Mimi-Athoi

সেটে বসে আছি, হঠাৎ অনির্বাণদা এসে আমায় গায়ের চাদরটা দিয়ে গেলেন: মিমি

অনির্বাণের কাজের প্রেমে পাগল মিমি। সেই টানে উনি কী কাণ্ড ঘটালেন ‘অথৈ’-এর শুটিংয়ে? খোলামেলা আড্ডায় আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি ‘এমিলিয়া’।

Advertisement

উপালি মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৪ ১৫:৫৬
Share:

‘অথৈ’-এর ‘মিলি’ মিমি দত্ত। ছবি: সংগৃহীত ।

অর্ণ মুখোপাধ্যায়ের ‘অথৈ’-এর ‘ইয়াগো’ (ছবিতে গোগো) অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ‘এমিলিয়া’ মিমি দত্ত। পর্দায় অভিনয়ের খাতিরে চোখ বুজে প্রেমে পড়েছেন। বাস্তবে? পর্দার প্রেমের রেশ নিয়েই কি রাতে ঘুমোতে যেতেন? কী বললেন মিমি, শোনা যাক।

Advertisement

প্রশ্ন: মিমি দত্তর নাকি অথৈজলে এখনও হাবুডুবু দশা!

মিমি: (হাহাহাহা) একদম ঠিক। অভিনয় শুরুর আগে থেকে ঘোর তৈরি হয়েছিল। শুটিংয়ের সময় সেই অনুভূতি আরও গাঢ় হয়। তার পর শুটিং শেষ হল। ছবি মুক্তি পেয়েছে। দর্শক দেখছে। প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। তার পরেও ঘোর কাটল কই?

Advertisement

প্রশ্ন: অর্ণ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম পরিচালনায় বড় পর্দার ছবি। আপনি সে ছবি অথৈ’-এর মিলি’?

মিমি: হ্যাঁ। এত দি‌নে অনেকেই জেনে গিয়েছেন, শেক্সপিয়রের ‘ওথেলো’ নাটকের বাংলা ছায়ারূপ ‘অথৈ’। মূল কাহিনির এমিলিয়া এখানে মিলি। ‘গোগো’-র প্রেমিকা। গোগোকে সে ভালবাসে, অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করে। পরে এই জায়গা থেকেই অবিশ্বাস, হিংসা, দ্বন্দ্ব জন্ম নেয়। জানেন বোধ হয়, ‘গোগো’ চরিত্রটি করেছেন অনির্বাণদা (ভট্টাচার্য)।

প্রশ্ন: সুযোগ পেলেন কী ভাবে?

মিমি: খুবই আশ্চর্যজনক ভাবে। শেষ মুহূর্তে। তার আগে ছবির চিত্রনাট্য পড়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ‘এমিলিয়া’-র চরিত্রাভিনেতা বাছা হয়নি। বাঁকুড়ায় শুটিং হবে। তার দিন কয়েক আগে, আমার অডিশনে ডাক পড়ল। নাটকটি আগে কয়েক বার পড়েছি। মূল কাহিনির হিন্দি রূপান্তর ‘ওমকারা’-ও দেখেছি। ফলে, ভিতরে ভিতরে এক ধরনের বোঝাপড়া ছিল। অডিশনের ডাক পাওয়ার পর মনে হয়েছিল, সুযোগ পাই বা না পাই, এত বড় একটা কাজের ক্ষুদ্র অংশ তো হচ্ছি! অডিশন দেওয়ার আগে অনির্বাণদা, অর্ণদার কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, নির্বাচিত হই, বা না হই, আমায় যেন জানানো হয়। আউটডোর শুটিংয়ের দিন কয়েক আগে ওঁরা জানালেন, আমি নির্বাচিত। ওই অল্প সময়ে আবার চিত্রনাট্যটি পড়লাম। পুরোটা মহড়া দিলাম সবাই। তার পর শুটিংয়ে গিয়েছি।

প্রশ্ন: এক ঝাঁক মঞ্চাভিনেতাকেবল আপনিই দলছুট!

মিমি: একদম, কিন্তু ওঁরা বুঝতে দেননি। চিত্রনাট্য পড়ার দিন থেকে এতটাই আপন করে নিয়েছিলেন সবাই যে, মনে হচ্ছিল, আমিও ওঁদের সঙ্গে নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করি। ওঁদের দলেরই মেয়ে।

প্রশ্ন: নিজেকে প্রমাণ করার চাপ ছিল না?

মিমি: ছিল তো। ওঁদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার তাগিদ ছিল। ওই জন্য মহড়ার দিন থেকে চরিত্রে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। চিত্রনাট্য খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছি। অনির্বাণদা, অর্ণদার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনেছি। একটা সময়ের পর ওঁরা বললেন, মিমি তুমি চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গিয়েছ। এখানে একটা কথা বলি, আমরা কিন্তু হাসি বা কান্নার দৃশ্যে সত্যি করেই করতাম। জীবনে যেমন হয়। মন থেকে হাসতাম বা হাউহাউ করে কাঁদতাম। একটা দৃশ্য শেষ হত, তার পরই অনির্বাণদা, অর্ণদার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।

প্রশ্ন: হুম!

মিমি: (খানিক আনমনা হয়ে) শুটিং শেষ হয়েছে। প্রিমিয়ার হয়ে গিয়েছে। তবু ‘এমিলিয়া’ আমায় ছেড়ে যায়নি। প্রিমিয়ারের দিনও কেবল শুটিংয়ের দিনগুলিই ফিরে ফিরে আসছিল।

প্রশ্ন: মাস্টারমশাইয়েরা আপনাকে দিয়েছেন, দর্শকেরা?

মিমি: আমার সৌভাগ্য! ওঁদের আশীর্বাদ। সবার। আমি মাথা পেতে নিয়েছি।

প্রশ্ন: প্রিমিয়ারের দিনের কথা বলছিলেন!

মিমি: হ্যাঁ, প্রিমিয়ারের দিন ইন্ডাস্ট্রির প্রায় সবাই এসেছিলেন। ছবি শেষে আমরা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। প্রত্যেকে আলাদা করে ডেকে কথা বলেছেন। মমতা শঙ্করের পায়ে হাত ছোঁয়াতেই জড়িয়ে ধরে কী আদর, কী আদর! চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী আলাদা করে প্রশংসা করলেন। আমি পাওলি দামের অন্ধ ভক্ত। সেই তিনি নিজে ডেকে জানালেন, এই ধরনের চরিত্র যেন আরও করি। দর্শকেরাও প্রশংসা করছেন। এখন মনে হচ্ছে, কিছু একটা করতে পেরেছি হয়তো!

প্রশ্ন: এ বার আপনার পর্দার প্রেমিক অনির্বাণ ভট্টাচার্যের কথা...

মিমি: (লাজুক হেসে) অসম্ভব ভাল অভিনেতা এবং পরিচালক। এটা প্রমাণিত সত্য। অসম্ভব ভাল মাস্টারমশাই, এটা কাজ না করলে বুঝতাম না। কাজের প্রতি ওঁর নিষ্ঠা দেখলে অবাক হতে হয়। প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে পারেন। অভিনয়, কার্যনির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন যে কত ঝক্কির, সেটা কাজ করতে করতে বুঝতাম। আর দলের প্রত্যেকের প্রতি কী ভীষণ দরদ! সবাই ঠিকমতো খাচ্ছেন কি না, বিশ্রাম করছেন কি না— কড়া নজর থাকত ওঁর। বাঁকুড়ায় যখন আমরা শুট করতে গিয়েছি তখন খুব ঠান্ডা। সেটে বসে আছি। হঠাৎ অনির্বাণদা নিজে এসে ওঁর গায়ের চাদরটা আমায় দিয়ে গেলেন! যাতে শীত না করে। ভাবা যায়! আলাদা মাত্রার মানুষ উনি।

প্রশ্ন: যাহ! অনুরাগীরা যাঁর নাম শুনলেই প্রেমে পড়েন, তাঁকে নিয়ে আপনার কোনও প্রেমজ অনুভূতিই নেই?

মিমি:(জোরে হাসি)আছে তো। মানুষটার ব্যবহারের প্রেমে পড়েছি। কাজের প্রেমে পড়েছি। ওঁর পরিশ্রম, নিষ্ঠা, পরিচালনা, অভিনয় দেখব বলে শটের পরেও থেকে যেতাম। সেট ছাড়তাম না। যখন নিজের ঘরে যেতাম, অদ্ভুত একটা ঘোর তৈরি হত। ‘কর্মী’ অনির্বাণ ভট্টাচার্যের একটা বাড়তি আকর্ষণ আছে। ওটা আমায় খুব টানত।

টিম ‘অথৈ’ এবং মিমি দত্ত। সংগৃহীত চিত্র।

প্রশ্ন: সোহিনী সরকার আর অনির্বাণ ভট্টাচার্যের রসায়ন?

মিমি: আমি বুঝতে পারছি আপনি কী ইঙ্গিত দিচ্ছেন! কিন্তু আমি বলি, অভিনয় আর কার্যনির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব সামলে অনির্বাণদার হাতে এ সবের সময় থাকত? তা ছাড়া, ওঁরা খুব ভাল বন্ধু। ছবি নিয়ে, চরিত্র নিয়ে আলোচনা করতেন। পেশাগত জীবনে ওঁদের বোঝাপড়া এত ভাল যে, অনির্বাণদার চোখের ইশারা দেখে সোহিনীদি বুঝে নিতেন, দাদা কী চাইছেন। আমার এটুকুই বলার, ওঁদের মধ্যে অন্য কিছু খুঁজবেন না! ওঁরা দু’জনেই কাজপাগল!

প্রশ্ন: ছবির সূত্রে একটা অন্য প্রশ্ন করি। ওথেলোবা অথৈ’-এর প্রেম-অপ্রেম, বিশ্বাস-বিশ্বাসঘাতকতা বর্তমানেও প্রবল ভাবে উপস্থিত। এটা কী কারণে বলে আপনার মনে হয়?

মিমি: আসলে, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে নেতিবাচক আর ইতিবাচক জায়গা আছে। এটাই মানবধর্ম। সেই নীতি মেনে অতীতেও প্রত্যেকে বিশ্বাস-অবিশ্বাস, প্রেম-অপ্রেমে ভুগেছে, এখনও তাই। অন্ধ ভালবাসার কারণে ঘর ছাড়ার দৃষ্টান্তও আছে। আবার খুব কাছের বন্ধুর মনে জমে থাকা হিংসের আঁচ পুড়িয়ে দেয় বিপরীতে থাকা মানুষটিকে, এ ঘটনাও তো বিরল নয়। এগুলি শেক্সপিয়র দুই মলাটে ধরতে পেরেছিলেন বলেই ওঁর লেখা ২০২৪-এও প্রাসঙ্গিক।

প্রশ্ন: মঞ্চ ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে কাজ, শেক্সপিয়রের চরিত্র হওয়া, প্রথম সারির প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কাজ— সব মিলিয়ে অথৈতা হলে মিমির পেশাজীবনের এক মাইলফলক!

মিমি: (গলার স্বরে তৃপ্তির ছোঁয়া) এই ছবি আমার জীবনে শুধুই যোগ করেছে। বিয়োগ বলে কিচ্ছু নেই। যা যা বললেন, সব দিক থেকে। মঞ্চের ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে কাজ, শেক্সপিয়রের চরিত্র হওয়া, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অর্ণ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় কাজ— ইতিবাচক সব কিছুই ঝুলিতে জমা পড়ল। তবে প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফের সঙ্গে আমার কাজ কিন্তু নতুন নয়। অনেক ছোট বয়স থেকে কাজ করছি তো! শ্রীকান্ত মোহতা-মহেন্দ্র সোনির প্রযোজনায় প্রচুর জনপ্রিয় ছবি, সিরিজ়, ধারাবাহিকে কাজ করেছি। এটি বলতে পারেন, পরিণত বয়সে বড় মাপের ছবিতে প্রথম অভিনয় করলাম। অবশ্যই সেটি আমার মুকুটের একটা দামি পালক। আমার পরিচিতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এই ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement