টলিপাড়ায় লাবণীর ৩৭ বছরের সফর। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: অভিনয় জীবনের কত বছর হল?
লাবণী: আমার ২১ বছর বয়স থেকে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরু। ৩৭ বছর হয়ে গেল। অনেকগুলো বছর। চাকরি করলে এত দিনে অবসর নিতে পারতাম হয়তো। কী ভাবে যে ভালবেসে ফেললাম অভিনয়কে!
প্রশ্ন: অভিনয়ের সঙ্গে প্রেমটা হল কী ভাবে?
লাবণী: ছোট থেকেই আমি নাচ ভালবাসি। ছোটবেলায় ভরতনাট্যম শিখতাম। তার পর যখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি, তখন সেখানেও ইউনিভার্সিটির যত অনুষ্ঠান হত, সবেতে আমি অংশগ্রহণ করতাম। বলা যেতে পারে সেখানে মুখ্য আমিই ছিলাম। সেই অনুষ্ঠানে দেখেই দেবাংশু সেনগুপ্ত প্রথম আমায় এসে বলেন জোছন দস্তিদার তাঁর সিরিয়ালের জন্য নায়িকা খুঁজছেন। সে আর এক কাণ্ড। আমি কিছুতেই যেতে চাইনি। কারণ আমার কোনও আগ্রহই ছিল না এই সবে। তবু জোর করে নিয়ে গিয়েছিল আমায়। সেখানে গিয়ে দেখি দাঁড়িয়ে আছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। সেই আমার অভিনয় জীবনের প্রথম ধাপ। তার দু’দিন বাদেই অপর্ণা সেন তাঁর ‘সতী’ সিনেমার জন্য আমায় নির্বাচন করেন।
‘উড়ন তুবড়ি’ সিরিয়ালের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: ইদানীং অভিনেতারা মাত্র কয়েক বছরে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে, সেখানে ৩৭ বছর ধৈর্য ধরে টিকে থাকার মন্ত্র কী?
লাবণী: তা হলে ধরিত্রী এত বছর ধরে এই ভার বহন করে চলেছে কী ভাবে? গোটা জীবনে ধৈর্য্য ধরে থাকাটাই তো নিয়ম। জীবনে অনেক মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছেড়ে গিয়েছে। কিন্তু অভিনয়ের সঙ্গে আমার ডিভোর্স হয়নি। কারণ সে-ও আমায় ছেড়ে যায়নি। আর আমিও ছাড়িনি।
প্রশ্ন: আপনার জীবনের প্রথম চিত্রগ্রাহক সব্যসাচী চক্রবর্তী, প্রথম সিনেমার পরিচালক অপর্ণা সেন, এমন শুরু তো অনেকের স্বপ্ন!
লাবণী: আমি না কিছু অনুভবই করতে পারিনি। তখন বয়সও অনেকটা কম। তাই তেমন ভাবে বুঝতেই পারিনি গভীরতা। সেটা বুঝিনি বলেই আমার কোনও টেনশন হয়নি। যেমনটা বলেছিলেন তেমনটাই করে গিয়েছি।
‘রক্তকরবী’ ওয়েব সিরিজ়ের একটি দৃশ্যে লাবণী সরকার। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: সিনেমা, সিরিয়াল দিয়ে আপনার হাতেখড়ি। কিন্তু এখন তো সিরিজ়ের যুগ। ‘রক্তকরবী’ সিরিজে অভিনয়ের মাধ্যমে এই নতুন প্ল্যাটফর্মে হাতেখড়ি, কতটা ভাল লাগল?
লাবণী: খুব ভাল ভাল সিনেমা তৈরি হয়েছে। সিরিয়াল করার ইচ্ছা নেই। তবে এখন সিরিজ়ের যুগ। সত্যি বলতে মানুষের সমস্যা, ক্রোধ, ঘৃণা, ভালবাসা সব কিছু সিরিজ়ে খুব সহজেই ফুটে উঠছে। তাই দর্শক ইদানীং সিরিজ়ের প্রতি দর্শক এতটাই আকৃষ্ট। সিরিজ় সব বদ্ধমূল ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে। হিরোকে এমন দেখতে হবে। নায়িকাকে সুন্দরীই হতে হবে। আমার নিজের ব্যক্তিগত ভাবে ভাল লাগে তাই সিরিজ়। আমার চোখের তলাটা একটু ফোলা, মেকআপ দিয়ে ঢাকতে হয় না এখানে। আমি যেমন তেমনই থাকতে পারি এখানে। তাই তো এখন কত নতুন অভিনেতাদের দেখা যায়। আগে তো চেহারা দিয়ে বিচার হত সেই ছেলে-মেয়েটা কাজ পাবে কি পাবে না।
প্রশ্ন: চেহারা, সৌন্দর্যের বিচারে কখনও কাজ পেয়েছেন অথবা কাজ হাতছাড়া হয়েছে?
লাবণী : আমার মধ্যে কখনও হিরোইন হওয়ার উপাদান ছিল না। বরাবরই মাটির কাছাকাছি থাকতে আমি ভালবাসি। আমার জীবনবোধের সঙ্গে মেলে না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেরই মনে হত, ধুর কী ভাবে হিরোইন হব। নায়িকাসুলভ মুখই তো নয়। তখনই ভেবেছিলাম আমার কাছে যেমন কাজের সুযোগ আসবে, তেমন ভাবেই তা গ্রহণ করব। তখনই আমার চেয়ে মাত্র কয়েক বছরের বড় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ে মায়ের রোল করেছি। ২৯ বছর বয়সে ৩৯ বছরের একটি লোকের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমার এই সব নিয়ে কিছু মনে হয়নি। উল্টে এগুলো নিজের ক্রেডিট বলে মনে হয়েছে। কখনও মনে হয়নি কেন হিরোইন হলাম না।
প্রশ্ন: নতুনদের অনেকেই তো মায়ের চরিত্র বা একটু বেশি বয়সিদের চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হন না, তাঁদেরকে কী বলবেন?
লাবণী: এটা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত পছন্দ। তবে আমরা যে সময়ে কাজ করেছি তখন তো নায়িকাদের তেমন কিছু করার থাকত না। নাচ, গান, একটু ফাইট আর চোখে গ্লিসারিন দিয়ে প্রচুর কান্না। বাকিটা তো সবই হিরো করত। তাই আমি ক্যারেক্টার আর্টিস্ট হয়েই অনেক খুশি। চরিত্রাভিনেতা হয়ে আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করেছি। তাতেই আমি আনন্দিত।