সাতের দশকে দাপটের সঙ্গে হলিউডে অভিনয় করেছিলেন এই ভারতীয় ললনা। তার আগে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মঞ্চ ছিল তাঁর বিচরণক্ষেত্র। নিজের সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা পরসিস খম্বাটা আজ বিস্মৃত।
তৎকালীন বম্বের পার্সি পরিবারে পরসিসের জন্ম ১৯৪৮-এর ২ অক্টোবর। তিনি যখন দু’বছরের, তাঁর বাবা চলে যান সংসার ছেড়ে।
তেরো বছরের কিশোরী পরসিসের ছবি তুলেছিলেন তৎকালীন বম্বের এক নামী আলোকচিত্রী। নেহাতই মজার ছলে তোলা ছবিগুলিই পরসিসের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ওই ছবিগুলি কোনও ভাবে চলে যায় এক বিজ্ঞাপন সংস্থার হাতে। তারপর পরসিস হয়ে ওঠেন একটি সাবানের বিজ্ঞাপনের প্রধান মডেল।
মডেলিং জগতে আনাগোনার সঙ্গেই পরসিসের সামনে খুলে যায় নতুন দরজা। মাত্র সতেরো বছর বয়সে তাঁর মাথায় ওঠে ‘মিস ইন্ডিয়া’-র খেতাব।
পরের গন্তব্য ‘মিস ইউনিভার্স’-এর মঞ্চ। শেষ মুহূর্তে কেনা পোশাক পরে অংশ নিয়েছিলেন পরসিস। কিন্তু বলা হয়, সে পোশাক ছিল সেই মঞ্চে বেমানান। ফলে অধরাই থেকে যায় ব্রহ্মাণ্ড-সুন্দরীর খেতাব।
পরসিসের আগে মাত্র দু’জন ভারত থেকে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ১৯৬৫ সালে তাঁর অংশ নেওয়ার আগে ১৯৫২ সালে ভারত থেকে প্রথম প্রতিযোগিনী ছিলেন ইন্দ্রাণী রহমান। ১৯৬৪ সালে অংশ নিয়েছিলেন মেহের কাস্তেলিনো মিস্ত্রি।
মিস ইউনিভার্সে বিজয়িনী হতে না পারলেও পরসিসের কাছে খুলে গেল বিজ্ঞাপন জগতের বড় সুযোগ। এয়ার ইন্ডিয়া, রেভলন এবং গার্ডেন ভারেলি-র মডেল ছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন এলেও সে ভাবে এল না হিন্দি ছবিতে কাজের সুযোগ। ‘বোম্বাই রাত কে বাহোঁ মে’ ছবিতে ক্যাবারে শিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তারপর পা রাখেন ইংরেজি ছবির দুনিয়ায়।
১৯৭৫ সালে পরসিস অভিনয় করেন দু’টি ইংরেজি ছবিতে। ব্রিটিশ ছবি ‘কনডাক্ট আনবিকামিং’ এবং মার্কিন ছবি ‘দ্য উইলবি কন্সপিরেসি’-তে।
তখন নায়িকাদের ফ্যাশন ছিল বড় খোঁপা বা লম্বা চুলের বিনুনি। সে রকম সময়ে দাঁড়িয়ে চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে ন্যাড়া হয়েছিলেন পরসিস খম্বাটা। ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সায়েন্স ফিকশন ‘স্টার ট্রেক: দ্য মোশন পিকচার’-এ পরসিসকে দেখা গিয়েছিল মুণ্ডিতমস্তক লেফটেন্যান্ট ইলিয়া-র ভূমিকায়।
স্টার ট্রেক-এর সুবাদে বাড়ে পরিচিতি। তার ফলস্বরূপ পরসিস পরপর অভিনয় করেন ‘নাইটহকস’, ‘মেগাফোর্স’ এবং ‘ওয়ারিয়র অব দ্য লস্ট ওয়র্ল্ড’ ছবিতে। কথা ছিল বন্ড সিরিজের ‘অক্টোপুসি’-তে অভিনয়েরও। কিন্তু শেষ অবধি তা আর হয়নি।
১৯৮০ সালে জার্মানিতে এক পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন পরসিস। তিন বছর পরে তাঁর করোনারি বাইপাস সার্জারি করা হয়। এর পর আর ছবিতে অভিনয় করেননি মাদার টেরিজার এই ভক্ত। বরং তাঁকে দেখা গিয়েছিল হলিউড ও বলিউডের টেলিভিশন সিরিজে।
‘প্রাইড অব ইন্ডিয়া’ নামে তিনি একটি কফি টেবল বুক প্রকাশ করেছিলেন। বইয়ের রয়্যালটির একটা বড় অংশ গিয়েছিল মিশনারিজ অব চ্যারিটি-তে।
১৯৮২ সালে বিয়ে। আলাপের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে করেছিলেন পরসিস খম্বাটা এবং হলিউডের অভিনেতা ক্লিফ টেলর। কিন্তু মাত্র দু’মাস পরে ভেঙে যায় তাঁদের দাম্পত্য। ১৯৮৬ সালে বিয়ে করেছিলেন নরেন পারেখকে।
১৯৯৮ সালের ১৮ অগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পরসিস। জীবনের শেষ বছরগুলি মুম্বইয়ে নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়েছিলেন তিনি। যোগাযোগ ছিল কেবল ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে।
মুম্বইয়ে কানাডিয়ান দূতাবাসের তৎকালীন উচ্চপদস্থ কর্মী ছিলেন সঞ্জীব চৌধুরি। তিনি পরসিসের কাছের বন্ধু ছিলেন। তাঁর সঙ্গেই মৃত্যুর আগে শেষ বার নৈশভোজ করেছিলেন প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া।
অকালমৃত পরসিসের স্মরণে একটি পুরস্কার উৎসর্গ করেছিলেন সঞ্জীব। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি-তে সবথেকে ভাল ফল করা ছাত্রছাত্রীকে প্রতি বছর দেওয়া হয় ‘পরসিস খম্বাটা মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’।