মুম্বইয়ের ঘিঞ্জি ‘চাওল’-এ সংসার। বাবা হিন্দি সিনেমার স্টান্টম্যান। পর্দায় তাঁর কেরামতিতেই হাততালি পান নায়ক। পরে সুযোগ পেয়েছেন অ্যাকশন-দৃশ্য পরিচালনা করারও। মা গৃহবধূ। দুই ভাইয়ের বেড়ে ওঠা অপরিসর অলিগলিতে। স্কুল, সিনেমা দেখা আর পাড়ার ক্রিকেট নিয়ে। প্রতীকী চিত্র।
বাবা ঠিকই করে ফেলেছিলেন, যত কষ্টই হোক, দুই সন্তানকে ভাল করে লেখাপড়া শেখাবেন। যাতে কোনও দিন ইন্ডাস্ট্রিতে পা না রাখতে হয়। কিন্তু বাস্তবের চিত্রনাট্য হল অন্য রকম। বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করলেন। একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিটে গিয়ে বুঝলেন এই কাজ তাঁর জন্য নয়।
আর চাকরির পথে যাননি তিনি। অভিনয়কেই ধ্যানজ্ঞান করে নিয়েছেন। এখন তিনি পরিচালকদের প্রথম পছন্দ। আর কয়েক দিন পরেই হাতে উঠবে যুগ্ম ভাবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার। দেশ ইঞ্জিনিয়ার ভিকি কৌশলকে পায়নি ঠিকই, কিন্তু ‘উরি দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর মেজর বিহান সিংহ শেরগিলকে পেয়েছে।
কৌশল পরিবার আদতে পঞ্জাবের হোসিয়ারপুরের। ভিকির জন্ম ১৯৮৮ সালের ১৬ মে। ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর বেড়ে ওঠা মুম্বইয়ে। রাজীব গাঁধী ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন্স নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন, ২০০৯ সালে। কিন্তু বুঝলেন এই জীবন তাঁর জন্য নয়। বাবার সঙ্গে ছবির সেটে যেতে শুরু করলেন। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শিখলেন অভিনয়।
ইন্ডাস্ট্রিতে হাতেখড়ি অনুরাগ কশ্যপের সহকারী পরিচালক হয়ে, ২০১২ সালে, ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’ ছবিতে। প্রথম অভিনয় মঞ্চে, মানব কউলের ‘লাল পেন্সিল’-এ। এরপর অনুরাগের ‘লভ সভ তে চিকেন খুরানা’ এবং ‘বম্বে ভেলেভেট’-এ ছোটখাটো ভূমিকায় অভিনয়।
২০১৫ সালে ‘মসান’ ছবিতে তাঁর প্রথম প্রধান ভূমিকায় অভিনয়। রাজকুমার রাও সরে যাওয়ায় সুযোগ পান ভিকি। ছবিতে ডোম পরিবারের ছেলে তিনি। অভিনয়ের জন্য দিনের পর দিন ছিলেন বারাণসীতে। সামাজিক ভাবে অনগ্রসর পরিবারদের জীবনধারা জানতে। দেশেবিদেশে বিশেষ সমাদৃত হয় ছবিটি। পুরস্কৃত হন ভিকি।
‘মসান’-এর আগে ভিকি অভিনয় করেছিলেন ‘জুবান’ ছবিতে। তবে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল পরে। ‘জুবান’-এ তাঁর ভূমিকা ছিল এক তোতলা ছেলের। পর্দায় তোতলামি নিখুঁত করতে স্পিচ থেরাপিস্টের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। ছবি শেষ হওয়ার পরে ভিকি আবিষ্কার করলেন, পর্দার বাইরেও তোতলামি তাঁর জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে।
এরপর ‘রমন রাঘব ২.০’, ‘লভ পার স্কোয়্যার ফুট’ ছবিতে ভিকির অনবদ্য অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে নেয়। পরবর্তী তুরুপের তাস ‘রাজি’। মেঘনা গুলজারের ছবিতে আলিয়া ভট্টের স্বামীর চরিত্রে অসাধারণ অভিনয়। তারপর ‘সঞ্জু’, ‘মনমর্জিয়াঁ’ এবং ‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এ ভিকির ভিনি-ভিসি-ভিডি।
অভিনয়ের পাশাপাশি ভিকির শখ বই পড়া আর বেড়াতে যাওয়া। নাচতেও খুব ভালবাসেন ভিকি। তিনি প্রশিক্ষিত নৃত্যশিল্পীও। ভোজনরসিক ভিকির প্রিয় খাবার ফুচকা, রাবড়ি দেওয়া জিলিপি, আলুর পরোটা এবং চিনা খাবার।
গুঞ্জন, নৃত্যশিল্পী হারলিন শেট্টির সঙ্গে ভিকির সম্পর্ক ছিল। দু’জনে এ বিষয়ে মুখ না খুললেও পরে শোনা যায় তাঁদের ব্রেক আপ হয়ে গিয়েছে।
কাজপাগল ভিকি জন্মদিনেও শুটিং করতে ভালবাসেন। ওটাই তাঁর কাছে উদযাপন, জানিয়েছেন তিনি। ছবি দেখাও তাঁর অন্যতম প্রিয় শখ। পছন্দের অভিনেতা হৃতিক রোশন এবং নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। প্রিয় পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ এবং কর্ণ জোহর।
খ্যাতির সঙ্গে হাত ধরে এসেছে যশও। ছবি পিছু ভিকির পারিশ্রমিক এখন আকাশছোঁয়া। সে দিনের চাওলের ছেলে আজ প্রতি ছবিতে অভিনয়ের জন্য পারিশ্রমিক ধার্য করেছেন কয়েক কোটি টাকা।