অতিমারিতে শুটিং বিভ্রাট
Jeet

নিউ নর্মালে রাজ্যে বা বিদেশে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন বাংলার পরিচালকদের?

টলিউডের অন্দরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, কারও সমস্যার ধারা ক্রিয়েটিভ, কারও অর্থনৈতিক। হয়তো পরিচালক এমন একটি গল্প বলছেন, যেখানে করোনা পরিস্থিতির উল্লেখ নেই।

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:০৫
Share:

‘স্বস্তিক সংকেত’

অতিমারিতে অনেক ইন্ডাস্ট্রিই ক্ষতিগ্রস্ত, তার মধ্যে বিনোদন হয়তো সবচেয়ে বেশি। একে তো সিনেমা হলে ছবি রিলিজ় এবং দর্শকের আসা নিয়ে টানাপড়েন চলছে। তার উপরে সেটে একের পর এক কলাকুশলীর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। করোনা পরিবেশে কী ভাবে শুটিং চালাচ্ছেন পরিচালকেরা? কী ধরনের চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়ছেন তাঁরা?

Advertisement

টলিউডের অন্দরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, কারও সমস্যার ধারা ক্রিয়েটিভ, কারও অর্থনৈতিক। হয়তো পরিচালক এমন একটি গল্প বলছেন, যেখানে করোনা পরিস্থিতির উল্লেখ নেই। রাস্তায় শুটের সময়ে মাস্ক পরা ব্যক্তি ফ্রেমে চলে এলেন। কেউ জমজমাট জায়গায় শট নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন, কিন্তু গিয়ে দেখলেন এলাকা জনশূন্য। লোকেশন পেতেও সমস্যা হচ্ছে অনেকের। তবে মূলত বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে অর্থনৈতিক সমস্যাই।

গত এপ্রিলে ‘চিনি’ ছবিটি শুট করার কথা ছিল পরিচালক মৈনাক ভৌমিকের। কিন্তু তখনই লকডাউন ঘোষণা হয়। সেই স্থগিত হয়ে যাওয়া ছবি শুট হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে। আগের চেয়ে পরিস্থিতি কতটা বদলেছে? ‘‘বেশ খানিকটা। সুরক্ষা নিয়ে সতর্ক হতে গিয়ে ক্রিয়েটিভ দিকে যাতে খামতি না থাকে, সেগুলো ভাবতে হচ্ছিল। এ ছাড়া এই ছবির জন্য যে সব ইন-ফিল্ম প্রোমোশন ছিল, নতুন শিডিউলের সময়ে তারা আর আগ্রহী হল না।’’ ছবিতে পণ্য দেখিয়ে টাকা রোজগার পরিচিত ব্যাপার। করোনা যেহেতু সব ইন্ডাস্ট্রির উপরেই থাবা বসিয়েছে, তাই এই মুহূর্তে ইন-ফিল্ম প্রচারে বিনিয়োগ করতে রাজি হচ্ছে না অনেক ব্র্যান্ড। ‘চিনি’র জন্য যে সব রেস্তরাঁ বা হোটেলে শুট করার কথা ছিল, তারাও রাজি হয়নি নিরাপত্তার কারণে। ‘‘কয়েকটি রেস্তরাঁ জানায়, তারা লোকেশন দিতে পারবে না। একটি হাসপাতালে শুট করা স্থির হয়েছিল কিন্তু পরে তারা বেঁকে বসে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে অন্য হাসপাতাল রাজি হয়,’’ বললেন পরিচালক।

Advertisement

‘চিনি’

বাজেট সংক্রান্ত কারণেই আটকে গিয়েছে পরিচালক অরিন্দম শীলের ‘তীরন্দাজ শবর’-এর শুটিং। ক্যামেলিয়া প্রোডাকশনের সঙ্গে যৌথ ভাবে আর এক প্রযোজক ছবিতে বিনিয়োগ করতে চাইছিলেন। কিন্তু তিনি শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ানোয় ছবির কাজ শুরু করা যায়নি। খানিকটা গুছিয়ে নিয়ে কিছু দিন পরে শুটিং শুরু হবে বলে জানালেন অরিন্দম। নভেম্বরেই নতুন ছবির শুটিং করার কথা ছিল পাভেলের। কিন্তু বাজেটের কারণে সে ছবির কাজ আপাতত বন্ধ। কম বাজেটের একটি ছবির পরিকল্পনা করছেন তিনি। সব প্রযোজকই এখন বাজেট কাটের দিকে ঝুঁকছেন।

এই অতিমারির মধ্যে লন্ডন গিয়ে ‘স্বস্তিক সংকেত’-এর শুটিং সেরে এলেন সায়ন্তন ঘোষাল। শুটিংয়ের অভিজ্ঞতায় পরিচালক বলছিলেন, ‘‘লন্ডনে যখন দিনদুয়েকের শুটিং বাকি, তখন শুনছিলাম ফের লকডাউন হবে। তবে আমরা সবটা সেরেই ফিরে আসতে পেরেছি। লন্ডনের রাস্তায় বেশির ভাগ লোকজনকেই মাস্ক ছাড়া ঘুরতে দেখেছি। যে সব বাড়ি বা লোকেশনে শুট করছিলাম, সেখানকার লোকজন আমাদের ইউনিটের সুরক্ষাব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছেন।’’ তার কিছু দিন আগেই লন্ডনে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় শুটিং সেরে এসেছিলেন বিনা বাধায়।

অক্টোবরের শুরুতে জিৎ-মিমি লন্ডন গিয়েছিলেন ‘বাজ়ি’ ছবির শুটিংয়ের জন্য। সেই ছবির পরিচালক অংশুমান প্রত্যুষ বলছিলেন, ‘‘সেন্ট্রাল লন্ডনের কয়েকটি জায়গায় লোকেশন বাতিল হয়েছিল। সেগুলো অন্য জায়গায় শুট করতে হল। একসঙ্গে ছ’-সাতজনের বেশি থাকা যাচ্ছিল না। ফলে সব বিভাগের লোকজন নানা দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাজ করছিল, এতে কমিউনিকেশনের একটু সমস্যা হয়েছে।’’ লকডাউনের পরে যখন সদ্য আনলক পর্ব শুরু হয়েছিল, তখন এ শহরেই ‘এসওএস কলকাতা’ ছবির শুটিং করেছিলেন অংশুমান। সেই চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন ছিল। ‘‘ওই সময়ে দেশের মধ্যে আমরাই প্রথম শুট শুরু করেছিলাম। মানসিক চাপও কম ছিল না। বাড়িতে স্ত্রী, ছোট মেয়ে রয়েছে। খুব ভয়ে কাজটা করেছিলাম,’’ বললেন অংশুমান।

‘বাজ়ি’

অতিমারিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে ‘অভিযান’-এর শুটিংয়ের সময়েও অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হচ্ছিল পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে। তাঁর কথায়, ‘‘মাস্ক, পিপিই কিট, স্যানিটাইজ়ার— এ সবের সঙ্গে ছবির ক্রিয়েটিভ পার্টের ব্যালান্স করাতে গিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম হচ্ছিল। সব কিছু একসঙ্গে মাথায় রাখাটা ঝক্কির।’’

কথাতেই আছে দ্য শো মাস্ট গো অন... তাই প্রতিবন্ধকতা আসবেই, সেগুলো এড়িয়ে যাওয়াটাই চ্যালেঞ্জ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement