য বেরোতে হলে সমস্ত নিয়মবিধি মেনে চলুন।