চলছে 'গোপনে মদ ছাড়ান' ছবির শ্যুটিং
রাতের গঙ্গাপাড়ে ফুরফুরে হাওয়া। আহিরীটোলা ঘাটে পাড়ে এসে ধাক্কা দিচ্ছে জল। রাস্তার কুকুরেরাও খানিক ঝিম ধরা মেজাজে, কিছু ক্ষণেই হয়তো ঘুমের দেশে পাড়ি। ঘুম নেই শুধু চাঁদু,জনি, বুম্বাদের। তিন বন্ধু মদের খোঁজে চষে বেড়াচ্ছে রাতের শহর। নতুন ছবির চরিত্রদের এ ভাবেই ফ্রেমবন্দি করতে দেখা গেল পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়কে। সাক্ষী আনন্দবাজার অনলাইন।
কুমোরটুলি পার্কের ঠিক পাশেই বেসক্যাম্প। গোটা শহরটার দিন ঠিক যখন শেষ হয়, তখন থেকে দিন শুরু টিম তথাগতর। এক দিকে, অনলাইন সম্পাদনা। অন্য দিকে গোছানো চলছে অভিনেতা- অভিনেত্রীদের পোশাক-আশাক। আর তৈরি হচ্ছে সসপ্যান ভর্তি চা। সেই চা-ই পরিচালকের রাতজাগা শ্যুটিংয়ের একমাত্র চাবিকাঠি। ধোঁয়া ওঠা ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে পরিচালক বললেন, “আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটা আসলে অন্তঃসারশূন্য চাকচিক্যে পরিপূর্ণ। ‘গোপনে মদ ছাড়ান’-এর মাধ্যমে আমি কার্পেটের তলার ওই ফাটা মাটিটাকে দেখাতে চাই। যেখানে বর্তমান বাংলা ছবি পুরোটাই কেমন প্লাস্টিক হয়ে গিয়েছে। বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান স্লোগান দিলেই চলবে না। কাজ করে দেখাতে হবে।”
রাত বাড়লেই এখন কুমোরটুলি পার্কের অলিগলিতে শুধুই ‘অ্যাকশন’, ‘কাট’-এর শব্দ। আর সূর্য ওঠার আগেই সব কিছু গুটিয়ে ফেলার তাড়া। উত্তর কলকাতার নিশিযাপনে এক অন্য রকম গন্ধ আছে। অভিনেতা ঋষভ বসুর এমনটাই মত। ঋষভ থেকে ‘চাঁদু’ হয়ে উঠতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি তাঁর। ঋষভের কথায়, “আমি খাস উত্তর কলকাতার ছেলে। সুতরাং খুব বেশি অসুবিধা হয়নি। যখন নাটক করতাম, উত্তর কলকাতার এমন কত কত রাতের সাক্ষী থেকেছি আমি।” তবে ‘জনি’-র ভূমিকায় সোহম মজুমদার যেহেতু দক্ষিণ কলকাতার ছেলে, ওঁর কাছে এই রাত জেগে, এক শটের ছবিতে অভিনয় অনেকটা স্বপ্নের মতো। বললেন, “এক রাতের বিভিন্ন চরিত্র ধাক্কা খাচ্ছে অপর জনের সঙ্গে। অভিনয়ের আগে টানা এক মাসের মহড়াটাই ছিল আমার কাছে খুব মজার।” ছবিতে ‘বুম্বা’ ওরফে অভিনেতা সৌম্য মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে ফিরে গিয়েছি নিজের কলেজ জীবনে। সেই দেওয়াল লিখনের দিনগুলোয়।”
না, সমাজের কোনও চাকচিক্য নয়, পাড়ার চাঁদু, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চাওয়া বর্ষাদের গল্পই বলবে তথাগতর ছবি। ‘গোপনে মদ ছাড়ান’-এর পরিচালকের কথায়, “আমি সেই পুরুষদের গল্পই বলছি, যাঁরা রাস্তায় মেয়ে দেখে শারীরিক গঠন নিয়ে আলোচনা করেন। মেয়েরা ছোট পোশাক পরলে ঘুরে তাকান। মেয়েদের স্তন, কোমর নিয়ে মন্তব্য করতে দু’বার ভাবেন না।” ছবির প্রেক্ষাপট, সংলাপ যদি সেন্সর বোর্ডে আটকায়? তথাগতর দাবি, “যদি আটকায়, তা হলে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ছবি মুক্তির কথা ভাবব, কিন্তু কোনও দৃশ্য বাদ দেওয়া যাবে না।”
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।