সুখবিন্দর
হিন্দি প্লেব্যাক ইন্ডাস্ট্রিতে পালাবদল কম হয়নি। তার মাঝেও তিন দশক ধরে নিজের সিংহাসন বজায় রেখেছেন সুখবিন্দর সিংহ। সলমন খানের ‘সুলতান’, ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’, শাহরুখ খানের ‘রইস’, অজয় দেবগণের ‘শিবায়’... সব ছবিতেই তাঁর গান বাঁধাধরা। ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকার চাবিকাঠি কী? ‘‘আমার এক মেন্টর বলেছিলেন, কেরিয়ার নিয়ে বেশি অ্যাগ্রেসিভ না হতে। আমি সেটাই অনুসরণ করেছি। বেশি টাকা উপার্জন কোনও দিনই লক্ষ্য ছিল না। ‘ছাঁইয়া ছাঁইয়া’র জনপ্রিয়তার পর প্রত্যেক দিন নতুন নতুন কাজের অফার পেতাম। কিন্তু দেড় বছর অপেক্ষা করেছিলাম। তার পরে গাইলাম ‘তাল’ ছবিতে। একটা বছরে তিনটে গান গেয়েছি। কিন্তু তিনটেই সুপারহিট,’’ বেশ গর্ব করেই ফোনে বললেন গায়ক।
রেকর্ডিং তাঁর কাছে আসলে সেলিব্রেশন। বলছেন, ‘‘যখন আমি স্টুডিয়োয় গিয়ে মাইকটা ধরি, তখনও মনে হয় স্টেজ শো করছি।’’ এ আর রহমান, বিশাল ভরদ্বাজ, সেলিম-সুলেমান, শঙ্কর-এহসান-লয় তাঁর কেরিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ নাম। সাক্ষাৎকারে ফিরে ফিরে আসছিল এই সংগীত পরিচালকদের কথা। বলছিলেন, ‘‘রহমান ও সেলিম-সুলেমানের সঙ্গে পনেরো মিনিটেও গান রেকর্ড করেছি। যদি কোনও গান রেকর্ড করতে আধবেলা লেগে যায়, তবে বুঝবেন কম্পোজিশন বা গায়কের সমস্যা আছে। আমার সৌভাগ্য, যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁরা সকলেই আমাকে ইম্প্রোভাইজ করার স্বাধীনতা দিয়েছেন।’’
এখনকার বেশির ভাগ ছবিতেই রিমিক্স ও মাল্টি কম্পোজারের যে দাপট, তা নিয়ে বেশ অসন্তুষ্ট সুখবিন্দর। ক্ষোভ ফেটে পড়ল তাঁর কণ্ঠে, ‘‘মাল্টি কম্পোজার মানেই পরিচালকের কোনও একজনের উপর ভরসা নেই। আর যাঁরা রিমিক্স করছেন, তাঁরা প্রকৃত সংগীতপ্রেমী নন। তাঁরা ‘ক্রাউড’। যাঁরা সংগীত বোঝেন, ভালবাসেন, তাঁরা এই ভিড়ে মিশবেন না।’’ দু’টি দৃষ্টান্তও তুলে ধরলেন। ‘‘আর ডি বর্মণের ‘মেহবুবা’ গানটি ‘ফুকরে রিটার্নস’ ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে। রিমিক্স করা হলেও আসল সংগীতকার তো বর্মণসাহেব। কোথাও তাঁর নামের উল্লেখ পর্যন্ত নেই। এটা কী করে সম্ভব? কিছু দিন আগে ‘লখনউ সেন্ট্রাল’ ছবিতে আমার ‘মনসুন ওয়েডিং’-এ গাওয়া গানের নতুন ভার্সন ব্যবহার করা হয়। পরে প্রযোজক এসে আমার কাছে ক্ষমা চান।’’
অটোটিউনের ব্যবহার নিয়ে সুখবিন্দরের টিপ্পনী, ‘‘কখনও-সখনও সংগীত পরিচালকদের বলি, আমার ভয়েসে অটোটিউন ব্যবহার করতে। তাঁরা বলেন, অটোটিউন আমার ভয়েসে ফিট করে না,’’ বলেই জোরে হেসে উঠলেন তিনি।
আশা ভোঁসলের ভক্ত সুখবিন্দরের মতে, ‘‘আশাজি বিশ্বের সেরা শিল্পী। ওঁর সঙ্গে কারও তুলনা চলে না।’’ মধ্য চল্লিশের সুখবিন্দর এখনও জীবনসঙ্গী খুঁজে পাননি। তবে আশ্বস্ত করলেন, ‘‘বছরের শেষে যখন কলকাতায় আসব, তখন বোধহয় আর সিঙ্গল থাকব না।’’ তাঁর গাওয়া পছন্দের গান ‘ফ্যাশন’ ছবির ‘জলওয়া’।
সত্যিই সময় বোধহয় তাঁর ‘জলওয়া’ কেড়ে নিতে পারেনি!