ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি বহিরাগত ছিলেন না। বাবা, ইউসুফ খান ছিলেন নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় অভিনেতা। ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’, ‘ধর্মাত্মা’, ‘ডন’, ‘কর্জ’-সহ বহু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ইউসুফ। কিন্তু তাঁর ছেলে ফরাজ খান অকালে হারিয়ে গেলেন বলিউড থেকে।
ফরাজের অভিনয়জীবন শুরু হওয়ার আগেই ১৯৮৫ সালে মারা যান ইউসুফ। তবে ফরাজের প্রথম দিকের যাত্রা খুব অমসৃণ ছিল না।
নব্বইয়ের দশকে কিছু নায়ক এসে তাঁদের ‘চকোলেট বয়’ ইমেজ দিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। ফরাজ তাঁদের মধ্যে এক জন।
১৯৯৬ সালে ‘ফরেব’-এ প্রথম ফরাজকে দেখা যায় নায়ক হিসেবে। বিক্রম ভট্টের পরিচালনায় ছবিতে নায়িকা ছিলেন সুমন রঙ্গনাথন।
বক্স অফিসে হিট হয়েছিল ফরেব। ছবির গান লোকের মুখে মুখে ঘুরত। আজও এই ছবির গান বেশ জনপ্রিয়।
তবে ফরাজ খানের কেরিয়ারের সূত্রপাত হওয়ার কথা ছিল অন্যভাবে। ১৯৮৯ সালে ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ ছবিতে সলমনের বদলে অভিনয় করার কথা ছিল ফরাজের।
কিন্তু শ্যুটিং শুরুর কয়েক দিন আগেই ফরাজ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে প্রযোজক-পরিচালক এই ছবি থেকে বাদ দেন। ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’-য় অভিনয় করে রাতারাতি সুপারস্টার হয়ে যান সলমন। হয়তো এই ছবি দিয়ে নায়কজীবন শুরু করলে ফরাজের জীবন অন্যরকম হত।
ফরাজের দ্বিতীয় ছবি ছিল ‘পৃথ্বী’। সুনীল শেট্টি, শিল্পা শেট্টির সঙ্গে তিনি এই ছবিতে স্ক্রিনশেয়ার করেছিলেন।
১৯৯৮ সালের ‘মেহন্দি’ ছবিতে ফরাজ অভিনয় করেন খলনায়কের ভূমিকায়। ছবির নায়িকা ছিলেন রানি মুখোপাধ্যায়। পরে তিনি ফরাজকে ছাপিয়ে অনেক দূর পাড়ি দেন কেরিয়ারপথে।
রাজ কপূরের ‘রাম তেরি গঙ্গা মৈলী’-র রিমেক ‘দুলহন বনু ম্যায়ঁ তেরি’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৯ সালে। ছবিতে ফরাজের নায়িকা ছিলেন দীপ্তি ভাটনগর। এই ছবিতেও ফরাজের অভিনয় প্রশংসিত হয়।
এর পর ‘দিল নে ফির ইয়াদ কিয়া’, ‘চাঁদ বুঝ গ্যয়া’-সহ কিছু ছবিতে অভিনয় করেন ফরাজ। কিন্তু কোনওটাই তাঁর কেরিয়ারের পালে বাতাস যোগ করতে পারেনি।
ছবিতে ব্যর্থতার পালা শুরু হওয়ার পরে ফরাজ চলে আসেন ছোট পর্দায়। ১৯৯৭ থেকে ২০০৮ অবধি বেশ কিছু সিরিয়ালে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু সেখানেও এ বার ধীরে ধীরে সুযোগ আসা বন্ধ হয়ে যায়।
গত এক দশকের বেশি সময় বড় বা ছোট পর্দা, কোথাও দেখা যায়নি ফরাজকে। সম্প্রতি তিনি ফের ফিরে এসেছিলেন শিরোনামে। জানা যায়, গুরুতর অসুস্থ তিনি। চিকিৎসা চলে বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে। চিকিৎসার বিপুল খরচ মেটানোর সামর্থ্য ছিল না পরিবারের।
তাঁর পরিজনরা জানান, চিকিৎসার খরচ প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। প্রথমে অনলাইনে টাকা যোগাড় করার চেষ্টা করা হয়। পারিবারিক সূত্রে জানানো হয়েছে, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বুকে সর্দির সংক্রমণে ভুগছেন ফরাজ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সংক্রমণ জটিল হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর বুক থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছে হারপিস সংক্রমণ।
ফরাজের পরিজনদের আবেদনে সাড়া দিয়েছেন সলমন খান। তাঁর সংস্থার তরফে মিটিয়ে দেওয়া হয় চিকিৎসার বড় অংশ। পাশাপাশি, ফরাজের পাশে দাঁড়িয়েছেন পূজা ভট্ট এবং সোনি রাজদান। সাহায্য করেন তাঁরাও।
সলমনের সাহায্যের কথা প্রথম প্রকাশ্যে আসে অভিনেত্রী কাশ্মীরা শাহের ইনস্টাগ্রাম পোস্টের পরে। তিনি সলমনের একটি ছবি পোস্ট করে ধন্যবাদ জানান অভিনেতাকে।
ফরাজের পরিবারসূত্রে জানা গিয়েছে, সংক্রমণের ফলে তাঁর রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল। হৃদস্পন্দনের গতিও দ্রুত হয়ে পড়েছিল। অভিনেতার শ্বাস প্রশ্বাস প্রক্রিয়াও ব্যাহত হচ্ছিল। কিছুটা স্থিতিশীলও হয়েছিলেন অভিনেতা। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর অবস্থার ফের অবনতি হয়। চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে বুধবার চলে গেলেন ফরাজ। হিন্দি ছবির দর্শকদের জন্য রেখে গেলেন একমুঠো নস্টালজিয়া।