অক্ষয় কুমার।
লক্ষ্মী
পরিচালনা: রাঘবেন্দ্র লরেন্স
অভিনয়:অক্ষয়কুমার, কিয়ারা আডবাণী, শরদ কেলকর, রাজেশ শর্মা, আয়েষা রাজ়া
৩.৫/১০
যে সমস্যাগুলি নিয়ে আরও বেশি করে কথা বলা দরকার, ভারতীয় চলচ্চিত্রে সেই বিষয়গুলির প্রতিফলন সাম্প্রতিক সময়ে বেশি করে দেখা গিয়েছে। তার বেশির ভাগই দায়িত্বপূর্ণ পরিবেশনা। ছবির বিষয় যখন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের যন্ত্রণা ও তাঁদের স্বীকৃতির লড়াই নিয়ে, আর সে ছবির মুখ যখন অক্ষয়কুমার, তখন খানিকটা হলেও প্রত্যাশা তৈরি হয়। ‘সিরিয়াস’ ছবি না হয়েও হরর কমেডিতে বাস্তব সমস্যা তুলে ধরায় দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে ‘স্ত্রী’র মতো ছবিতে, আরও একটু পিছনে তাকালে অক্ষয়েরই ‘ভুলভুলাইয়া’। রাঘব লরেন্সের ‘কাঞ্চনা’ও ঢুকে পড়তে পারে সেই সারিতে, কিন্তু তার হিন্দি রিমেক ‘লক্ষ্মী’ দেখার পরে সে সব ভুলতে বসতে হবে!
দক্ষিণী ছবির ভরপুর আমেজের মাঝে কমেডি ও ক্যারিকেচারের পারদ চড়াতে গিয়ে মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে অক্ষয়কুমারের প্রথম ওটিটি রিলিজ়। এ ছবির বড় পর্দার বক্স অফিস কী হতে পারত, তা ভেবে অবশ্য শাপে বর হওয়ার প্রবাদটি মনে পড়বে। লাল শাড়ি, সিঁদুরের টিপ আর কিন্নরসুলভ হাবভাবেই বাজিমাত করতে চাওয়া হয়েছে এক অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়ে। ট্রেলারেই এর আঁচ খানিক পাওয়া গিয়েছিল, যখন অক্ষয়ের মুখে শোনা গিয়েছিল— ‘‘যে দিন আমি ভূত দেখতে পাব, দিব্যি করে বলছি হাতে চুড়ি পরে নেব!’’ লিঙ্গবিদ্বেষের এত প্রবল প্রকাশ যে ছবিতে ট্যাগলাইনের মতো একাধিক বার ব্যবহৃত হয়, সেই চিত্রনাট্য যে ছবির ‘লক্ষ্মী’র সঙ্গে সুবিচার করতে পারবে না, তা সহজেই অনুমেয়।
প্রতিহিংসাপরায়ণ এক কিন্নর লক্ষ্মীর (শরদ কেলকর) আত্মা প্রবিষ্ট হয় আসিফের (অক্ষয়) শরীরে, যার জেরে তার স্ত্রী রশ্মি (কিয়ারা আডবাণী) এবং তার পরিবারের সকলে নাজেহাল। আসিফ এমনিতে ভূত-প্রেতে বিশ্বাসী নয়, সে বুজরুকদের ধরে ফেলে সচেতনতার প্রচার করে। আর তার উপরেই ‘ভর হয়’ আত্মার! লক্ষ্মীর বিচার পাওয়ার কাহিনি নিয়েই বাকি গল্প। কিন্তু প্রায় আড়াই ঘণ্টার এই ছবির চিত্রনাট্য এমনই, যা অভিনেতা ও কলাকুশলীদের অসহায় করে রাখে, সেই সঙ্গে দর্শককেও। নিছক অঙ্গভঙ্গি ও অগভীর শব্দচয়নে সারা ছবি জুড়ে ছোট করা হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকারের লড়াইকে। সেই সঙ্গে উগ্র কমেডি, ছবির প্রথমার্ধ জুড়ে ভৌতিক বাতাবরণ তৈরির দুর্বল প্রয়াস, অর্ধনারীশ্বরকে ‘ভিক্টিম’ প্রতিপন্ন করার আরোপিত চেষ্টা— ছবির প্রতিটি দৃশ্যে খারাপ লাগা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। অক্ষয়কুমারের নির্বাচন হিসেবে তো বটেই, খারাপ লাগে রাজেশ শর্মা, আয়েষা রাজ়া, মনু ঋষি চড্ডা, শরদ কেলকরের মতো অভিনেতাদের জন্যও।
‘লক্ষ্মী’র কাহিনিতে ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে ভিনধর্মের বিয়ের সমস্যাও। তবে সে সমস্যার গভীরতা নেই কাহিনিতে। মেলোড্রামার উপরে ভর করে ছবিকে চালনা করেছেন রাঘবেন্দ্র লরেন্স। সেখানে গুরুত্ব পেয়েছে ঝাঁ-চকচকে সেট আর বিদেশি লোকেশনে আইটেম ডান্স। হারিয়ে গিয়েছে ছবির প্রাণ। আর সেখানেই হার ‘লক্ষ্মী’র। হার বাস্তবের অসংখ্য লক্ষ্মীরও।