Rwitobroto Mukherjee

ও শান্তিলালের ছেলে! ব্যস,ওকে সবাই নজর করতে শুরু করল...

মৈনাক ভৌমিকের ছবি ‘গোয়েন্দা জুনিয়র’-এ রিয়েল লাইফের বাবা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় শিক্ষক আর ছেলে ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় তাঁর ছাত্র। আজ শিক্ষক দিবসে এই ছাত্র-শিক্ষক বা বাবা-ছেলের সম্পর্কটা আসলে কেমন? খুঁজে দেখল আনন্দবাজার ডিজিটাল।মৈনাক ভৌমিকের ছবি ‘গোয়েন্দা জুনিয়র’-এ রিয়েল লাইফের বাবা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় শিক্ষক আর ছেলে ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় তাঁর ছাত্র। আজ শিক্ষক দিবসে এই ছাত্র-শিক্ষক বা বাবা-ছেলের সম্পর্কটা আসলে কেমন? খুঁজে দেখল আনন্দবাজার ডিজিটাল।

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৫:৪৯
Share:

শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় এবং ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়

এমন শক্তিশালী অভিনেতা যদি বাবা হন তিনি কি শিক্ষক হয়ে ওঠেন?

Advertisement

ঋতব্রত: ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে বাবাকে চিনেছি। বাবা সবসময় চেয়েছেন আমি আমার মতো করে বড় হই। আমি অভিনয়কে এ ভাবে বেছে নেওয়ার পরে বাবা সব সময় সতর্ক করে দিতেন একটা বিষয়ে, আমি নিজেকে যেন দারুণ ভেবে না ফেলি। যেদিন ভাবব সেদিন পতন অনিবার্য। নিঃসন্দেহে আমি যেন ভুল ভাবনা নিয়ে কাজ না করি,আমার বেড়ে ওঠার জায়গায় আমায় গাইড করা, এই জায়গায় বাবা নিশ্চয়ই আমার শিক্ষক।

শান্তিলাল: আমি বরাবর চেয়েছি ও এমন একটা কাজ করুক যা ওর মন চায়। যাতে ও খুশি থাকে এবং যে কাজটা ও দীর্ঘদিন করতে পারে। এটুকুই আমার শিক্ষকতা।

Advertisement

ঋতব্রত: তবে এরকম নয় যে বাবাই শুধু আমার শিক্ষক। একটা ঘটনাবলি তাহলে বুঝতে সুবিধে হবে। যখনই বাবা কোনও কাজ করেছে, আমি, মা একসঙ্গে সেই কাজ দেখেছি। বাবা হয়তো কখনও কখনও জিজ্ঞেস করেছে, কেমন লাগল? সেটা আমার বা বাবার যে কোনও কাজের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। আমাদের সব কাজই পরিবারের সবাই মিলে দেখি। কারও কোনও কাজ ভাল লাগলে আমরা টাকা দিই।এটা অবশ্য আমার মা ও ঠাকুমা মিলে শুরু করেছিল। বাবার ‘যুগনায়ক’ দেখে একান্ন টাকা দিয়েছিলাম আমি।

শান্তিলাল: সেটা শুরু হয়েছিল যখন আমরা ‘যুগনায়ক’ নাটকটা করি। আমার স্ত্রীর প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, চন্দন‌ সেন তোমাকে বিবেকানন্দ বানিয়ে এই ব্লান্ডারটা করল!‌ তারপর প্রথম দিন নাটকটা দেখে এসে ছেলে আমায় একান্ন টাকা দিয়েছিল। ওর মা দেখে বলল, আমিও দেব। বললাম, ছেলে কোনও রোজগার করে না তা-ও একান্ন টাকা দিয়েছে। তুমি কত দেবে? সেদিন ওর মা আমাকে ৫০০ টাকা দেয়। আসলে আমার ছেলের আমার কাজের প্রতি সমর্থনও আমার অস্তিত্বকে নির্মাণ করেছে।

আরও পড়ুন- আশার সঙ্গে গান গাইলেন নীল নীতিন মুকেশ!

মৈনাকের ‘গোয়েন্দা জুনিয়রছবিতেও তো আপনারা শিক্ষক আর ছাত্র?

শান্তিলাল: একটি বুদ্ধিদীপ্ত ছেলে, তাকে আমার চরিত্র ঠিক পথে চালনা করছে। তার মধ্যে অনুসন্ধিৎসা আছে। আমি তাকে শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ফেলে ফেলে তার গোয়েন্দাসুলভ মনোভাবকে বাড়িয়ে তুলছি।খুব ইন্টারেস্টিং প্লট।

আচ্ছা গোয়েন্দাদের কোনও বয়স হয়?

শান্তিলাল: খোঁজার ইচ্ছে যে কোনও বয়সেই আসতে পারে। আপনি দেরি করে বাড়ি ফিরলে আপনার বাড়ির লোকেরা জানতে চান, কেন দেরি? কোথায় দেরি? তারপর কী হল? এ ভাবে প্রশ্ন তৈরি হয়। এই প্রশ্নগুলোকেই বিভিন্ন জায়গায় বড় পরিসরে ভাবতে ভাবতে যারা কিছু খুঁজে বার করে তারাই গোয়েন্দা। তাই গোয়েন্দার কোনও বয়স হয় না।

‘গোয়েন্দা জুনিয়র’ ছবির অংশ

আপনি তো একসঙ্গে কাজ করলেন। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির এই খুদে গোয়েন্দা কেমন কাজ করেছেন?

শান্তিলাল: একসঙ্গে কাজ করলেই যে পারফরম্যান্সের সবটা বোঝা যায় এমন না। বড় পর্দায় কাজটা কেমন হল,সেটা দেখতে হবে।

মানে?

শান্তিলাল: আমার খুব রাগ হয়েছে। রাগ বোঝাবার জন্য আমি ভুরু দুটো এমন কুঁচকে অভিনয় করলাম যে দুটো ভুরু প্রায় ঠেকে গেল। এ বার বড় পর্দায় দেখলাম আমার ভুরুর সাইজ দশ ইঞ্চি হয়ে গেছে। আমায় রাক্ষসের মতো দেখাচ্ছে!

আরও পড়ুন-সারার ‘ফিরে দেখা’ মুহূর্তের ছবি দেখে নেট দুনিয়া হতবাক! কার্তিক কী বললেন জানেন?

এই ছবিতে বাবাকে কেমন লাগল?

ঋতব্রত: এখন নন স্টারার ফিল্মের যুগ আসছে কিন্তু। ধরুন পরমদার ছবি ‘হাওয়া বদল’। ইন্দ্রনীলদার ছবি ‘ফড়িং’ দিয়ে এই ধারার শুরু। চারটে একেবারে নতুন মুখের ছেলে আর একটা মেয়ে এবং একদল দক্ষ অভিনেতা নিয়ে ছবি হিট হয়েছে। সে ছবির নাম ‘ওপেনটি বায়োস্কোপ’। এই সময়ে বাবা এমন মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছে এটা দেখে আমার খুব ভাল লাগছে। ভাল অভিনেতারা ভাল কাজ পাচ্ছে। আমি যদি অভিনয় না করতাম তা-ও এই ছবিটা দেখতাম স্মার্ট মেকিংয়ের জন্য আর একদল দক্ষ অভিনেতার অভিনয় দেখতে।এই ছবি টিন এজারদের জন্যও, আবার তার চেয়ে বেশি বয়সী মানুষও দেখতে চাইবেন।

শান্তিলাল: তবে এই ট্রেন্ডটা আরও কয়েক বছর আগে এলে শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, শংকর চক্রবর্তী, পীযূষকে অন্য ভাবে পেতাম। বড় মিস হয়ে গেল। আমরাও অর্ধেকের বেশি রাস্তা চলে এসেছি। আমরাও ভাল কাজের সুযোগ পেতাম।

ওই সময় ধারাবাহিক না থাকলে কী হত?

শান্তিলাল: ধারাবাহিক না থাকলে আমাদের মাস চলত না। ধারাবাহিক না থাকলে শ’য়ে শ’য়ে অভিনেতা কেরানির চাকরি খুঁজতো। আমি তো দেখেছি শংকরকে ওই সময় কী ভাবে স্ট্রাগল করতে হয়েছে। ধারাবাহিক ছিল বলে আমরা বেঁচে গেলাম! ধারাবাহিক করে থিয়েটারটাও চালিয়ে যেতে পারলাম।

বাবা-ছেলের জুটি

বাবা-ছেলে একসঙ্গে কাজ করার মধ্যে কোনও চ্যালেঞ্জ আছে? মানে আপনি যা-ই করুন বাবার কাছে সব খবর পৌঁছে যায়?

শান্তিলাল: এই প্রশ্নের উত্তর আগে আমি দিই। আমি ছোট্টবেলা থেকে পাড়ার প্যান্ডেলে ওকে ছেড়ে দিয়ে চলে আসতাম। ওর মা তো চিন্তা করতই। আমি বলতাম, ওখানে ও নজরে থাকবে। আমার তো একটা চোখ, ওখানে চল্লিশটা চোখ!

ঋতব্রত: ইন্ডাস্ট্রিতেও তাই। সবাই বলত, ওই দেখ শান্তির ছেলে। ব্যস, আমার দিকে সকলের নজর!

আপনার জন্য তো খুব সমস্যা!

শান্তিলাল:হ্যাঁ। শান্তির ছেলে বিড়ি খাচ্ছে কি না। প্রেম করছে কি না। সব খবর আমার কাছে আগে আসে। অবশ্য এখানে একটা কথা আছে। আমাকেও ঠিক থাকতে হয়। ছেলের জন্য! ছেলে যেন ভুলভাল কিছু না শোনে।চাপ দু’দিকেই।

আরও পড়ুন- নতুন বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে জ্যাকি শ্রফ কন্যা!

আপনার গার্লফ্রেন্ডের বিষয়টা কেমন?

ঋতব্রত: আমার বন্ধুরা ভীষণ ভুল রটায়।

শান্তিলাল: ছবি না জীবন, কোন গার্লফ্রেন্ডের কথা বলছে ও, জিজ্ঞেস করুন তো ওকে।

ঋতব্রত: নানা, আমার কোনও গার্লফ্রেন্ড নেই। সব বাজে কথা।

শান্তিলাল: ভুল বলছে ও। ‘গোয়েন্দা জুনিয়র’-এ আছে। সে আমার মেয়ে। ও তাকে পছন্দ করে। ওরা এই ছবিটার আর একটা নাম দিয়েছে তাই, ‘বাবা কেন শ্বশুর গোয়েন্দা জুনিয়র আ থ্রিলার বাই মৈনাক ভৌমিক’!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement