আত্মপ্রকাশ বড় ব্যানারে। কেরিয়ারে পরপর সফল ছবি। ধরে নেওয়া হয়েছিল তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। কেরিয়ারে প্রাথমিক সাফল্য সত্ত্বেও তিনি ছবির জগতকে বিদায় জানান। তিনি ফারহা নাজ হাসমি।
ফারহার পরিবারে অভিনয়ের ধারা ছিলই। শাবানা আজমি তাঁর আত্মীয়া। পরবর্তীকালে ফারহার বোন তব্বুও বলিউডে সুঅভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত হন।
আটের দশকের শেষে ও নয়ের দশকের শুরুতে ফারহা ছিলেন বলিউডের প্রতিশ্রুতিমান নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮৫ সালে প্রথম ছবি, ‘ফাসলে’ ছিল যশরাজ ব্যানারে। ফারহার বিপরীতে নায়ক ছিলেন অভিনেতা মহেন্দ্র কপূরের ছেলে রোহন কপূর। ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়লেও পরিচিত পান ফারহা।
এরপর ‘মরতে দম তক’, ‘নসিব আপনা আপনা’, ‘লভ ৮৬’, ‘ইমানদার’, ‘ঘর ঘর কি কহানি’-র মতো সফল ছবির নায়িকা ছিলেন ফারহা। কেরিয়ারে রয়েছে বেশ কিছু ব্যর্থ ছবিও। কিন্তু তাতেও পায়ের নীচে শক্ত জমি পেতে সমস্যা হয়নি ফারহা-র।
নয়ের দশকে আমির খানের সঙ্গে দু’টি ছবিতে অভিনয় করেন ফারহা—‘জওয়ানি জিন্দাবাদ’ এবং ‘ইসি কা নাম জিন্দগি’। কিন্তু দু’টি ছবিই ব্যর্থ হয়। এরপর ‘খুদা গাওয়া’ ছবিতে সই করেন ফারহা। অভিনয়ও করেন কিছু দৃশ্যে। কিন্তু শেষ অবধি তাঁকে বাদ দিয়ে নেওয়া হয় শিল্পা শিরোদকরকে।
বিনোদ খন্নার বিপরীতে ‘কারনামা’ এবং রাজেশ খন্নার নায়িকা হিসেবে ‘বেগুনাহ’ ও ‘ওহ ফির আয়েগি’-কেই ধরে নেওয়া হয় ফারহার কেরিয়ারের সেরা কাজ বলে। হিন্দির পাশাপাশি অভিনয় করেছেন মালয়লম, বাংলা, পঞ্জাবি ও তেলুগু ছবিতে। তাঁর একমাত্র বাংলা ছবি ‘আমার তুমি’-র নায়ক ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে শুরু করেছিলেন কেরিয়ার। টিনসেল টাউনের ব্যস্ত জীবনে মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে পড়তেন ফারহা। সে সময় মানসিক ভরসা পেতেন বিন্দু দারা সিংহের কাছে। এক ছবির সেটেই দারা সিংহের ছেলে বিন্দুর সঙ্গে আলাপ ফারহার।
তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি ছিল দুই পরিবারেই। ফারহার মা চেয়েছিলেন আরও ভাল উপার্জনক্ষম জামাই। অন্যদিকে, বিন্দুর পরিবার চেয়েছিল ঘরোয়া পুত্রবধূ। তারপরেও দুই পরিবারের তীব্র আপত্তি উপেক্ষা করেই দু’জনে বিয়ে করেন ১৯৯৬ সালে। পরের বছর তাঁদের একমাত্র সন্তান ফতেহ-র জন্ম।
কিন্তু বিন্দু-ফারহার সংসার ভেঙে গেল ২০০৩ সালে। বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে দু’জনের কেউ মুখ খোলেননি। পুত্র ফতেহ-র কাস্টডি পান ফারহা। অবশ্য বিবাহ বিচ্ছেদের অনেক আগেই ছেলেকে নিয়ে আলাদা থাকছিলেন তিনি।
বিচ্ছেদের সময় থেকে ফারহা সিনেমায় কাজ কমিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁকে তখন বেশি দেখা যাচ্ছিল ছোট পর্দায়। টেলিভিশনের কাজ করতে গিয়েই আলাপ অভিনেতা সুমিত সেহগলের সঙ্গে। প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়ার বছরেই, ২০০৩ সালে সুমিতকে বিয়ে করেন ফারহা। স্বামী সুমিত, পুত্র ফতেহ-কে নিয়ে দিব্যি আছেন ফারহা।
দীর্ঘ দিন পরে ২০০০ সাল নাগাদ ফের শুরু করেছিলেন অভিনয়ও। পরপর তিন চার বছর কয়েকটি হিন্দি ছবিতে ফারহাকে দেখা যায়। তারপর আবার তিনি উধাও অভিনয়ের জগত থেকে। ফারহাকে শেষ দেখা গিয়েছিল ২০০৫ সালে, ‘হালচাল’ ছবিতে।
দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন ফারহার প্রাক্তন স্বামী বিন্দু-ও। তাঁর বর্তমান স্ত্রী ডিনা উমারোভা একজন রাশিয়ান মডেল। তাঁদের একমাত্র মেয়ের নাম অ্যামেলিয়া। কিছু ছবিতে অভিনয় করা বিন্দু মাঝে ক্রিকেট বেটিং কাণ্ডেও জড়িয়ে পড়েছিলেন। ( ছবি : সোশ্যাল মিডিয়া)