আয়ুষ্মান
বর্ষবরণে বাহামা ব্লুজ়ে মজে তিনি। যে বছরটা সদ্য কাটিয়েছেন, সেটা এখনও পর্যন্ত কেরিয়ারের সফলতম। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে লড়ে যাওয়া ছেলেটি চড়াই ভেঙে দ্রুত উঠে এসেছে বছর তিনেকের মধ্যে। অজস্র পুরস্কার, বক্স অফিস হিটের সঙ্গে সঙ্গে পকেটস্থ হয়ে গিয়েছে জাতীয় পুরস্কারও। এ হেন আয়ুষ্মান খুরানার দিকে নতুন বছরে তাই তাকিয়ে থাকাই যায়, একরাশ প্রত্যাশা নিয়ে।
‘আর্টিকল ফিফটিন’, ‘ড্রিম গার্ল’, ‘বালা’। ২০১৯-এ হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে প্রায় ৫০০ কোটির কাছাকাছি ব্যবসা একাই দিয়েছেন আয়ুষ্মান। তার আগের বছর ‘অন্ধাধুন’ আর ‘বধাই হো’ও কোটির ক্লাবে। খান, কপূর ফ্যাক্টর নেই। নেই নামী ব্যানার বা ফ্র্যাঞ্চাইজ়িও। শুধুমাত্র অন্য রকম কিছু করতে হবে বলেই শুরু করেছিল বছর সতেরোর ছেলেটি। নতুন দশকের গোড়ায় দাঁড়িয়েও ‘দি আয়ুষ্মান খুরানা’র প্রধান বিবেচ্য, আলাদা কিছু করতে হবে। ‘‘মাঝেমাঝে খুব ইচ্ছে করে অ্যাকশন মুভি করতে। কিন্তু সেটা বাকি অ্যাকশন ছবির চেয়ে আলাদা হতেই হবে। এটা আমার মাথায় ঢুকে গিয়েছে এখন। কারণ ওটাই আমার ইউএসপি,’’ বলছেন অভিনেতা। আগে থেকেই জানতেন, হিট করবে ‘বালা’। ‘‘তবে ‘আর্টিকল ফিফটিন’-এর মতো সোশ্যাল থ্রিলার কেমন ব্যবসা করবে, তাই নিয়ে চিন্তা ছিল। আসলে প্রথম তিন বছর আমার কোনও ছবিই কমার্শিয়ালি হিট করেনি। গত তিন বছরে গ্রাফটা পাল্টেছে,’’ মূল্যায়ন নায়কের।
‘রোডিজ়’ দিয়ে যাত্রা শুরু। তার পরেই মাথা ঘুরে গিয়েছিল, নিজেই স্বীকার করেন অকপটে। তবে রেডিয়ো-ভিডিয়ো জকি, গায়ক আয়ুষ্মান অভিনেতা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে খুব বেশি সময় নেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আগে অনেক বেশি সমালোচনার সম্মুখীন হতে হত। এখন সমালোচকরা আমায় সম্মান করতে শুরু করেছেন (হাসি)। ১০০ কোটির ফিল্ম দিতে পারে, এমন হিরো বলে কেউ ভাবতেই পারত না আমায়। গত দু’বছরে সেটা হয়েছে।’’ এখন ছবি বাছাইয়ের দায়িত্বও তাই বেশি।
‘ড্রিম গার্ল’-এ পূজা, ‘বালা’-এ বালমুকুন্দ, ‘শুভ মঙ্গল সাবধান’-এ মুদিত কিংবা ‘অন্ধাধুন’-এ আকাশ— প্রতিটি চরিত্রই স্বতন্ত্র, বৈশিষ্ট্যযুক্ত। ম্যানারিজ়ম-বিহীন আয়ুষ্মান প্রতিটি ছবিতে হয়ে ওঠেন সেই চরিত্র। ‘শুভ মঙ্গল জ়াদা সাবধান’ও সমকামিতা নিয়ে। ‘অন্য রকম’ ছবি করতে গিয়ে এই সব বিচিত্র চরিত্র কী করে হয়ে ওঠেন অবলীলায়? ‘‘কোনও ক্যারেক্টারে ঢুকতে গেলে তার ভাষা, তার শহরের খুঁটিনাটি গুলে খেতে হয়। আমাদের দেশে প্রতি ১০ কিলোমিটারে মানুষের ডায়ালেক্ট পাল্টে যায়। আমি যেমন উত্তর প্রদেশের একাধিক চরিত্র করেছি। প্রতিটির ক্ষেত্রে বডি ল্যাঙ্গোয়েজ, কথা বলার ধরন আলাদা,’’ বললেন অভিনেতা। তবে হোমওয়র্কের কথাই যদি বলতে হয়, আয়ুষ্মানের ‘ঈশ্বর দর্শন’ হয়ে গিয়েছে! ‘গুলাবো সিতাবো’ ছবিতে কাজ করাটা তাঁর বাকেট লিস্টে ছিল বলেই জানালেন তিনি, ‘‘অবিশ্বাস্য রকমের প্রস্তুতি নিয়ে সেটে আসেন অমিতাভ বচ্চন। নিজের সংলাপ ছাড়া উল্টো দিকের মানুষটির সব সংলাপও ওঁর মুখস্থ!’’
অভিনয়ের পাশাপাশি স্টাইল আইকন অ্যাওয়ার্ডও সম্প্রতি ব্যাগে ভরলেন অভিনেতা। তাঁর চোখে ইন্ডাস্ট্রির স্টাইল তারকা কারা? প্রথমেই বললেন রণবীর সিংহ, শাহিদ কপূরদের নাম। আন্ডাররেটেড স্টাইল আইকন বললেন রণবীর কপূরকে। ‘‘স্টাইলের ক্ষেত্রে আমার কাছে অ্যাটিটিউডটাই আসল। ছোটবেলায় একেবারেই স্টাইলিশ ছিলাম না। বরং ভাই (অপারশক্তি খুরানা) অনেক বেশি ফ্যাশন-সচেতন। কলেজেও একে অন্যের পোশাক ধার করে পরতাম। এখন আর সেটা পারি না,’’ হেসে বললেন তিনি।
টানা শুটিং, ছবির প্রচার, ব্র্যান্ড এনডর্সমেন্ট— কাজের চাপে আপাতত ব্যাকসিটে আয়ুষ্মানের গানবাজনা। ‘পানি দা রং’-এর জাদুকণ্ঠ এখন আর তেমন শোনা যায় না। সে অভিযোগ মেনে নিলেন নির্দ্বিধায়, ‘‘সত্যিই সময় করে উঠতে পারি না। তবে নতুন বছরের প্রথম দু’মাসেই কিছু কনসার্ট প্ল্যান করা আছে।’’ কনসার্ট শুনতেও কম ভালবাসেন না আয়ুষ্মান। বছরশেষে বাহামায় জোনাস ব্রাদার্সের কনসার্টে পৌঁছে গিয়েছেন সপরিবার।
আবার আদ্যন্ত ফ্যামিলি ম্যান তিনি। স্ত্রী তাহিরার ক্যানসার যুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে যেমন প্রোটেক্টিভ, তেমনই ভাই অপারশক্তির প্রসঙ্গে উচ্ছ্বসিত। আয়ুষ্মান খুরানার ভাই বলেই কি তাঁর উপরে আলাদা চাপ? ‘‘আমার মনে হয় না। ও অসম্ভব ট্যালেন্টেড। আর তার জোরেই নিজের ফিল্মোগ্রাফিটা তৈরি করছে,’’ ভাইয়ের জন্য গর্ব ঝরে পড়ল দাদার গলায়। দুই ভাইয়ের কাছেই অবশ্য রোল মডেল তাঁদের বাবা। জ্যোতিষচর্চা করেন বলে বড় ছেলের নাম নিশান্ত থেকে আয়ুষ্মান-এ পাল্টে দিয়েছিলেন তিনি। বদলে গিয়েছে সে নামের বানানও। কিন্তু আয়ুষ্মান নিজে কি জ্যোতিষ, সংখ্যাতত্ত্বে বিশ্বাস করেন? ‘‘আমি শুধু বাবাকে বিশ্বাস করি (হাসি)।’’ আর প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস করেন না? ‘‘সকলের নিজস্ব জার্নি রয়েছে। রাস্তাগুলোও আলাদা। তাই প্রতিযোগিতার প্রশ্ন নেই,’’ জবাব এল হালকা সুরে। রাজকুমার রাও, ভিকি কৌশলরা আগে তাঁর ভাল বন্ধু। পাশাপাশি অনুপ্রেরণাও বটে।
দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি কতটা ভাবাচ্ছে তাঁকে? এ বার একটু সতর্ক শোনাল গলাটা, ‘‘আমার যা বলার, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছি। বাকিটা কাজের মধ্য দিয়ে জানান দিতে চাই। যেমন কমফর্ট জ়োন ছেড়ে বেরিয়ে ‘আর্টিকল ফিফটিন’-এর মতো ছবি করেছি।’’
তাঁর কাছে কাজই যে শেষ কথা, সেটা স্পষ্ট করে দিলেন, আরও একবার।