(বাঁ দিকে ) শাহরুখের ছবি হতে রাস্তায় এক অনুরাগী। ‘ডাঙ্কি’-র পোস্টারে আরতি করছেন এক অনুরাগী ( ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
প্রত্যাশার পারদ শুরু থেকেই বেশি ছিল। সেটাই স্বাভাবিক নয় কি? ‘পাঠান’ এবং ‘জওয়ান’— চলতি বছরে দুটো সুপারহিট ছবি দিয়ে অনুরাগীদের মন জয় করে নিয়েছেন শাহরুখ খান। তাই তৃতীয় ছবি মুক্তির দিনেও অনুরাগীদের উচ্ছ্বাসের বাঁধ যে ভেঙে যাবে তা অনুমান করা কঠিন নয়। বাস্তবেও তার প্রতিফলন ঘটল।
বৃহস্পতিবার শহরে সকাল ৭টায় ‘ডাঙ্কি’-এর প্রথম শো হাউসফুল। দিন যত এগিয়েছে, পাল্লা দিয়ে একের পর এক প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করেছেন শাহরুখ অনুরাগীরা। জায়গায় জায়গায় মিছিল করে তাঁরা সিনেমা হলে পৌঁছলেন। স্পিকারে বাজল ‘ডাঙ্কি’-র গান। স্লোগান উঠল, ‘‘উই লাভ ইউ শাহরুখ।’’ ছবি মুক্তির প্রথম দিনেই শহরের প্রেক্ষাগৃহে ‘শাহরুখ জ্বর’-এর উত্তাপ। সকাল থেকেই সমাজমাধ্যমে ‘পাঠান’ এবং ‘জওয়ান’-এর সঙ্গে ‘ডাঙ্কি’-র তুলনা শুরু হয়েছে। ছবি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, তিনটি ছবির মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ‘ডাঙ্কি’। আবার কারও মতে, অ্যাকশন অবতারেই শাহরুখকে দর্শক বেশি দেখতে পছন্দ করেন। তবে অনুরাগীরা কোনও রকম তুলনায় যেতে নারাজ। প্রথম দিনেই প্রিয় তারকাকে বড় পর্দায় দেখাটাই তাঁদের কাছে একমাত্র উদ্দেশ্য।
‘ডাঙ্কি’ মুক্তির দিন শহরে অনুরাগীদের উচ্ছ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।
প্রথম দিন বেহালার অশোকা সিনেমা হলে ‘ডাঙ্কি’-র প্রথম শো ছিল সকাল ৯টায়। তার দু’ঘণ্টা আগে থেকেই সেখানে শাহরুখ খানের বেহালা ফ্যান ক্লাবের সদস্যরা জড় হতে শুরু করেন। সিনেমা হল চত্বর শাহরুখের বিভিন্ন ছবির কাট আউট এবং ব্যানারে ঢেকে ফেলা হয়। কেক কেটে, ছবির পোস্টারে মালা দিয়ে, বাজি ফাটিয়ে এবং নাচের তালে প্রথম দিনের প্রথম শো দেখতে ঢুকলেন তাঁরা। কেউ এসেছেন শাহরুখের মতো সেজে। কারও পোশাকে শোভা পাচ্ছে শাহরুখের ছবি বা তাঁর কোনও জনপ্রিয় উক্তি।
এ দিকে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে মেনকা সিনেমার সামনে শাহরুখ ভক্তরা জমায়েত হতে শুরু করেন। ‘ডাঙ্কি’-র প্রথম দিনের শো উদ্যাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল ‘কিং এসআরকেস আর্মি’ এবং ‘শাহরুখ খান ডিসাইপলস্ কলকাতা’-র মতো বেশ কয়েকটি ফ্যান ক্লাবের সদস্যরা। বড় স্পিকারে বাজছে গান। ঘোড়ায় টানা গাড়িতে চেপে মিছিল করে সিনেমা হলের সামনে উপস্থিত হলেন ক্লাবের সদস্যরা। তবে তাল কাটল কিছু ক্ষণ পর। হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল গান। জানা গেল, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগে পুলিশ উচ্চস্বরে গান বাজানোর অনুমতি দিতে নারাজ। তবে অনুরাগীদের উৎসাহ তাতে এক বিন্দুও কমেনি। খালি গলায় গান গাইতে এবং বাদশার নামে স্লোগান দিতে দেখা গেল তাঁদের। এখানেই শেষ নয়, শাহরুখের ছবি মুক্তি পেলেই প্রথম দিন প্রেক্ষাগৃহের সামনে গানের তালে নাচেন অনুরাগী শেহনাওয়াজ় খান। বৃহস্পতিবারেও তাঁর নাচ দেখতে প্রেক্ষাগৃহের সামনে রীতিমতো ভিড় জমে যায়।
‘ডাঙ্কি’ মুক্তির দিন শহরের একটি সিনেমা হলের বাইরে অনুরাগীদের ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।
প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের নবীনা সিনেমায় দিনের প্রথম শো ছিল সকাল ৯টায়। সেখানে পৌঁছেও একই চিত্র ধরা পড়ল। শাহরুখের ছবি এবং কাটআউট নিয়ে প্রেক্ষাগৃহের বাইরে মিছিল করেন অনুরাগীরা। তার জেরে সাময়িক ভাবে জানযটেরও সৃষ্টি হয়। প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধার নবীন চৌখানি বললেন, ‘‘প্রথম দিন সব শোয়ের টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। সকাল থেকেই হলের সামনে দর্শকদের ভিড়। হল মালিক হিসেবে সারা বছর এ রকম দৃশ্য দেখার জন্যই তো আমরা অপেক্ষায় থাকি।’’ হাজরা অঞ্চলের বসুশ্রী সিনেমা হলে ‘ডাঙ্কি’-র প্রথম শো দেখতে হাজির হয়েছিল ‘এসআরকিয়ান স্কোয়াড’-এর সদস্যরা। তাঁরাও কেক কেটে, শাহরুখের ছবিতে দুধ ঢেলে মিছিল করেন। অন্যদিকে উত্তর কলকাতার স্টার থিয়েটারেও সকাল থেকে হলের সামনে হাউসফুল বোর্ড ঝুলতে দেখা গিয়েছে।
তবে ‘ডাঙ্কি’ নিয়ে শাহরুখ অনুরাগীদের উদ্যাপনের মাত্রা কিন্তু ‘পাঠান’ এবং ‘জওয়ান’-এর তুলনায় কিছুটা হলেও কম মনে হল। অ্যাকশনের পর কমেডি ছবি নিয়ে ফিরলেন শাহরুখ। তাই কি ছবি নিয়ে উৎসাহ অনুরাগীদের মধ্যে একটু কম? বারুইপুর শো হাউসের কর্ণধার শান্তনু রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘শাহরুখের আগের দুটো ছবি ‘মাস’ দর্শকের কথা মাথায় রেখে তৈরি। তাই ট্রেলার দেখার পর থেকেই মানুষের উৎসাহ বেড়েছিল। ‘ডাঙ্কি’-র টার্গেট অডিয়েন্স একটু অন্য রকম। কিন্তু ছবি ভাল। তাই এ বার সময়ের সঙ্গে ভিড়ও বাড়বে।’’
এ রাজ্যে ‘ডাঙ্কি’-র পরিবেশনার দায়িত্বে রয়েছে এসভিএফ। সংস্থার তরফে জানা গেল, বৃহস্পতিবার অন্য কোনও ছবি না থাকায় প্রথম দিন রাজ্যে শাহরুখের ছবিটি মোট ৮২১টি শো পেয়েছে। শুক্রবার অন্যান্য ছবির জন্য ‘ডাঙ্কি’-র শো স্বাভাবিক ভাবেই কমবে। কিন্তু তা নিয়ে সিংহভাগ হল মালিকরাই বিচলিত নন। কারণ তাদের মতে প্রথম দিনেই ছবিটি রাজ্যে ভাল ব্যবসা করে নেবে। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা গেল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরে ‘ডাঙ্কি’-র টিকিট বিক্রিও বেড়েছে। বেশকিছু শো হাউসফুলও হয়েছে। ফলে হল মালিকদের ঠোঁটের কোণে হাসির ঝলক। এখন প্রথম দিনের ব্যবসার নিরিখে এই ছবি ‘পাঠান’ এবং ‘জওয়ান’ কে টেক্কা দিতে পারে কি না দেখা যাক।