সিনেমার একটি দৃশ্য।
খুদা হাফিজ়
পরিচালনা: ফারুক কবীর
অভিনয়: বিদ্যুৎ, অন্নু, শিবালিকা, শিব, অহনা
৪.৫/১০
দুষ্টু লোকে ধরে নিয়ে গিয়েছে রাজকন্যাকে, আর তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য একাহাতে লড়াই করছে গল্পের রাজপুত্তুর— যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই চেনা গল্প নিয়েই ‘খুদা হাফিজ়’। পার্থক্য শুধু একটাই, এখানে ছবির গল্প ‘সত্য ঘটনা অবলম্বনে’, আর গল্পের নায়ক নেহাতই আম-আদমি। ২০০৮ সালে দেশে অর্থনৈতিক মন্দা, তার প্রেক্ষিতে এক সদ্য বিবাহিত দম্পতির কাজ হারানো, চাকরির খোঁজে আরব-দেশে পাড়ি দিয়ে বিপদে জড়িয়ে পড়া— এ নিয়ে একটি ঘটনার রিপোর্ট সংবাদপত্রে পড়ে ছবি তৈরির কথা ভেবেছিলেন পরিচালক ফারুক কবীর। তাঁর গল্পের হিরো হিসেবে বেছে নিয়েছেন বিদ্যুৎ জামওয়ালকে, যাঁকে অ্যাকশন অবতারেই দর্শক দেখতে অভ্যস্ত। অথচ এই ছবিতে সমীর (বিদ্যুতের চরিত্র) একজন ছাপোষা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তাই পর্দায় বিদ্যুৎ জামওয়াল-সুলভ নয়, স্বতঃস্ফূর্ত, প্রশিক্ষণহীন অ্যাকশন দেখা গিয়েছে তাঁর। তাতেও অবশ্য একাহাতে শত্রু নিকেশ করে রাজকন্যাকে উদ্ধার করতে পেরেছে এ গল্পের হিরো, ফরমুলা মেনে!
দু’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কাহিনির চেনা ট্রিটমেন্ট ও পরিণতি দেখা ধৈর্যের পরীক্ষা। তবে আউট-অ্যান্ড-আউট অ্যাকশনের পরিবর্তে স্ক্রিপ্টে মধ্যবিত্ত আবেগকে প্রাধান্য দেওয়ায় এই রূপকথায় একটু বাস্তবতার ছোঁয়া আর সামান্য ভাল লাগার আমেজও তৈরি হয়। প্রায় ওয়ান-ম্যান শো হলেও ভাল লাগে অন্নু কপূর অভিনীত অংশগুলি। তাঁর সঙ্গে বিদ্যুতের কেমিস্ট্রি এখানে নায়ক-নায়িকার রসায়নের চেয়েও বেশি জোরালো। কারণ নায়িকা শিবালিকা ওবেরয়ের স্ক্রিনটাইম অপ্রত্যাশিত ভাবে কম। শিব পণ্ডিত এবং অহনা কুমরা ইন্টেলিজেন্স অফিসারের চরিত্রে মানানসই হলেও তাঁদের আরবি টানে হিন্দি উচ্চারণ বড্ড কানে লাগে। কাল্পনিক গালফ কান্ট্রি নোমান (উজ়বেকিস্তানের সুদৃশ্য লোকেশনে শুট করা) ও সেখানকার নারী পাচার চক্রকে কেন্দ্র করে গল্প বোনা হয়েছে। দেখানো হয়েছে আইনের রক্ষক ও ভক্ষকদের প্রত্যাশিত আঁতাতও। তবে এই ধরনের অ্যাকশন-ফ্লিক সাধারণত হোমওয়র্ক ও কন্টিনিউইটি ছাড়াই দেখাতে অভ্যস্ত বলিউড। তাই ছবির কাছ থেকে প্রত্যাশার পারদ আপনা থেকেই নেমে যায়। ছবির এক-একটি পর্ব অনুযায়ী গুঁজে দেওয়া গানগুলির কয়েকটি শ্রুতিমধুর।
দশাসই ভিলেনকে রান্নাঘরের কাঁটাচামচ দিয়ে ঘায়েল করা, এক অফিসারের মৃত্যুর তিন দিন পরে তাঁর অবিকৃত দেহ সমাধিস্থ করা— এই ধরনের অজস্র খুঁত চাইলে খুঁজে বার করাই যায়। তবে সে নিক্তিতে মাপার ছবি ‘খুদা হাফিজ়’ নয়। কারণ এ ধরনের ছবির বৈশিষ্ট্য সেই খুঁতগুলিই। নিছক সময় কাটানোর উপলক্ষ এ ছবি, তার বেশি কিছু নয়।