বিদেশ থেকে ম্যানেজমেন্টের ডিগ্রির পরেও পা রাখেননি কর্পোরেট দুনিয়ায়। বরং বাবার পথ অনুসরণ করে তাঁর পছন্দ ছিল বলিউডের রঙিন জগৎ। সেখানে সুদর্শন নায়ক শুরু করেছিলেন ঝোড়ো ইনিংস দিয়ে। কিন্তু আচমকাই হারিয়ে যান ফরদীন খান।
সত্তরের দশকের জনপ্রিয় নায়ক ফিরোজ খান এবং তাঁর স্ত্রী সুন্দরীর ছেলে ফরদীনের জন্ম ১৯৭৪-এর ৮ মার্চ। ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি বিজনেস ম্যানেজমেন্টে স্নাতক হন। তার পর ফিরে আসেন দেশে। অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নেন বাবার মতো নায়ক হবেন বলে।
১৯৯৮-এ মুক্তি পায় তাঁর প্রথম ছবি ‘প্রেম আগন’। প্রথম ছবি-ই সুপারডুপার হিট। সেরা নাবাগত হিসেবে পুরস্কৃতও হন ফরদীন।
এর পর তাঁর কাছে সুযোগের অভাব হয়নি। নানা স্বাদের ছবিতে তিনি নিজেকে মেলে ধরেন। ‘লভ কে লিয়ে কুছ ভি করেগা’, ‘ওম জয় জগদীশ’, ‘ভূত’, ‘নো এন্ট্রি’, ‘হে বেবি’, ‘প্যায়ার তু নে ক্যায়া কিয়া’, ‘দেব’, ‘কুছ তুম কহো কুছ হম কহেঁ’ এবং ‘এক খিলাড়ি এক হাসিনা’ তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য।
কিছু ছবিতে ফরদীন ম্যাজিক কাজ করলেও বেশি দিন নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি ফরদীন। ক্রমশ বক্স অফিসে ব্যর্থ হতে থাকে তাঁর ছবি। খাদের কিনারায় পৌঁছে যাওয়া কেরিয়ার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
নামের পাশে ‘ফ্লপ তারকা’ পরিচয় বসে যেতে সময় লাগেনি। যে ফরদীনকে বলা হত বলিউডের সুদর্শনতম তারকা, তাঁকেই কিনা খারিজের তালিকায় ফেলে দিলেন পরিচালক প্রযোজকরা।
তাঁর শেষ ছবি ‘দুলহা মিল গ্যয়া’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১০-এ। এরপর কোনও সিনেমায় তাঁকে দেখা যায়নি। এখন বলিউড থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি। দেখা যায় না কোনও অনুষ্ঠানেও।
ছবির নায়ক থাকাকালীন বিদেশে প্রচুর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন তিনি। ধীরে ধীরে কেরিয়ারে ব্যর্থতার সঙ্গে সঙ্গে তিনি হারিয়ে যান সেখান থেকেও।
মুমতাজের মেয়ে নাতাশা মাধবনীকে তিনি বিয়ে করেন ২০০৫ সালে। ফরদীন ও নাতাশা ছোটবেলার বন্ধু। তাঁদের মেয়ের নাম দিয়ানি এবং ছেলের নাম আজারিয়াস।
ব্যবসায়ী ময়ূর মাধবনীকে বিয়ে করে মুমতাজ দীর্ঘ কয়েক বছর লন্ডনপ্রবাসী। তাঁর মেয়ে নাতাশাও বড় হয়েছেন ওই শহরেই। তাঁকে বিয়ে করার পরে ফরদীনও এখন বছরের বেশির ভাগ সময়ে লন্ডনে থাকেন।
২০০১ সালে এক বার মাদক কেনার চেষ্টার অপরাধে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল তাঁকে ঘিরে। ১১ বছর ধরে এই মামলা চলেছিল। শোনা যায়, মাদকাসক্তির জন্য নিজের কেরিয়ারে তলিয়ে যান ফরদীন।
সুন্দর চেহারা, অভিনয়-প্রতিভা এবং নামের পাশে স্টারকিড পরিচয়। বলিউডে নায়ক হওয়ার সব শর্ত মজুত ছিল। কিন্তু তার পরেও ইন্ডাস্ট্রি হতাশ করে ফিরোজ-পুত্রকে।
ইন্ডাস্ট্রিতে গুঞ্জন, কেরিয়ারের শুরুতে পাওয়া সাফল্যে মাথা ঘুরে গিয়েছিল ফরদীনের। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছিল মাদকের প্রভাব। সব মিলিয়ে তিনি নাকি নিজেই নিজের কেরিয়ারের পতন ডেকে আনেন। পরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এখন বহু বছর অবশ্য তিনি শিরোনামের বাইরে। কিছু দিন আগে তিনি বডি শেমিংয়ের শিকার হন। পাল্টা উত্তর দিতে ছাড়েননি তিনি। বলেন, তিনি যে ভাবে আছেন, তাতেই নিজেকে নিয়ে খুশি।
যদিও ফরদীনের নিজের বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই তাঁর এই পথবদলে। বলিউডের নায়ক হওয়ার দৌড় থেকে পিছিয়ে পড়াকে জীবনের শেষ বলে মানতে চান না ফিরোজপুত্র ফরদীন।