চান্দ্রেয়ী ঘোষ।
দীর্ঘ দিন পরে সিনেমা হল খোলামাত্র যে বাংলা ছবিগুলি মুক্তি পাচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে ‘মুখোশ’ এবং ‘বিনিসুতোয়’। দু’টি ছবিতেই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে চান্দ্রেয়ী ঘোষকে। অভিনেত্রী ‘অগ্নিশিখা’ ধারাবাহিকের শুটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন ইদানীং। শটের মাঝে ফোনে বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমার কাছে ভাল ভাল ছবির একটা দারুণ প্ল্যাটার রয়েছে দর্শকের জন্য। টেলিভিশন, ছবির পাশাপাশি ওয়েবেও কয়েকটা কাজ করে ফেলেছি। প্রত্যেকটি চরিত্র একেবারে আলাদা ধরনের।’’
‘মুখোশ’ ছবিতে দুঁদে পুলিশ অফিসার কাবেরী বসু রূপে দেখা যাবে চান্দ্রেয়ীকে। শক্ত করে বাঁধা খোঁপা আর ইউনিফর্মে নিজের ‘টাফ লুক’ বেশ পছন্দই হয়েছিল অভিনেত্রীর। ‘‘চেহারাটাও একটু ঘষামাজা করেছি মেদ ঝরিয়ে। কারণ আমার মতে, চরিত্র যেমনই হোক, চেহারা অভিনয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ,’’ বললেন চান্দ্রেয়ী। পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত তাঁর খুব ছোটবেলার বন্ধু। পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে তাঁদের। তবে পেশাদার জীবনে ‘ব্ল্যাক উইডো’ সিরিজ়ের পরে এটিই বিরসার সঙ্গে চান্দ্রেয়ীর দ্বিতীয় কাজ। ‘‘শট শুরুর ঠিক আগে ও এসে আমার কানে কানে কিছু বলে যেত। আর সেটা ম্যাজিকের মতো কাজ করত। কম সময়ের মধ্যে চাপ নিয়ে কাজ করলেও খুব মজা করেছি আমরা,’’ বক্তব্য তাঁর। ‘মুখোশ’-এর প্রধান চরিত্রে রয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও অনির্বাণ চক্রবর্তী।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার ঠিক আগে ‘মুখোশ’-এর কাজ শেষ করেছিলেন চান্দ্রেয়ী। সেকেন্ড ওয়েভ বিপদে ফেলেছিল তাঁকেও। নিজে আক্রান্ত হয়েছিলেনই, চান্দ্রেয়ীর মা-ও ভাইরাসের কবলে পড়েছিলেন। তাই সময়টা বেশ কঠিন ছিল তাঁর জন্য, ‘‘মা ততটা কাবু হননি। কিন্তু আমি খুবই ভুগেছি। সেরে ওঠার পরেও দুর্বলতা ছিল অনেক দিন। আইসোলেশনে থাকার কষ্টও সাংঘাতিক। এখন কাজে ফেরার পরেও নিজের শরীরের প্রতি আলাদা করে যত্ন নিতেই হয়।’’
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ইতিমধ্যেই প্রশংসিত হয়েছে পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর ছবি ‘মায়ার জঞ্জাল’। সেই ছবিতেও কাজ করেছেন চান্দ্রেয়ী। ‘‘ছবিটা কবে মুক্তি পাবে, সেই অপেক্ষায় আমিও মুখিয়ে রয়েছি আর সকলের মতোই। ভাল খবর হল, ‘বিনিসুতোয়’ অনেক দিন পরে মুক্তি পাচ্ছে। অতনুদার (ঘোষ) ছবিতে কাজ করার একটা আলাদা তৃপ্তি রয়েছে। পরিচালক নিজেও ভীষণ ঠান্ডা মাথার, সেটে কোনও চিৎকার-চেঁচামেচি নেই। জয়ার (আহসান) সঙ্গে খুব বেশি দৃশ্য না থাকলেও ঋত্বিকের (চক্রবর্তী) সঙ্গে ছিল। আমার সহ-অভিনেতা ভাগ্যটাও খুব ভাল বলতে হয় (হাসি)!’’
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সম্প্রতি ‘মন্টু পাইলট’, ‘দময়ন্তী’, ‘ব্রেকআপ স্টোরি’র মতো কাজ করেছেন চান্দ্রেয়ী। তবে তাঁর করা ছবির সংখ্যা খুব বেশি নয়। এক সময়ে নানা লোককথা-রূপকথা নির্ভর ধারাবাহিকে খলচরিত্রে নিয়মিত মুখ হয়ে গিয়েছিলেন চান্দ্রেয়ী। এখনও সে রকম প্রস্তাব এলে করবেন? ‘‘সে রকম সুযোগ আবার এলে নিশ্চয়ই করব। কাজ িনয়ে কোনও আক্ষেপ নেই। টেলিভিশন আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমার ২১ বছরের কেরিয়ারের এক-একটা পর্ব পেরিয়েছে এক্সপেরিমেন্ট করে। কখনও নিজের ইমেজ নিয়ে ততটা ভাবিনি। এক সময়ে ব্রাত্য বসুর নির্দেশনায় গণকৃষ্টির নাটক ‘চতুষ্কোণ’ করে প্রশংসা পেয়েছি। তেমনই পরবর্তীকালে সিরিয়ালে মনসা বা কটকটির মতো চরিত্র জনপ্রিয় হয়েছিল। ওটিটি-তেও আমার সাম্প্রতিক কাজগুলি দর্শক গ্রহণ করেছেন। এত ধরনের সুযোগ পেয়েছি, ইন্ডাস্ট্রি আর দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে, এটাই তো বড় পাওনা।’’
পরিচালক রিংগোর একটি ছবির কাজ শিগগিরই শুরু করতে চলেছেন চান্দ্রেয়ী। বললেন, ‘‘যত দিন নতুন চ্যালেঞ্জ পেতে থাকব, দর্শককে নতুন কিছু দিতে পারব, আমি খুশি।’’