অনির্বাণ ভট্টাচার্য।
প্র: আসন্ন ছবির জন্য এই মুহূর্তে আপনার হেয়ারস্টাইলটাই কিন্তু সবচেয়ে বেশি চর্চায়...
উ: ‘দ্বিতীয় পুরুষ’-এ নিজের লুকের ব্যাপারে আমিও খানিকটা কনট্রিবিউট করেছিলাম। এত দিন প্রায় সব জায়গায় আমার একই হেয়ারস্টাইল ছিল। চুলটা কেটে ফেলার পরে আয়নায় নিজেকে দেখেই মনে হয়েছিল, দিস ইজ় ইট।
প্র: খোকার চরিত্রটা রপ্ত করার হোমওয়র্ক কেমন ছিল?
উ: একটা সোয়্যাগ রয়েছে চরিত্রটায়। স্ক্রিপ্টও ভীষণ ইন্টেলিজেন্ট। আমি এ শহরে এসে প্রথম দিকে সেন্ট্রাল কলকাতায় থাকতাম। সেখানকার রাউডি স্ট্রিট ল্যাঙ্গোয়েজটাও তাই আয়ত্তেই ছিল।
প্র: থিয়েটারে হোলটাইমার ছিলেন। এখন পরপর ছবি নিয়ে ব্যস্ত। স্টেজকে মিস করেন না?
উ: আসলে ‘ঈগলের চোখ’ এবং ‘ধনঞ্জয়’-এর পরে বুঝতে পারছিলাম, আমার কাছে ছবির অফার আসবে। তখন ঠান্ডা মাথায় ঠিক করেছিলাম, কী করব। সিনেমার সঙ্গে তো অর্থনৈতিক নিরাপত্তাটাও জড়িয়ে। ঠিক করলাম, যেগুলো চলছিল, সেই শোগুলো করব। আর সিনেমায় মন দেব। আসলে থিয়েটার থেকে এসেছি বলে অভিনয়ে বাড়াবাড়ি রয়েছে, এ সব অভিযোগ শুনতে হত। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে বছরে দু’-তিনটে নতুন নাটকের কথা ভাবা যেতেই পারে। গত বছর ‘তিতুমীর’, ‘পন্তু লাহা ২.০’ পাশাপাশি চলেছে।
প্র: ‘পন্তু লাহা ২.০’র নির্দেশনা আপনার। কেমন প্রতিক্রিয়া?
উ: সব প্রতিক্রিয়াই এখন ম্যানিপুলেটেড, নয় ডাইলিউটেড। তাই আর ভরসা করা যায় না।
প্র: মঞ্চে এর পর কী করবেন?
উ: ব্রাত্যদা (বসু) বেশ অন্য রকম একটা টেক্সট দিয়েছেন। অভিনয় আর পরিচালনা করব। অরিন্দম মুখোপাধ্যায় ‘এনিমি অব দ্য পিপল’ অ্যাডাপ্ট করছেন ‘নিঃশব্দ’ নামে, সেখানে স্টকম্যানের চরিত্রটা করার কথা। এ ছাড়া জঁ পল সার্ত্রের ‘নো এগজ়িট’ করার ইচ্ছে রয়েছে, যদি একটা ভাল ইন্টিমেট স্পেস পাই।
প্র: ওয়েবে ফেলুদার প্রস্তাব তো প্রথমে আপনার কাছেই গিয়েছিল। করলেন না কেন?
উ: লোভ অনেক কিছুতেই হয়। তবে আমি তো একটা চুক্তিতে আছি। সেটার একটা দায় থাকে। আর যেহেতু ব্যোমকেশ করছি, নিজস্বতার অনেকটাই ওতে ঢেলে দিয়েছি। তাই ফেলুদাতে নতুন কিছু দেওয়ার থাকবে কি না, সেটাও ভাবার বিষয়।
প্র: এসভিএফের সঙ্গে চুক্তির জন্য অন্যত্র সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে কি ?
উ: আই অ্যাম নট মিসিং এনিথিং। সেটা মনে হলে নিশ্চয়ই এসভিএফকে বলতাম। কিন্তু গত দু’বছর ধরে তারা আমার প্লেটে যা যা সাজিয়ে দিয়েছে, তাতে আমার কোনও আক্ষেপ নেই। এত বিচিত্র চরিত্র, এত ভাল ভাল পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ...
প্র: কিন্তু এর বাইরে?
উ: অন্যদের সঙ্গেও কাজের সুযোগ নিশ্চয়ই হবে। আমি যদি ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করতে পারি, তার কৃতিত্ব কিন্তু এই হাউসেরই হবে। আমি তো নায়ক হতে আসিনি। আর আমার কাছে কিন্তু অন্য হাউসের অফার নেই। কেউ যদি আমায় নিয়ে কিছু ভাবতেন, তা হলে তো জানতে পারতাম, তাই না? হয়তো ধরেই নিচ্ছেন, ও তো ওই ক্যাম্পের, অতএব অ্যাপ্রোচ করে কী হবে?
প্র: সংস্থার খারাপ সময়ে অনেকেই বেরিয়ে গিয়েছেন। অনেকের চুক্তিও শেষ। এগুলো আপনাকে ভাবায় না?
উ: এ রকম ভাবনাকে প্রশ্রয় দিই না। কারণ এসভিএফ কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে। চড়াই-উতরাই থাকবেই। আমি এসেছি সবে চার বছর। যে অসুবিধের মধ্য দিয়ে তারা যাচ্ছে, তার কারণ সম্পর্কে অবগত নই। আমাকে যে কোম্পানি তৈরি করেছে, তাদের বিপদে তো পাশে থাকবই।
প্র: তাই কি আবীর, যিশুদের পরিবর্তে আপনি এখন নিয়মিত ছবি করে চলেছেন এখানে?
উ: তা কেন? আবীর বা যিশু নিজের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। অ্যান্ড আই অ্যাম কনশাস অ্যাবাউট মাই ওন আইডেন্টিটি। আমি কাউকে রিপ্লেস করলাম কি না, এ ভাবে ভাবি না।
প্র: ‘কিচ্ছু চাইনি আমি’র পর আর প্লে-ব্যাকের প্রস্তাব এসেছে?
উ: ওটা একটা ফাঁদ, বুঝলেন! গান গাইতে পারা আর গান গাওয়া এক নয়। এর পরে গাইলে আর লোকে নেবে না। থিয়েটারে গান গাই, একটা গান হিট করেছে বলেই যদি আমিও হাওয়ায় ভাসি... আর আমি আসছিও কিন্তু ক্ষুদিরামের দেশ থেকে (হাসি)!
প্র: আপনি বরাবরই প্রেম এবং বিয়ের ব্যাপারটা এড়িয়ে যান। কেন?
উ: আমায় দেখাতে পারবেন, ব্যক্তিজীবনে কখনও কোথাও সেলিব্রেট করেছি? এখনও মধ্যবিত্ত, আটপৌরে আমিটাকে দৈনন্দিন যাপনে মরতে দিইনি। শুধু কৌতূহল নয়, ভার্চুয়াল দুনিয়ায় সকলে মতামত দেবেন আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে। এটা তো অস্বীকার করে লাভ নেই যে, আমজনতা আদতে রেসিস্ট। সাদা-কালো, রোগা-মোটা, সব কিছু নিয়েই। এটা একটা সময়ের পর অবসাদ তৈরি করে। তাই এই বাড়তি ঝামেলাগুলো এড়িয়ে যেতে চাই।