এক প্রতিভাবান অভিনেতার অপমৃত্যু। কেন তিনি আত্মহননের পথ বেছে নিলেন, তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা। তবে বলিউড এমন এক ইন্ডাস্ট্রি, যেখানে অন্যের মৃত্যুকে ঘুঁটি করেও নিজের কক্ষপথের বিস্তার বাড়ানো যায়। সাধারণ মানুষকে দেখানোর জন্য প্রতিবাদ। পর্দার আড়ালে চলে স্বার্থসিদ্ধির হিসেবনিকেশ। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের আত্মহত্যার প্রায় তিন সপ্তাহ হতে চলল। নিত্যদিন এক-এক জন সেলেব্রিটি তাঁর মৃত্যুর সিবিআই তদন্তের দাবি তুলছেন, পটনার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করছেন। কিন্তু সবটাই কি সুশান্তের স্বার্থে? সেলেব্রিটিদের আচরণ অন্তত তা বলছে না।
গত সোমবার সুশান্তের পটনার বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন শেখর সুমন। টুইটারে ছবি পোস্ট করেন সুশান্তের বাবার সঙ্গে। কিন্তু তার পরে তিনি প্রেস কনফারেন্স করতে যান রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা ও বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের সঙ্গে। বছরের শেষে বিহারে ভোট। শোনা যাচ্ছে, আরজেডিতে নাম লেখাতে পারেন শেখর। পুরো ঘটনায় সুশান্তের পরিবার রুষ্ট। সুমনের সাক্ষাৎকে ‘রাজনৈতিক গিমিক’ বলেও কটাক্ষ করেছে অভিনেতার পরিবার। তবে এটা প্রথম ঘটনা নয়। সুশান্তের মৃত্যুর পর থেকেই ‘বিহার সেন্টিমেন্ট’কে জাতীয় স্তরে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে অনেক রাজনৈতিক দল।
তেজস্বীর সঙ্গে দেখা করতে শেখর একা যাননি, সঙ্গে ছিলেন সুশান্তের ‘জিগরি দোস্ত’ সন্দীপ সিংহ। অভিনেতার মৃত্যুর পরে ক্যামেরার সামনে বারবার দেখা গিয়েছে সন্দীপের তৎপরতা। তবে অভিযোগের তির রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধেও। সুশান্তের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি ‘রিমেমবারিং’ (ওই অ্যাকাউন্টে অন্য কেউ লগ-ইন করতে পারবে না) করে দেওয়ার পরেও, অ্যাকাউন্টে ‘ফলোয়িং’-এর সংখ্যা কমেছে। কী ভাবে? সদুত্তর পাওয়া যায়নি। সুশান্তের অন্য এক বন্ধু পুলিশের কাছে দাবি রাখেন সন্দীপের ফোন চেক করার। এ ক’দিনের মধ্যে সন্দীপ কেন সুশান্তের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যান্ডল করবেন? সেই কারণ অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। গত রবিবার অবশ্য সুশান্তের পরিবারের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয় যে, এই অ্যাকাউন্ট এখন থেকে তারাই হ্যান্ডল করবে। কিন্তু তার আগে সুশান্তের প্রোফাইলের এই ঘটনার উল্লেখ করে টুইট করেছিলেন বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: রহস্য কাটেনি, সুশান্ত কাণ্ডে উঠে আসছে যে সব প্রশ্ন...
সুশান্তের আত্মহত্যার নেপথ্যে যে ‘নেপোটিজ়ম’ বিতর্ক বারবার উঠে আসছে, তার পুরোভাগে কঙ্গনা রানাউত। সুশান্তের মৃত্যুর পরে তিনি যদি চুপ থাকতেন, মনে করা হত কঙ্গনা বদলে গিয়েছেন। কিন্তু এই ঘটনাটিকে সামনে রেখে তিনি নতুন করে তাঁর অস্ত্রে শান দিয়ে নিলেন। সুশান্তের মৃত্যুর আগেও অভিনেত্রীর বিরুদ্ধ মত পোষণকারীকে যে ভাবে আক্রমণ করা হত ভার্চুয়াল মিডিয়ায়, সেই ট্রেন্ড একই ভাবে বহাল। সম্প্রতি কর্ণ জোহরের পক্ষে কথা বলে কোপে পড়েছেন স্বরা ভাস্কর। সুশান্তের মৃত্যুর পরে কঙ্গনার পোস্ট করা ভিডিয়োয় সত্যি থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইমেজের জন্য তা ‘গিমিক’-এর অতিরিক্ত কিছু মনে হয় কি?
সুশান্তের শেষ ছবি ‘দিল বেচারা’র অভিনেত্রী সঞ্জনা সাংঘির সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ঘিরে চলছে জল্পনার বহর। অভিনেতার মৃত্যুর পরে ইনস্টা-ভিডিয়োয় কাঁদতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। মুম্বই ছেড়ে হোমটাউন দিল্লি যাওয়ার সময়ে তিনি যে স্টোরি পোস্ট করেন, তাতে নেটিজেনের একাংশের মনে হয়, তিনি পাকাপাকি ভাবে মুম্বই ছাড়ছেন। কিন্তু অভিনেত্রী নিজেই আর একটি স্টোরিতে সেই জল্পনার নিরসন করেন। সবটাই কি প্রচারের স্বার্থে করা?
আরও পড়ুন: কঙ্গনার সঙ্গে সহমত নই, কর্ণের পাশে সেফ
এই প্রতিবাদের মিছিলে সবচেয়ে বেশি চমক জাগানো নাম, শেখর কপূর। পরিচালক বরাবর সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ। কিন্তু সুশান্তের মৃত্যুর পরে তিনি একাধিক ইঙ্গিতপূর্ণ টুইট করেছেন। বলতে দ্বিধা নেই, এখনও অবধি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ টুইটটি করেছিলেন শেখর। তাঁর পরিচালনায় ‘পানি’ ছবিতে কাজ করার কথা ছিল সুশান্তের। দু’বছর পরে প্রজেক্টটি স্থগিত করে দেয় যশ রাজ ফিল্মস। সুশান্তের এই পরিণতি না হলে কি এই প্রসঙ্গে শেখর আদৌ মুখ খুলতেন?
ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের খবর, সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত বিবৃতি দেওয়ার কারণে শেখরের পরে কঙ্গনারও বয়ান রেকর্ড করবে মুম্বই পুলিশ। বয়ান দিতে ডাক পড়তে পারে যশ রাজ ফিল্মসের কর্ণধার আদিত্য চোপড়া, সঞ্জয় লীলা ভন্সালীরও। আদিত্যের সঙ্গে সুশান্তের মনোমালিন্য নিয়েও বিস্তর লেখালিখি হচ্ছে।
আগামী দিনে সুশান্তের মৃত্যু তদন্তের মোড় যে দিকেই ঘুরুক, প্রতিবাদী মুখোশের আড়ালেও যে অন্য অভিসন্ধি রয়েছে, তা স্পষ্ট।