শোলাঙ্কি রায়। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: কেমন আছেন?
শোলাঙ্কি: বেশ ভাল আছি। বৃষ্টি হয়ে গরমটা একটু কম। আরও ভাল লাগছে। চাপটাও কম এখন। সিরিয়াল নেই। তাই ছুটির মেজাজেই আছি।
প্রশ্ন: ছোট পর্দা থেকে বিরতি নিলে উপভোগ করেন, না কি কিছু দিন পর থেকেই মন খুঁতখুঁত করতে শুরু করে?
শোলাঙ্কি: না, আমি ও ভাবে কাজ করতে পারি না। আমার নিজের মতো একটা ছুটি প্রয়োজন হয়। সেই সময়টা বেশ উপভোগও করি। সিনেমা দেখি, আরাম করি বাড়িতে। বন্ধুদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ আছে। দেখা-সাক্ষাৎ হয়। বাড়ি যাই, মা-বাবার সঙ্গে সময় কাটাই। আলাদা থাকলেও পরিবারের সবার মধ্যে এখনও দারুণ যোগাযোগ। সকলের সঙ্গে আড্ডা হয়। ফলে পরের কাজটা করার জন্য অনেক বেশি উৎসাহ পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: ব্যস্ত অভিনেত্রী শোলাঙ্কি আত্মীয়দেরও সময় দেন?
শোলাঙ্কি: আমরা তুতো ভাই-বোনেরা মিলে কয়েক দিন পরেই বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। এটা আমাদের প্রথম ট্রিপ হবে। কারণ আমার দুই তুতো ভাই বাইরে থাকত এত দিন। আমি এই বেড়ানোটার জন্য মুখিয়ে আছি।
শোলাঙ্কি রায়। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: আগে অভিনেত্রী অঙ্কিতা চক্রবর্তী এবং আপনি একসঙ্গে থাকতেন। এখন নিজের আলাদা বাড়ি নিয়েছেন। একা থাকতে কি বেশি সুবিধা হচ্ছে?
শোলাঙ্কি: উল্টো। একা থাকার বেশ কিছু অসুবিধা আছে। যেমন জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ— সবটাই নিজের দায়িত্ব। প্রতি দিন কী রান্না হবে, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ভাবা সবচেয়ে কঠিন কাজ। আর সুবিধা হল, নিজের মতো থাকা যায়। কেউ কিছু বলার নেই। যাঁরা একা থাকতে ভালবাসেন, তাঁদের জন্য তো খুবই ভাল। আমি একা থাকতে পছন্দ করি। যখন অঙ্কিতার সঙ্গে থাকতাম, তখনও বেশ মজা করে দিন কাটাতাম আমরা। এখন নিজের বাড়িটাকে মনের মতো করে সাজাচ্ছি। তার ফাঁকে চলছে এই ‘শহরের উষ্ণতম দিনে’র প্রচার।
প্রশ্ন: আট বছর পর তো আপনি এবং বিক্রম চট্টোপাধ্যায় আবার একসঙ্গে কাজ করলেন। কিছু পরিবর্তন হয়েছে আপনাদের?
শোলাঙ্কি: হ্যাঁ, বিক্রমের একটু পরিবর্তন হয়েছে। ও শান্ত হয়েছে, ধীরস্থির হয়েছে, মাথা ঠান্ডা হয়েছে। আমিও পরিণত হয়েছি। আমারও মাথা ঠান্ডা হয়েছে।
প্রশ্ন: কেন আপনি আগে খুব রেগে যেতেন বুঝি?
শোলাঙ্কি: হ্যাঁ, আমি সহজেই রেগে যাই। হালকা রাগ হলেই চেঁচামেচি করি। আর যদি খুব বড় কিছু হয় বা আঘাত পাই, তখন চুপ করে যাই। সেটেও অনেক সময় রাগারাগি হয়। আবার সেটা ঠিকও হয়ে যায়।
শোলাঙ্কি রায়। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: আগে পাওলি দাম থেকে পার্নো মিত্র এবং বর্তমানে বেশ কিছু নায়িকা ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় পসার জমাচ্ছেন। তবু সিরিয়ালের অভিনেতাদের নিয়ে এখনও এত ছুতমার্গ কেন?
শোলাঙ্কি: এটা একতরফা ধারণা বলে আমার মনে হয়। তবে এটা কিন্তু শুধু কলকাতায় নয়, মুম্বইয়েও হয়। এ দিকে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা শাহরুখ খান তাঁর কেরিয়ারও শুরু হয়েছিলেন সিরিয়ালের মাধ্যমেই। আমার মনে হয় যদি কেউ ভাল অভিনেতা হন, তিনি একটা সময়ের পর সিরিয়াল থেকে সিনেমায় আসতেই পারেন। টেলিভিশনের অভিনেতারা কিন্তু টেকনিক্যাল বিষয় সম্পর্কে অনেক বেশি জানেন।
প্রশ্ন: ছোট পর্দায় একেবারে ছেড়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত কখন নেওয়া প্রয়োজন?
শোলাঙ্কি: এগুলো নির্ভর করে সেই সংশ্লিষ্ট অভিনেতার উপর। আদৌ সে তৈরি কি না, সে-ই সবচেয়ে ভাল বুঝবে। ‘বাবা বেবি ও’-র সময় আমার মনে হয়েছিল, তখনও আমি তৈরি নই। মানসিক এবং আর্থিক কোনও দিক থেকেই তৈরি ছিলাম না। সিরিয়াল বন্ধ করে সিনেমাই করব, এই সিদ্ধান্তে আসতে তাই সময় লেগেছে। কারও রাস্তা কেউ তৈরি করে দিতে পারে না।
প্রশ্ন: আপনাকে পর্দায় দেখে অনেকেরই মনে হয়, শোলাঙ্কি খুব শান্ত মেয়ে, আদতে কি আপনি তেমনই?
শোলাঙ্কি: না না, আর টেলিভিশনের নায়িকারা তো আসলে মানুষ, ভগবান নয়! আমি তো নই। রক্ত-মাংসের মানুষ। সুতরাং দর্শকের ধারণা ভুল। এতটাও ভাল মেয়ে নই আমি।
শোলাঙ্কি রায়। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: সিরিয়ালের নায়িকাদের যে একদম আদর্শ রূপে দেখানো হয়। এমন চরিত্রে অভিনয় করতে আপনার অবাস্তব লাগত না?
শোলাঙ্কি: অবিশ্বাস্যটাকে বিশ্বাস করিয়ে নেওয়াই আমার কাজ। নিজেকে শুধু নয়, দর্শককেও বিশ্বাস করাতে হয়। আসলে এখানে রীতিই হল অভিনেতাদের দেবতুল্য আসনে বসানো। ‘স্টার ওয়ারশিপ’ করা হয়। তবে এখন চিত্রটা বদলেছে। অভিনেতারা নিজেদের ভাঙছেন। আগে সকলে খুব নিজেদের ইমেজ নিয়ে সচেতন ছিলেন। এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই।
প্রশ্ন: আপনি নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে সচেতন?
শোলাঙ্কি: না, আমি ইমেজ নিয়ে সচেতন নই। তবে নিজের ব্যক্তিত্ব নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। কার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করছি, সেটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিজের ইমেজ নিয়ে সচেতন হলে আর অভিনেতা হিসাবে নিজেকে ভাঙতে পারব না। একটা গণ্ডির মধ্যে থাকতে হবে।
প্রশ্ন: আচমকাই সমাজমাধ্যমের পাতায় বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, হঠাৎএই পরিবর্তন কেন?
শোলাঙ্কি: পরিবর্তন বলতে নিজের সঙ্গে নিজে সময় কাটিয়ে অনেক ভেবেছি। আমি রিল তৈরি করতে মোটেও ভালবাসি না। তবে নানা ধরনের খেলা আমি উপভোগ করছি। এমন ভাবে নিজের ইনস্টাগ্রামের ফিডটা সাজিয়েছি যে সেই জিনিসগুলোই আমি দেখতে পাই, যেগুলো দেখতে চাই। প্রথমে কঠিন বলে মনে হত এই কাজটা। এখন ভাল লাগছে।
প্রশ্ন: সমাজমাধ্যমে সক্রিয় হওয়ার ফলে ইদানীং ট্রোল, কু মন্তব্যের পরিমাণও বেড়েছে...।
শোলাঙ্কি: ইনস্টাগ্রামে বেশির ভাগই নামহীন এবং অকাজের প্রোফাইল। আর কিছু কিছু মন্তব্য ইচ্ছা করে করা হয়, যাতে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। তাই আরও পাত্তা দিই না এ সব বাজে জিনিসে। একটা মানুষ বাজে বললে দশটা মানুষ আছেন, যাঁরা ভাল কথা বলেন। ইতিবাচক দিকে মন দেওয়াই ভাল।
প্রশ্ন: ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কাটাছেঁড়া হলে কী মনে হয়?
শোলাঙ্কি: খারাপ লাগে না, কিন্তু বিরক্ত লাগে। কারণ মানুষ গসিপ ভালবাসে। তাই সিরিয়ালে কূটকচালি হলে টিআরপি তরতরিয়ে বেড়ে যায়। আমরা ভণ্ড, তাই প্রকাশ্যে স্বীকার করি না। কিন্তু আড়ালে সবাই গসিপ করি। আর ব্যক্তিগত জীবনকে যে হেতু আমি আড়ালে রাখতে পছন্দ করি, তাই মানুষের উৎসাহ আরও বেশি জানার। মাঝে মাঝে কিন্তু আমার বেশ মজাও লাগে।