তুহিনা দাস।
আপনি তো গোয়েন্দা, তার মানে এখন থেকে সব গসিপ আর রহস্যের জোগান আপনিই দেবেন, তাই তো?
প্রশ্ন ছুড়তেই প্রথমে এক চোট হেসে নিলেন হালফিলে বাংলা সিনেমার অন্যতম দক্ষ অভিনেত্রী তুহিনা দাস। তার পর কোনও মতে হাসি থামিয়ে বলতে শুরু করলেন, “কে গোয়েন্দা নন বলুন তো? আপনি নন? টিনএজে কে কার সঙ্গে প্রেম করছে? কার সঙ্গে কার ব্রেক আপ হল, সেই মুচমুচে স্টোরি খুঁজে বের করেননি কখনও?”
তুহিনার সাফ উত্তর, “আমাদের সবার মধ্যেই গোয়েন্দা সত্তা লুকনো থাকে। তথ্য খুঁজতে ভালবাসি আমরা, অথবা ‘দময়ন্তী’।
অপর্ণা সেনের ‘ঘরে বাইরে আজ’-এর বৃন্দা এবং মৈনাক ভৌমিকের ওয়েবসিরিজ ‘ব্রেক আপ স্টোরি’র পর এই মুহূর্তে তুহিনার পরিচয় ‘দময়ন্তী’।
টিজারে ‘দময়ন্তী’ নিজেই জানিয়েছে, সে গোয়েন্দা নয়। ইতিহাসের অধ্যাপক। তাই রহস্যের গন্ধ পেলে কৌতূহলী হয়ে পড়ে সে। অনায়াসেই হাতে গ্লাভস, খোলা চুল, কালো টিপ আর ছিমছাম শাড়ির মেয়েটা পৌঁছে যায় রহস্যের উৎসে। বইয়ের ফাঁক দিয়ে তাঁর দিঘল চোখ খুঁজতে থাকে অপরাধীকে।
বাংলা সিনেমার আদি লগ্ন থেকে গোয়েন্দা গল্প হটকেক। তামাম ফেলুদা, ব্যোমকেশ বা একেন বাবু। কিন্তু মেয়ে গোয়েন্দা! ধারাবাহিকের এক গিন্নি গোয়েন্দা আর মিতিন মাসি ছাড়া এত দিন আর তার দেখা মিলেছে কই? ‘ তাই ‘দময়ন্তী’ ময়দানে নামতেই মোটামুটি হিট। সুন্দরী, বুদ্ধিমতী, দীর্ঘকায়া অধ্যাপক গোয়েন্দা পেয়ে ইতিমধ্যেই বেশ খুশি নেটাগরিকরা। প্রমাণ, টিজারের কমেন্ট বক্স।
আর তুহিনা? তাঁর তো বৃহস্পতি তুঙ্গে। ভাঙা ভাঙা বাংলায় বৃন্দা হয়ে নজর কেড়েছিলেন আগেই, ব্রেক আপ স্টোরিতে সৌরসেনীর সঙ্গে তাঁর অব্যক্ত প্রেমকাহন সপাটে চড় মেরেছিল হোমোফোবিকদের, আর এখন সে মহিলা গোয়েন্দা দময়ন্তী।
'দময়ন্তী' রূপে তুহিনা
“আপনার কেরিয়ার গ্রাফ দেখলে বোঝাই যাবে না, সত্যিই লকডাউনে মানুষ কাজ পাচ্ছিলেন না”, মুখে বিনয়, চোখে কাজের খিদে, তুহিনা বললেন, “ব্রেক আপ স্টোরির পর হঠাৎই হইচই থেকে ফোন আসে। এর পর এই সিরিজের অন্যতম পরিচালক রোহন ফোন করে সিরিজটি সম্পর্কে জানান। মিটিং হয়। তার পর ফাইনাল। লক ডাউনের মাঝে এমন একটা লোভনীয় চরিত্রের অফার, ছাড়া তো যায় না, বলুন?”
শুটের জন্য বাইরে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। তাই কলকাতার অলিগলি হয়ে উঠেছিল দময়ন্তীর রহস্যভেদের গোপন ডেরা। আউটডোর বলতে শান্তিনিকেতন। সেখানে গিয়েও আর এক কাণ্ড। তুহিনাই জানালেন, রহস্য তাঁকে ছাড়তে পারছিল না নাকি তিনি রহস্যকে ছেড়ে থাকতে পারছিলেন না সেটাই প্রধান রহস্য।
শান্তিনিকেতন পৌঁছলেন। শুট ভাল মতোই এগচ্ছিল। হঠাৎ বৃষ্টি। জোর বৃষ্টি। ও দিকে রাত ক্রমশ ঘন হচ্ছে। “হঠাৎ করে দেখলাম বৃষ্টির ঝাপটায় বাল্ব গুলো দপদপ করতে করতে তিন চারটে নিভে গেল। একটা গাড়ির শট হচ্ছিল। আমরা হতভম্বের মতো দেখে যাচ্ছি, গাড়িটা অস্বাভাবিক ভাবে দুলে যাচ্ছে… সে এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা”, তুহিনার গলায় চাপা উত্তেজনা, চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন যেন।
আরও পড়ুন: নুসরতের 'নাগিন' বন্ধু বলে ট্রোল হলেন অভিনেত্রী মিমি
শুট হল। পরিচালকদ্বয় রোহন ঘোষ এবং অরিত্র সেন সৃষ্টি করে ফেললেন গোয়েন্দা জগতের এক নতুন নক্ষত্রকে। আর তুহিনা? ঘরে বাইরেতে সঙ্গত দিয়েছিলেন অনির্বাণ, যীশুর মতো দুই শক্তিশালী অভিনেতা, ব্রেকআপ স্টোরিতে পাশে পেয়েছিলেন সৌরসেনীকে… আর এই সিরিজের নায়ক তিনিই। তিনি কি টেনশনে? “এক মহিলা ডিটেকটিভ, দুই সম্পূর্ণ আলাদা একটি চরিত্রে প্রথম বার, টেনশন ঠিক নয়, তবে অদ্ভুত একটা ফিলিংস কাজ করছে। তবে আমার দুই পরিচালক কিন্তু আমাকে একেবারে শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়েছিলেন। দময়ন্তী কেমন করে ভাবে, ভাববার সময় তাঁর কোন ভুরু কীভাবে কুঁচকে যায়, সে সবও রীতিমত ব্রিফ করেছিল রোহন”, জানালেন তুহিনা।
দময়ন্তীর প্রযোজনায় এসভিএফ। মাস খানেক আগে তাঁরা কয়েক গুচ্ছ ওয়েব সিরিজের যে ঘোষণা করেছিলেন, দময়ন্তী তারই মধ্যে অন্যতম।
তুহিনা ছাড়াও ছবিতে দেখা যাবে ইন্দ্রাশিষ রায়, সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, অমৃতা চট্টোপাধ্যায় সহ অনেককেই।
আরও পড়ুন: ‘পৃথিবীতে কেউ কুৎসিত নয়’, বলবে ‘ওগো নিরুপমা’
আড্ডা প্রায় শেষের পথে। তুহিনার দিকে আবারও প্রশ্নবাণ। ওদের এলোনা হোমস আছে, আমাদের কি তবে আজ থেকে দময়ন্তী? আবার হাসলেন তুহিনা… বুঝিয়ে দিলেন… ‘পিকচার আভি বাকি হ্যায়…’।