‘টুম্পা’ সুমনা দাস। —সংগৃহীত চিত্র।
গর্ভস্থ সন্তান কিছুতেই নড়াচড়া করছে না। মা-বাবার মুখ শুকিয়ে আমসি। হঠাৎ ‘টুম্পা সোনা দুটো হাম্পি দে না’ বেজে উঠতেই নাকি মায়ের পেটে সজোরে আঘাত সন্তানের! আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানালেন ‘টুম্পা’ সুমনা দাস।
প্রশ্ন: আসল নাম মনে আছে? নাকি...
সুমনা: (প্রচণ্ড হাসি) প্রায় ভুলতে বসেছি। মা-বাবা ছাড়া সবার কাছেই আমি ‘টুম্পা’! চেনাশোনাদের কেউ ‘এই ভাল আছিস টুম্পা’ বললেই তাঁদের অনুরোধ করছি, আমায় আসল নামে ডাকবে? নইলে মা-বাবার দেওয়া নামটাই ভুলে যাব।
প্রশ্ন: রাতারাতি জনপ্রিয়! উপভোগ করছেন না?
সুমনা: অবশ্যই উপভোগ করছি। প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ভিউয়ার্স ছুঁয়েছে গান। নিজের আসল নাম ভুলিয়ে দিয়েছে ‘টুম্পা’। টলিউডের সমস্ত নায়িকা এই গানের সঙ্গে নাচছেন। অনির্বাণ ভট্টাচার্যের বিয়েতে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও নাচলেন ‘টুম্পা’ গানের সঙ্গে। এমন কথাও শুনেছি, কোনও এক গর্ভবতীর গর্ভস্থ সন্তান কিছুতেই নড়াচড়া করছে না। মা-বাবার মুখ শুকিয়ে আমসি। হঠাৎ ‘টুম্পা সোনা দুটো হাম্পি দে না’ বেজে উঠতেই নাকি মায়ের পেটে সজোরে আঘাত সন্তানের! এ কি মুখের কথা? আবার এক এক সময় এ-ও মনে হচ্ছে, আসল নামটাও মনে রাখুক সবাই। ওই নামেও চিনুক।
আরও পড়ুন: ঘণ্টাখানেক স্তব্ধ নেটফ্লিক্স, অসন্তুষ্ট দর্শক
প্রশ্ন: রাস্তায় চলাফেরা করতে পারছেন?
সুমনা: চোখে সাদা লেন্স ছিল। এখন মুখে মাস্ক। ফলে, চট করে কেউ চিনতে পারছেন না। মাস্ক সরিয়ে হাসলেই লোকের অনুরোধ, একটা সেলফি তুলবেন?
প্রকৃতির কাছে সুমনা। —সংগৃহীত চিত্র।
প্রশ্ন: ‘টুম্পা’র আগে সুমনা কী করছিলেন?
সুমনা: আমি কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন নই। ২০১৫ থেকে নিয়মিত এই ইন্ডাস্ট্রিতে। থিয়েটার করেছি। বড় পর্দায় অভিনয়ও করেছি। ‘চারদিকের গল্প’ করেছি। ‘শেষের গল্প’ করেছি। আমার বন্ধু জিৎ চক্রবর্তীর প্রথম ছবি এটা। ওর জন্যই হঠাৎ করে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মমতাশংকরের মতো কিংবদন্তি অভিনেতাদের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেলাম। যদিও সেই সময় আমি ব্যস্ত সান বাংলার মেগা ‘কেশব’ নিয়ে। তার আগে শেষ করেছি স্টার জলসার ‘রাখি বন্ধন’।কিন্তু এই সুযোগ ছাড়ে কেউ?
প্রশ্ন: কেমন দেখলেন দুই তারকাকে?
সুমনা: এক কথায় বোঝাতে পারব না। সৌমিত্রবাবু সবার স্বপ্ন। তাঁর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে সবার ছিল। আমার সেটা পূরণ হয়েছে। আমি ভাগ্যবান। আর মমদির কথা কী বলব। এত আন্তরিক, এত ভাল, ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়। ওঁর কাছে নাচ শেখারখুব ইচ্ছে ছিল। একদিন অবসরে সে কথা জানাতেই হেসে ফেললেন। কত গল্প করতাম সেটে আমরা। পরে সরস্বতী পুজোয় ওঁর বাড়িতেও আমরা গিয়েছি।
প্রশ্ন: আপনি পড়াশোনাতেও তো ভীষণ ভাল...
সুমনা: ভীষণ ভাল কিনা জানি না। আমি খড়্গপুরের মেয়ে। ওখানকার স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করেছি। মাস্টার্স করেছি রবীন্দ্রভারতী থেকে, গান নিয়ে। পাশাপাশি ভরতনাট্টমও শিখেছি। পরিবারের কেউ কোনও দিন এই পেশায় আসেননি। আমার অভিনয়ে আসা নেহাতই ঘটনাচক্রে।
যে ছবি আলোড়ন তুলেছে। —সংগৃহীত চিত্র।
প্রশ্ন: সুমনা আর টুম্পার মধ্যে তাহলে আকাশপাতাল পার্থক্য?
সুমনা: একদম। রিল আর রিয়েলে যতখানি ফারাক ঠিক ততটাই। পড়তে পড়তেই বন্ধুদের আগ্রহে টুকটাক অভিনয় করতে শুরু করি মঞ্চে। পড়া শেষ হওয়ার পরেই শিক্ষকতার চাকরিও পেয়ে যাই। তখন শুরু টানাপড়েন। চাকরি করব না অভিনয়? মায়ের ইচ্ছে, নির্দিষ্ট রোজগার ছেড়ে ভুলেও যেন অনিশ্চয়তায় ঝাঁপ না দিই। এদিকে একটু একটু করে অভিনয়ের প্রতিও টান বাড়ছে। সেই সময় বাবা ভীষণ সাপোর্ট করেছিলেন। বলতে পারেন, তাঁর সমর্থনেই আমি শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে পাকাপাকি অভিনয় দুনিয়ায় চলে আসি। মা তখন ভীষণ রেগে গিয়েছিলেন। এখন জনপ্রিয়তা দেখে বিস্ময়ে হাবুডুবু খাচ্ছেন!
প্রশ্ন:মঞ্চ, ছোট পর্দা, বড় পর্দার মাঝে আর কী করেছেন?
সুমনা: ‘কেশব’ করতে করতেই মা আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২-৩ মাস অভিনয় থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল। তার পর একটি ডিপ্লোমা কোর্সের ছবিতে অভিনয় করি। চিত্রনাট্য শুনেই এত ভাল লেগে গিয়েছিল যে ডিপ্লোমা কোর্সের কী ছবি, সেটুকুও জানতে চাইনি। একদম অন্য রকমের চরিত্র পেয়েছিলাম। ওই ছবিও দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ১১টি পুরস্কার পেয়েছে। পরে সান বাংলার আরেকটি ধারাবাহিক ‘কনে বউ’-তেও অভিনয় করি। আসলে আমি ভীষণ খুঁতখুঁতে। তাই যা পাই তাতেই রাজি হয়ে যাই না।
প্রশ্ন: সেই খুঁতখুঁতে সুমনা ‘রেস্ট ইন প্রেম’ সিরিজে ‘টুম্পা’ নাচলেন! অপসংস্কৃতি মনে হয়নি?
সুমনা: একটুও না। কারণ, এ রকম ক্যাওড়া টাইপ নাচ, চোখে সাদা লেন্স পরে ভূতুড়ে হাবভাব, রিকশা চালানো— এর আগে কোনওটাই করিনি। তাই প্রচণ্ড উপভোগ করতে করতে শ্যুট করেছি। গানের পরিচালক আর কম্পোজার অভিষেক সাহা ও আরভ রায়চৌধুরী বলেছিলেন, সাধারণের মুখের কথা বসিয়ে তৈরি গান হিট হবে। কারও ধারণাই ছিল না, এ রকম রেকর্ড তৈরি করবে। অটো থেকে অডি, এখন সব জায়গা ‘টুম্পা’ময়।
আরও পড়ুন: রাত আর চাঁদকে মিলিয়ে দিয়ে দেবলীনাকে কোলে তুলে নিলেন গৌরব
প্রশ্ন: ভাইরাল হতেই নেটাগরিকদের ট্রোল, ন্যুডিটির মিথ্যে অভিযোগে সিরিজ বন্ধ। মনে হচ্ছিল, কাজটা না করলেই ভাল হত?
সুমনা: ভাল কাজ করলে এটুকু সহ্য করে নিতেই হয়। আমরা সবাই সেটা মেনে নিয়েছি। আমরা নিজেদের মতো করে প্যান্ডেল সাজিয়ে সরস্বতী পুজো করেছি মাত্র। সেটা লোকের এত পছন্দ হবে আমরাও যেমন বুঝতে পারিনি, অন্যরাও না। তাই হয়ত এ রকম প্রতিক্রিয়া।
প্রশ্ন: অপসংস্কৃতির তকমা মুছতে ‘টুম্পা’-কে নিয়ে মাইকেল মধুসূদন দত্ত, শেক্সপিয়র, জীবনানন্দ দাশ কলম ধরেছেন। দেখেছেন?
সুমনা: সবটাই সবার আন্তরিক ভালবাসার প্রকাশ। ‘টুম্পা’ এখন বঙ্গসংস্কৃতির অঙ্গ। সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই দেখবেন, ‘আমার টুম্পার মতো প্রেমিকা চাই’ বা ‘খৈনি খাওয়া ছেড়ে দিলাম তাও তো টুম্পা তোমায় পেলাম না’ মন্তব্যে ভর্তি। ‘টুম্পা’র বসতি আমবাঙালির মনে। কেউ কিন্তু ‘টুম্পা’-কে ছেড়ে বেরোতে পারছেন না! এই সাপোর্টটাই চেয়েছিলাম আমরা।
প্রশ্ন:‘টুম্পা’র কেমন প্রেমিক চাই?
সুমনা: খুব সহজ-সরল হবে। আমায় বুঝবে। আমার মতো সাদাসিধে হবে।(একটু থেমে) আমি প্রেমজীবন নিয়ে মুখ খুলতে এখনই আগ্রহী নই। বিয়ে করার পর আমার জীবন কেমন হল, সেটা নিয়ে বরং আড্ডা দেব।