বিধায়ক-অভিনেত্রী জুন মাল্য। ছবি: সংগৃহীত।
৩০ বছর আগে এই ফ্লোর থেকেই তাঁর অভিনয় যাত্রার শুরু। অনেক ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে অভিনেত্রী জুন মাল্যের জীবন। কখনও ব্যক্তিগত জীবন, কখনও আবার পেশার জন্য চর্চা হয়েছে তাঁকে নিয়ে। তিনি এমনিতে স্পষ্টবক্তা। তবে, কখনও তেমন ভাবে নিজেকে বিতর্কে জড়াননি অভিনেত্রী। এই মুহূর্তে তাঁকে ‘লভ বিয়ে আজকাল’ সিরিয়ালে নেতিবাচক চরিত্রে দেখছেন দর্শক। তবে এখন তিনি শুধু অভিনেত্রী নন, নেত্রীও বটে। তাঁর দায়িত্বে মেদিনীপুর। সেখানকার তৃণমূল বিধায়ক তিনি। দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন জগৎ। দুই জগতের মধ্যে কী ভাবে সমতা বজায় রাখছেন জুন? সিরিয়ালের শটের ফাঁকে সেই উত্তরই পাওয়া গেল তাঁর থেকে।
প্রশ্ন: ৩০ বছরের অভিনয় জীবন আপনার। যে ভাবে কেরিয়ার এগিয়েছে তাতে আপনি কি খুশি?
জুন: আমি খুব খুশি আমার এই ৩০ বছরের যাত্রায়। কোনও অভিযোগ নেই। মনে হচ্ছে যেন একটা বৃত্ত পুরো করছি। আজ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছি, এখান থেকেই শুরু সব কিছুর। এখনই যে ফ্লোরে আমি শট দিচ্ছিলাম, সেখানেই আমার অভিনয় জীবনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রথম মডেলিং অ্যাসাইনমেন্ট এই ফ্লোরে। ঋতুপর্ণ ঘোষের একটি ছবিতে খুব কম সময়ের জন্য দেখা গিয়েছিল আমায়। সেই শুটও হয়েছিল এই ফ্লোরেই। প্রথম ছবি ‘লাঠি’র শুটিংও হয়েছিল এই ফ্লোরে। তাই এখানে আমার কত কত যে স্মৃতি। একটা বৃত্ত যেন সম্পূর্ণ হচ্ছে। জানেন তো ‘লভ বিয়ে আজকাল’-এর প্রযোজক যিশু সেনগুপ্তের সঙ্গে প্রথম দেখাও হয়েছিল এই স্টুডিয়োতেই। ইস্, কত কী যে মনে পড়ে যাচ্ছে!
রাজনীতি থেকে অভিনয় জীবন— দুই জগতের মধ্যে কী ভাবে সমতা বজায় রাখছেন জুন? ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: ছোট পর্দার ‘ভাল মা’ হিসাবে আপনার পরিচিতি হয়ে গিয়েছে এই কয়েক বছরে। সেই জন্যই কি আবার খলচরিত্র বেছে নেওয়া?
জুন: আমার শেষ ‘রেশম ঝাঁপি’ সিরিয়ালে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। তার পর টানা পাঁচ বছর ‘ভাল মা’র চরিত্রেই অভিনয় করে যাচ্ছি। তার পর মনে হল, অনেক তো হল!
প্রশ্ন: মানে ইতিবাচক চরিত্র আর পছন্দ হচ্ছে না?
জুন: না, আমি যে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি এমনটা নয়। তবে যখন নীলাঞ্জনার (সেনগুপ্ত, প্রযোজক) সঙ্গে কথা হল, তখন মনে হল, আবার একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেখি না কেমন হয়। তাই রাজি হলাম এই চরিত্রে অভিনয় করার জন্য। আর মৃত্তিকা চরিত্রের লুকটাও আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।
অভিনেত্রীর কাছে বিয়ের মানে কী? ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: মেদিনীপুরের দায়িত্বও তো রয়েছে আপনার কাঁধে। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জগতের মধ্যে সমতা রাখা কি কঠিন?
জুন: আমার এখানে সারা ক্ষণ ফোন বাজতে থাকে। অনেক সময় পরিচালকের কাছে বকুনি খাই। আমি প্রতি সপ্তাহে মেদিনীপুরে যাই। দুই জগতের মধ্যে অনেক পার্থক্য। কিন্তু আমি সত্যিই উপভোগ করি। ভিড়ে মিশে যেতে ভাল লাগে। তাই সমতা রাখার জন্য আলাদা করে কোনও শ্রম দিতে হয় না। কঠিন, সহজ কোনওটাই ঠিক করে বলতে পারব না।
প্রশ্ন: খলচরিত্রে অভিনয় করছেন, সাধারণ মানুষের কাছে ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার ভয় করে না?
জুন: একদমই নয়। কারণ দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জগৎ। আর আমি যত বছর ধরে অভিনয় করছি, এত দিনে সবাই জানে ক্যামেরার সামনে যা করছি তা সম্পূর্ণ অভিনয়। সুতরাং এখানে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। মানুষের থেকে আমি প্রচুর ভালবাসা পেয়েছি। তাই এ সব ভাবনা আমার মাথায় আসে না।
প্রশ্ন: ছোট থেকে কি রাজনীতি বিষয়টার প্রতি আলাদা কোনও টান ছিল আপনার?
জুন: না, আমাদের বাড়িতে না ছিলেন কেউ অভিনেতা, না ছিলেন কেউ রাজনীতিক। আমিই প্রথম প্রজন্ম যে অভিনয়ও করেছি, আবার এখন রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হয়েছি। কিন্তু প্রতিটি বাঙালি পরিবারে রাজনীতির একটা ছায়া থাকেই। আমার বাবা, কাকাদের দেখেছি এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে। তর্কবিতর্কও দেখেছি। সেগুলো দেখেছি। তবে আমি কোনও দিন নির্বাচনে দাঁড়াব, জিতব, বিধায়ক হব এটা আমার স্বপ্নের বাইরে ছিল। তবে বিধায়ক হওয়ার আগেও আমি বেশ কিছু সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। মানুষের জন্য কাজ করতাম আগে থেকেই। বলা যেতে পারে বিধায়ক হওয়ার পর সেই পরিধি বেড়েছে।
প্রশ্ন: ‘লভ বিয়ে আজকাল’-এর কেন্দ্রবিন্দুতে চুক্তি বিয়ে। এখন সম্পর্ক বিয়ের অর্থ অনেকটা বদলেছে। আপনার কাছে বিয়ের মানে কী?
জুন: আমি এই বিষয়ে একটু সেকেলে। বিয়েতে আমি বিশ্বাস করি। তবে যাঁরা ‘লিভ ইন’ (একত্রবাস) সম্পর্কে থাকতে চায়, বিয়ের আগে একসঙ্গে থেকে পরস্পরকে বুঝতে চায়, সেই বিষয়কেও সম্মান করি। তাই করোনা পরিস্থিতির সময় কত কত বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা শুনেছি। তাই দুটো বিষয়কেই আমি সম্মান করি।