অনুপম
প্র: গৃহবন্দি দশায় নিজেকে কী ভাবে ব্যস্ত রেখেছিলেন?
উ: লেখালিখি, গান-বাজনা নিয়েই ছিলাম। ইউটিউবে নিয়মিত গান রিলিজ় করেছি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বই পড়তাম। কাজে ফিরছি ধীরে ধীরে। মুম্বই গিয়ে ‘বব বিশ্বাস’-এর জন্য রেকর্ডিং করে এলাম। এর মধ্যে মালদায় একটা শো আছে। এত দিন পরে স্টেজে পারফর্ম করতে পারব ভেবেই উত্তেজিত! এখন ‘মৃগনাভি’র রিলিজ় নিয়ে ব্যস্ত।
প্র: প্রতি বছর পুজোয় আপনার সিনেমার গান রিলিজ় করে। সেই ধারা বজায় রাখতেই কি এ বারের পুজোয় নতুন সিঙ্গল?
উ: হ্যাঁ, পুজোয় যেহেতু নিয়মিত ছবি থাকে তাই আলাদা করে পুজোর গান করতাম না। ২০১৪-র পুজোয় গানের অ্যালবাম ‘বাক্যবাগীশ’ বেরিয়েছিল। কিন্তু ওটা ‘চতুষ্কোণ’-এর জন্য চাপা পড়ে গিয়েছিল (হাসি)। পরিস্থিতি কতটা বদলে গিয়েছে, ২০১৪ সালেও অ্যালবাম রিলিজ় করেছিলাম, আর এখন সিঙ্গল! যে সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, সেখানে ইতিবাচক কিছু দেখছি না। জীবন যেন থমকে গিয়েছে। সেখান থেকেই নতুন কিছু করার কথা মনে হয়েছিল। ‘মৃগনাভি’র পরিকল্পনার সময়ে পুজোর ছবি ছিল না। এখন তো ‘বনি’ রিলিজ় করছে।
প্র: এই গানটির কথা-সুর-কণ্ঠ আপনার। তার পরেও মিউজ়িক ভিডিয়ো করার দরকার পড়ল কেন?
উ: শুধু অডিয়োর মূল্য এখন নেই, ভিডিয়ো দরকার। সঙ্গীতের মহাসমুদ্রে রোজ একটা না একটা পাথর পড়ছে। আলোড়ন তুলতে না পারলে কারও নজরে পড়বে না। তাই অডিয়োর সঙ্গে ভিডিয়ো যোগ করতে হচ্ছে।
প্র: অনেক শিল্পীই নিজের অ্যাকাডেমি খুলেছেন। আপনার সে রকম কোনও ভাবনা আছে?
উ: আমি নিজেই এখনও শিখে চলেছি। তবে আমার ইউটিউব চ্যানেলে নতুনদের অনেককেই সুযোগ দিয়েছি। নতুনদের মধ্যে যারা ভাল কাজ করছে, তারা বেশি দিন বাংলায় থাকে না। এখানে গ্রোথের সুযোগ নেই। সকলেই চায় উন্নতি করতে। ২০১০ সালে যে পারিশ্রমিক দেওয়া হত, এখনও সেটাই দেওয়া হয়।
প্র: সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের আগামী দুটো ছবি ‘অতি উত্তম’, ‘এক্স=প্রেম’এ আপনার গান নেই। এটা অনেককেই অবাক করেছে।
উ: সৃজিতদা হয়তো এখন অন্য রকম কিছু করার পরিকল্পনা করছে। আমিও তো অন্য পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করি। সৃজিতদারও স্বাধীনতা আছে বাকিদের সঙ্গে কাজ করার। তবে যে দিন আমার গান লাগবে, সে দিন নিজেই বলবে। এটুকু বিশ্বাস আছে। ‘এক্স=প্রেম’ আমারই করার কথা ছিল। স্ক্রিপ্টও শুনেছি। তবে কেন করছি না, সেটা সৃজিতদা ভাল বলতে পারবে।
প্র: আপনি বিতর্ক থেকে দূরে থাকেন। কিন্তু আপনার ‘চাকা’ গানটিতে যে ভাবে রাজনীতি এসেছে তাতে আর আপনাকে সাবধানী বলা যাচ্ছে না।
উ: (হাসি) চেষ্টা করতাম বিতর্কের বাইরে থাকার। নিজের মতো শান্তিতে কাজ করতে চাইতাম। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের রাজ্যে যা ঘটেছে, সেগুলো আমাকে বিচলিত করেছে। ‘বাক্যবাগীশ’ অ্যালবামেই ‘চাকা’ গানটা ছিল। সেটাই এখনকার মতো করে বদলেছি।
প্র: বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে আসার পরে আপনি ‘রাজনীতি-আদর্শ’ নিয়ে একটা টুইট করেছিলেন...
উ: বিরক্তি থেকেই করছি। কাউকে টার্গেট করতে চাইনি। এটা একজন মানুষ করছেন না, সমাজের প্রতিফলন। দেশের অন্য রাজ্যে নেতা কেনাবেচা দেখেছি। পশ্চিমবঙ্গে এতটা বাড়াবাড়ি হত না। বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু কদর্য বিষয় উঠে এল, যেগুলো আগামী প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত হিসেবে খুব খারাপ। এই প্রজন্মের কাছে এমন কোনও রোল মডেল নেই যাকে দেখে তারা রাজনীতিতে আসবে। আমাদের সময়েও ছিল না। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখে কিছু ছেলে ক্রিকেট ব্যাট তুলে নিয়েছে। সুমন-অঞ্জন-নচিকেতাকে দেখে আমি গান বাঁধতে এসেছি। রাজনীতিতে সে রকম আইকন কোথায়?
প্র: শিল্পীদের রাজনীতিতে আসাটা কী ভাবে দেখছেন?
উ: খুব একটা ভাল চোখে দেখিনি। ব্যক্তিগত অ্যাজেন্ডা নিয়েই যে অধিকাংশ এসেছেন, তা বোঝা যায়। কোভিড পরিস্থিতিতে অনেক ব্যক্তি রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ার বাইরে থেকে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তাই মানুষের সেবা করার অজুহাত ধোপে টিকবে না।
প্র: কোনও রাজনৈতিক দল থেকে অনুষ্ঠান করতে বললে করবেন?
উ: অনেক কলেজে ছাত্রসংগঠন থেকে শোয়ের আয়োজন করা হয়। কোন ইউনিয়নের জন্য যাচ্ছি ভাবলে মুশকিল। আমি যাচ্ছি ওই কলেজটার জন্য, যেখানে সাধারণ পড়ুয়ারাও শামিল। রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে আজ অবধি আমাকে গাইতে দেখা যায়নি, যাবেও না।