রুক্মিণী
প্র: অতিমারির মধ্যে যখন ছবি-মুক্তিতে ততটা ভরসা পাচ্ছেন না নির্মাতারা, সেখানে আপনার ছবি মুক্তি পাচ্ছে দীপাবলিতে। কতটা আশাবাদী?
উ: গরমের ছুটিতে ছবিটা মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। প্যানডেমিক আসার আগে ‘সুইৎজ়ারল্যান্ড’ নিয়ে আমরা সকলেই আশাবাদী ছিলাম। সম্প্রতি ট্রেলার লঞ্চ করার পরে সকলের সাড়া পেয়ে আবার ভরসা ফিরে পাচ্ছি। মধ্যবিত্তের স্বপ্নের কথা বলে ছবিটা। আমরা সকলেই কখনও না কখনও টাকা জমিয়েছি বিদেশে যাব বলে, অথবা কোনও দামি কিছু কিনব বলে। সেই আকাঙ্ক্ষা নিয়েই ছবিটা।
প্র: জিতের প্রযোজনায় আপনার প্রথম ছবি। ‘দেব এনটারটেনমেন্ট’-এর কমফর্ট জ়োনের বাইরে বেরিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উ: এর আগেও দেবের প্রোডাকশনের বাইরে সুরিন্দর ফিল্মসের সঙ্গে ছবি করেছি। জিতের প্রোডাকশন হাউসের কাছ থেকে এটা আমার তৃতীয় অফার। আগের ছবিগুলো ডেট ম্যাচ না হওয়ার জন্যই করতে পারিনি। অথচ এটা কেউ বিশ্বাস করতে চান না। ‘সুইৎজ়ারল্যান্ড’-এর রুমির চরিত্রের জন্য আমি কিন্তু পরিচালকের প্রথম পছন্দ ছিলাম না। জিৎদাই প্রথম আমাকে নেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে দেবের সঙ্গে কথা বলতে আসে। ছবিতে রুমি, অর্থাৎ আমার চরিত্র দুই সন্তানের মা। হয়তো সেই কারণেই চরিত্রটা এত বার হাতবদল হয়ে আমার কাছে এসেছে। কেরিয়ারের শুরুর দিকেই এই ধরনের চরিত্র বাছাটা ঝুঁকির হয়ে যাচ্ছে, এমন কথাও শুনতে হয়েছিল আমাকে। তবে এর আগেও আমার স্ক্রিন এজ বাড়ানো হয়েছে, বয়সের তুলনায় বেশি পরিণত চরিত্রে কাজ করেছি। তাই এ বারও ঝুঁকি নিতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।
প্র: ছবিতে আবীর চট্টোপাধ্যায়ের নায়িকা আপনি। শট দেওয়ার আগে নাকি বেশ নার্ভাস থাকতেন সেটে?
উ: খুব নার্ভাস থাকতাম। অভিনেতা হিসেবে আবীরের পাশে দাঁড়ানো আমার কাছে বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। আবীর সেটা বুঝতে পেরে যতটা সম্ভব আমাকে স্বচ্ছন্দ করার চেষ্টা করত। এমনকি পরিচালক শৌভিক কুণ্ডুও আলাদা করে এসে শট বুঝিয়ে দিত আমায়, যাতে আমি অপ্রস্তুত হয়ে না পড়ি। সোহিনী সেনগুপ্তের কাছে ওয়র্কশপ করেছিলাম শুটিং শুরুর আগে। এই প্রথম এমন একটা সেটে কাজ করেছি, যেখানে একজন লোককেও আমি চিনি না! তবে সকলেই আমাকে সহজ করে তোলার চেষ্টা করতেন। সে তুলনায় ‘দেব এনটারটেনমেন্ট’ কিন্তু অনেক কড়া!
প্র: রুক্মিণী মৈত্র মানেই দেবের ছবি, আপনার কাছে অন্যান্য প্রস্তাব আসার পথে কি বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই ধারণা?
উ: জানি না, সব সময়ে আমাকেই কেন এই প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন হতে হয়। টলিউডে এমন অনেক প্রোডাকশন হাউস রয়েছে, যারা পরপর একই নায়িকাকে নিয়ে কাজ করে যায়। বহু নামী পরিচালক রয়েছেন, যাঁরা নিজেদের ছবিতে পরপর একই মুখদের সুযোগ দেন। এখানে পেট্রিয়ার্কিও একটা সমস্যা। কোনও মেয়ে নিজের চেষ্টায় কিছু অর্জন করতে গেলেও তাঁর প্রাপ্য কৃতিত্বটা দিতে চান না কেউ। আমি তো তা-ও একাধিক পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। শুধু ডাবিং দেখেই কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ‘ককপিট’-এ কাস্ট করেছিলেন আমাকে। ‘কবীর’-এ যে চরিত্রে আমাকে ভেবেছিলেন পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়, কেরিয়ারের শুরুতে ওই রকম একটা চরিত্রের কথা অনেকেই ভাবতে পারেন না।
প্র: ওয়েব প্ল্যাটফর্ম এক্সপ্লোর করতে চান না?
উ: এখনও ভাবিনি তা নিয়ে। মুম্বই থেকে কিছু ওয়েবের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু সিনেমা হলই আমাকে তৈরি করেছে গত দু’বছরে। তাই আমারও সিনেমা হলের পাশেই দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করি। বিশেষ করে এই কঠিন সময়ে।
প্র: এ বারের পুজোয় আপনার আর দেবের ছবি ‘কিশমিশ’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। তার কাজ ফের কবে শুরু হবে?
উ: ‘কিশমিশ’-এ অনেককে নিয়ে কাজ করতে হবে, যেটা এই মুহূর্তে হয়তো সম্ভব নয়। পরের বছরের গোড়ার দিকে শুরু করব।
প্র: লকডাউন কী ভাবে কাটালেন?
উ: প্রচুর বই পড়ে, দাবা খেলে। এর আগে মা শুধু আমাকে এয়ারপোর্টে ছাড়তে আর আনতে যেত, আর বাড়িতে থাকলে ঘুমোতে দেখত! লকডাউনে মায়ের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটাতে পেরেছি।
প্র: আর দেবের সঙ্গে?
উ: (হাসি) আপনি কী করে জানলেন! এ সব নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না। আমার মা-ও তো কাগজ পড়ে! জোকস অ্যাপার্ট, ভাল সময় কাটিয়েছি দু’জনে। প্রথম দিকে দেখা করতাম না। আমার জন্মদিনে প্রথম বেরিয়েছিলাম। পুজোর আগে-আগেই দুবাই গিয়েছিলাম। দেবের ছবির রেকি ছিল, আমি গিয়েছিলাম বেস্ট ফ্রেন্ডের মেয়েকে দেখতে। চার-পাঁচ দিনের ছোট্ট ট্রিপ ছিল। ওখানে এক দিন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আমাদের জন্য প্রাইভেট লাঞ্চ অর্গানাইজ় করেছিলেন। ফেরার পরে পুজোটা কোয়রান্টিনেই কেটেছে।
প্র: পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য দেবের কাজ উচ্চ প্রশংসিত। ওঁর এই দিকটা আগে দেখেছেন?
উ: যে জায়গা থেকে দেব উঠে এসেছে, সেটা কোনও দিন ও ভুলে যায়নি। অনেক কাজের মধ্যে হয়তো করতে পারত না আগে। লকডাউনে সময়ও পেয়েছে আর ক্ষমতাটাও কাজে লাগিয়েছে। ও সামান্য চেষ্টা করলে যদি প্রচুর মানুষের উপকার হয়, তা হলে কেন করবে না! আমি ওকে সব সময়ে বলি যে, আজ তোমাকে দেব বানিয়েছেন মানুষই। ঈশ্বর সকলকে সুযোগ দেন ফিরিয়ে দেওয়ার। সেটা কাজে লাগিয়েছে দেব।
প্র: আপনারা সেটল করছেন কবে?
উ: এই বছর তো বাচ্চা হওয়াটা বেশি ‘ইন’! ভগবানকে ডাকছি, আমাদের নিয়ে এ রকম কোনও খবর যেন এখন না আসে... (হাসি)!