Rukmini Maitra

‘দুষ্টুমি করে বাংলায় কিছু বললেও, শ্যুটিং ফ্লোরে সকলে তা ধরে ফেলত’

শুধু আমরা বাঙালিরা নই, সব রাজ্যের লোকেদের এখানকার নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ ছিল।

Advertisement

পারমিতা সাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২১ ০৭:৩৪
Share:

রুক্মিণী।

প্র: গত বছর থেকে টলিউডে যেখানে তেমন কোনও কাজ হচ্ছে না, সেখানে আপনি মুম্বইয়ে হিন্দি ছবির শুটিং করে এলেন। এখানকার তুলনায় কতটা আলাদা ছিল শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা?

Advertisement

উ: বলিউডের সঙ্গে এখানকার ছবির বাজেটের ফারাক রয়েছে ঠিকই, তবে কাজের পদ্ধতি দু’ জায়গাতেই এক। দুটো ইন্ডাস্ট্রির যদি তুলনা করি তা হলে বলব, ওখানে অনেকটা রিল্যাক্সড ভাবে কাজ করেছি। তবে সেটাও নির্ভর করে পরিচালক কে, গল্পটা কী রকম... সব কিছুর উপরে। অনেক ডিটেল প্রসেসে ওখানে কাজ হয়। অবশ্য সেটা সম্ভব হয় বাজেট বেশি থাকার জন্য। একটা অ্যাকশন দৃশ্যের জন্য ২০-৩০ দিন রিহার্স করা হয়। প্রি-প্রোডাকশনে অনেকটা সময় দেওয়া হয়। ওখানে আগাম সতর্কতা নেওয়া হয় অনেক বেশি, যাতে কেউ চোট না পান। অনেক সময়ে বলা হয়, বাংলার চেয়ে মুম্বইয়ে পেশাদারিত্ব বেশি, আসলে তা নয়। বাজেটের জন্য ওখানে এতটা নিখুঁত ভাবে কাজ করা সম্ভব হয়।

প্র: মুম্বইয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেকেরই হিন্দি বলা নিয়ে সমস্যা হয়...

Advertisement

উ: সেটা আমার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা ছিল না। আমি হিন্দিতে সড়গড়। আর বিপুল (শাহ) স্যরের সেটে অনেক বাঙালি টেকনিশিয়ান ছিলেন। তাঁরা রীতিমতো বাংলা ছবি দেখেন। ‘দিদি আমি ‘চ্যাম্প’ দেখেছি’, ‘দিদি আমি ‘সুইৎজ়ারল্যান্ড’ দেখেছি’... এটা চলতেই থাকত। এমনকি ‘সনক’-এর ডিরেক্টর কণিষ্ক (বর্মা) আর নায়ক বিদ্যুৎও (জামওয়াল) বাংলা ভালমতো বোঝে। ওরা কলকাতায় থেকেছে। এখানে পড়াশোনা করেছে। তাই আমি যদি দুষ্টুমি করে বাংলাতেও কিছু বলতাম, বাকিরা ঠিক ধরে ফেলত। নেহাও (ধুপিয়া) খুব চিলড আউট। তাই কাজটা খুব উপভোগ করেছি।

প্র: অ্যাকশন থ্রিলারে নায়িকার গুরুত্ব কতটা?

উ: ছবিতে আমাকে বেশ কয়েকটা লুকে দেখা যাবে। গ্ল্যাম সাইড দেখানোর যেমন সুযোগ আছে, আবার পারফরম্যান্স দেখানোরও জায়গা রয়েছে। সেটা না থাকলে ছবিটা করতে রাজি হতাম না।

প্র: অতিমারির মধ্যে শুটিং করতে গিয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু নজরে পড়ল?

উ: যেটা চোখে পড়েছে সেটা হল, পুরো সেট স্যানিটাইজ় করা, সেটের সকলের সাত দিন অন্তর কোভিড টেস্ট করা... এ সবের জন্য প্রযোজকেরা একটা বাজেট রাখছেন। আমার বিশ্বাস, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতেও এর পর যখন পুরোদমে শুটিং শুরু হবে, প্রযোজকেরা এর জন্য টাকা বরাদ্দ করবেন। ওখানে তখন যত ওয়েব সিরিজ়ের শুট হচ্ছিল, সব জায়গায় এক নিয়ম। সেটে যাঁরা কাজ করতেন তাঁদের হাতে এক রকম আর সেটের বাইরে যাঁরা, তাঁদের হাতে অন্য রকম ব্যান্ড থাকত।

প্র: তবে নিয়ম মেনেও কোভিডে আক্রান্ত হলেন এবং অন্য রাজ্যে। ভয় লাগেনি?

উ: আসলে বিপুল শাহের প্রযোজনা সংস্থা আমার তিন মাসের জন্য ডেট ব্লক করে রেখেছিল। আগেই এটা বলা ছিল, সেটে কারও কোভিড হতেই পারে, সেই হিসেবে আমাদের শিডিউল অ্যাডজাস্ট করতে হবে। তাই কোথাও না কোথাও এই ঝুঁকিটা নিয়েই কাজ শুরু করেছিলাম। তবে কোভিড পজ়িটিভ হওয়ার পরে ভয় লেগেছিল মায়ের জন্য। মা-ও গত তিন মাস ধরে আমার সঙ্গে মুম্বইয়ে ছিল। তার পর প্রোডাকশন থেকে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হল। মায়ের যখন রিপোর্ট নেগেটিভ এল, তখন অনেকটা নিশ্চিন্ত হলাম। বাবাকে হারানোর পর থেকে মাকে খুব সাবধানে রাখি। তবে আমার শরীর কখনও কখনও প্রচণ্ড খারাপ হয়েছে। সারা দিন যখন এত ইঞ্জেকশন চলছে, সিটি স্ক্যান করছে... তখন খারাপ চিন্তা আসেনি, তা নয়। তার পরই নিজেকে ভোলানোর চেষ্টা করতাম নানা ভাবে। কোভিড হয়ে গিয়েছে, তাই এ বার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। তার পর মজা করে একটা ভেকেশনে যেতে পারব... এই সব। আসলে এখন এই কথাগুলো শুনলে মেকি মনে হতে পারে। কিন্তু আশার আলো না থাকলে ওই অবস্থা থেকে বেরোনো কঠিন হত।

প্র: লকডাউনে সময় কাটাচ্ছেন কী করে?

উ: আমার দাদা দিল্লিতে থাকে। ওখানে লকডাউন হয়ে যাওয়ার ঠিক আগেই ওরা কলকাতায় চলে আসে। আমারও শেষ শিডিউলটা গোয়ায় ছিল, সেটাও বাতিল হয়ে যায়। আমিও ফিরে আসি। দাদা, বৌদি, আমাইরা, আমি, মাম্মা... সবাই মিলে এখন আমাদের বাড়ি জমজমাট।

প্র: বার ভোট দিয়েছিলেন?

উ: প্রচার যখন চলছিল, তখন কলকাতায় ছিলাম না। তবে ভোট দিতে এসেছিলাম, কারণ তখনকার একটা শিডিউল বাতিল হয়েছিল। এ বারের ইলেকশন ছিল দারুণ এন্টারটেনিং। আমার হোটেল রুমে সারা দিন নিউজ় চ্যানেল চলত। রুম সার্ভিসের ছেলেরা, সেটেও সকলে জিজ্ঞেস করত, ‘বাংলার অবস্থা কী, কে জিতবে...’ তখন মনে হয়, শুধু আমরা বাঙালিরা নই, সব রাজ্যের লোকেদের এখানকার নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ ছিল।

প্র: ‘কিশমিশ’ এর কী খবর?

উ: ছবিটা ভীষণ ভাবে করতে চাই। মুম্বই থেকেও রাহুলকে (মুখোপাধ্যায়) ফোন করতাম, কবে ছবিটা শুরু করব। জুনে শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল, সেটা এখন সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। এ দিকে আমার তো ‘সনক’-এর লাস্ট শিডিউলটাও লকডাউনের কারণে শেষ হয়নি। প্লেটে অনেক কিছুই আছে, কিন্তু খেতে পারছি না কোনওটাই (হেসে)।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement