ছবির সেটে দেব-রুক্মিণী ছবি: নিরুপম দত্ত
উত্তর কলকাতার এক পুরনো রাজবাড়িতে লাইট-ক্যামেরার শব্দ! গলির ভিতরের বাড়িগুলি থেকে উৎসুক চোখের উঁকিঝুঁকি। রাজবাড়ির দালানে সারি সারি চেয়ারে বসে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। তাঁদের সাজ বলে দিচ্ছে, ফ্লোর জুড়ে উৎসবের আবহ।
দেব প্রযোজিত এবং রাহুল মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘কিশমিশ’ ছবির শুটিংয়ের ষষ্ঠ দিনে ক্যামেরাবন্দি হচ্ছিল সরস্বতী পুজোর দৃশ্য। রাজবাড়ি লাগোয়া চত্বরে বাঁধা হয়েছে প্যান্ডেল, তার ভিতরে প্রতিষ্ঠিত দেবীমূর্তি। পরিচালক রাহুল বললেন, ‘‘প্রেম মানেই সরস্বতী পুজো, বাঙালির ভ্যালেন্টাইনস ডে। ছবিতে পাড়ার পুজো দেখানো হচ্ছে। প্যান্ডেলের ভিতরে রোহিণী (রুক্মিণী মৈত্রের চরিত্র) এবং পুবালীর (অঞ্জনা বসুর চরিত্র) গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের শুট হচ্ছে।’’ প্রাক্-কোভিড সময়ে ছবির ভাবনা, শুটের পরিকল্পনা ছিল। অতিমারি-পরবর্তী সময়ে নির্ভেজাল প্রেমের আবহ তৈরি করা কি সম্ভব হয়েছে? ‘‘সেটাই আমাদের চেষ্টা। দেবের তিনটি চমকপ্রদ লুক রয়েছে। তবে দেব ছবির হিরো নয়, চরিত্র,’’ জবাব রাহুলের।
ইতিমধ্যে ফ্লোরে প্রবেশ করলেন দেব। তাঁকে ঘিরে নানা মানুষের ভিড়। ওই মুহূর্তে তাঁর শট ছিল না। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের দাবি রাখতে ছবি তুলতেই হবে। ‘‘আমি লুকেই আছি। চশমাটা পরে নিলেই, ব্যস!’’ সহাস্য জবাব প্রযোজকের। রাউন্ড ফ্রেমের চশমা চেয়ে নিয়ে পরে নিলেন দেব। এ বার তিনি চরিত্র টিনটিনের বেশে। রুক্মিণীর সঙ্গে প্রেমের দৃশ্য শুট করেছেন? ‘‘ফ্যামিলি ড্রামার চাহিদা মেনে যতটা প্রেম দেখানো যায়, ততটাই শুট করেছি। দার্জিলিঙে শুট অনেকটা বাকি,’’ বললেন দেব। ‘‘সরস্বতী পুজোর দৃশ্য। আগে হলে কোনও বড় মাঠে সেট তৈরি করা হত। আরও বেশি জুনিয়র শিল্পী থাকত। কিন্তু কোভিড-বিধি মেনে সেটা করা সম্ভব নয়, উচিতও নয়। শুটের সব দিক সামলানোটা বড় চ্যালেঞ্জ,’’ জবাব তাঁর। নিজের শট না থাকলেও, মনিটরের সামনে বসে বেশ কিছুক্ষণ রুক্মিণীর শট দেওয়া দেখলেন দেব।
দেব ছবি: নিরুপম দত্ত
দেব-রুক্মিণী জুটি পর্দায় আগেও এসেছে। তবে এ ছবিতে যেমন ভাবে তাঁদের দেখানো হচ্ছে, তেমন ভাবে আগে দেখা যায়নি তাঁদের। দাবি করেছেন স্বয়ং রুক্মিণী। হট পিঙ্ক শাড়ি আর স্লিভলেস ব্লু ব্লাউজ়ে তাঁকে দেখতে সুন্দর লাগছিল। তবে শট শেষ না হওয়া অবধি, তিনি চরিত্রের বাইরে বেরোতে রাজি নন। এ ক্ষেত্রে পরিচালকও কড়া। পরে বললেন, ‘‘এত কম দিনের শিডিউলে এখন কাজ হয় যে, দম ফেলার ফুরসত নেই। গত দু’বছর কোভিডের কারণে সরস্বতী পুজোয় বেরোনো হয়নি। ছবির সুবাদে যেন মায়ের দর্শন করলাম,’’ হাসি তাঁর মুখে। ছবিতে তাঁর একটি রেট্রো লুক রয়েছে। ‘‘রোহিণীর লুকে মানুষ আমাকে আগে দেখেছেন। কিন্তু রেট্রো লুকে যে ক’দিন শুট করেছি, মেকআপ ভ্যান থেকে ফ্লোরে আসার সময়ে রাস্তার মানুষ তাকিয়ে দেখছিলেন আমাকে। নিজেকে এ ভাবে দেখতে খুব ভাল লেগেছে আমারও,’’ বললেন অভিনেত্রী। তিনি আসতেই দেব-রুক্মিণীর ছবি তুলতে ফোটোগ্রাফারদের হুড়োহুড়ি। ঠাকুরদালানে ফুটে উঠল বাসন্তী প্রেমের রঙিন ফুল!
ছবিতে টিনটিনের মায়ের চরিত্রে দেখা যাবে অঞ্জনা বসুকে। রুক্মিণীর সঙ্গে তাঁরই সে দিন বেশি শট ছিল। দেবের সঙ্গে প্রথম বার কাজ করা প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘দেব নামটার ওজন আছে। কিন্তু কাজ করতে কোনও অসুবিধে হচ্ছে না।’’ রাজনৈতিক রঙের ঊর্ধ্বে এই ছবি? ‘‘দেবকে অভিবাদন জানিয়েছি, এই ছবিতে আমাকে কাস্ট করার জন্য। একদিন দেব আমার সামনে রাজনীতি সংক্রান্ত কিছু কথা বলতে ইতস্তত করছিল। স্পষ্ট বললাম, তুমি নির্দ্বিধায় বলতে পারো।’’
ফ্লোর থেকে চোখ ঘোরাতে নজর কাড়বে দালানে রাখা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ছবি। দেব বললেন, ‘‘এটা ব্যবহারের ভাবনা পুরোপুরি রাহুলের।’’ কী ভাবে? সেটুকু কিশমিশ না হয় তোলা থাক শেষ পাতের মিষ্টির জন্য।