চান্দ্রেয়ী ঘোষ। ছবি— ফেসবুক।
চান্দ্রেয়ী ঘোষ, ইন্ডাস্ট্রিতে কাটিয়ে দিয়েছেন কুড়ি বছরেরও বেশি, তাঁকে ফোনে পাওয়া খুবই দুষ্কর। অগত্যা মুখোমুখি বসল জমাটি আড্ডা। লাঞ্চ সেরে পান খেয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় একগাল হেসে ঘরে ঢুকলেন ‘রানি কটকটি’। বা বলা ভাল, ‘বিবিজান’। হইচই-এর নতুন ওয়েব সিরিজ ‘মন্টু পাইলট’-এ আপাতত ওই চরিত্রেই দেখা যাচ্ছে তাঁকে।
কে এই বিবিজান? কী করেন তিনি?
বিবিজান এক যৌনকর্মী পল্লির মালকিন। তাঁর হাতে অনেক ক্ষমতা, শুধুমাত্র সেই ব্রথেলে আসা মেয়েদের যে তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন এমনটা নয়। খুনি, গুন্ডা— যারাই সেখানে কাজ করে সবার প্রতি এক আশ্চর্য কন্ট্রোল রয়েছে তাঁর।
রানি কটকটি, ঘসেটি বেগম, এখন বিবিজান... চান্দ্রেয়ী মানেই কি ক্ষমতার প্রতাপ?
বিবিজান একটু অন্য রকম। তাঁর চরিত্রের মধ্যে এক অদ্ভূত বৈপরীত্য রয়েছে। কখনও মনে হবে ভীষণ রুথলেস। প্রাণে ছিটেফোঁটা মায়া নেই। কিন্তু সিরিজটা দেখলে বোঝা যাবে ওঁর একটা অদ্ভুত নরম মন রয়েছে।
আরও পড়ুন: উপমুখ্যমন্ত্রী নয়, উদ্ধব সরকারে অর্থমন্ত্রী হচ্ছেন অজিত পওয়ার
কী রকম?
মানে তৌফিককে (কাঞ্চন মল্লিক) সে ক্রমাগত দোষারোপ করতে থাকে তাঁর এই অবস্থার জন্য। সেখানে সে ইমোশনাল। কিন্তু সেই সঙ্গেই যে পাওয়ারটা হোল্ড করে সেটাও ছাড়তে চায় না।
বিবিজানের মনে প্রেম নেই?
হ্যাঁ, আছে তো। তৌফিকের সঙ্গে তাঁর প্রেম রয়েছে। কিন্তু সেই প্রেমের ভাষাটাও আলাদা। এত তিক্ত একটা ভালবাসা... যা সচরাচর দেখা যায় না।
তা হলে বলা যায়, গোটা সিরিজটাই বিবিজানের উপর দাঁড়িয়ে...
না, ঠিক তা নয়। মন্টুকে নিয়ে গল্প। মন্টু কাজ করে নীলকুঠিতে। আর নীলকুঠির মালিক বিবিজান। আর বিবিজানের মন্টুর প্রতি একটা অপত্য স্নেহ রয়েছে। ছোটবেলা থেকে মন্টু যৌনপল্লিতে মানুষ।
(মন্টুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌরভ দাস। অনেক দিন পর সিনে দুনিয়ায় কামব্যাক করছেন ‘ইচ্ছেনদী’ ধারাবাহিকের সোলাঙ্কি। সময়ের হিসেব কষলে দেখা যাবে চান্দ্রেয়ীর তুলনায় দু’জনেই নতুন।)
সৌরভ ও সোলাঙ্কি।
তাঁদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন হল চান্দ্রেয়ীর?
ভীষণ এনজয় করেছি। আসলে গল্পটা এত ডার্ক, ইনটেন্স, পুরো আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছিলাম সবাই। মানে টাইট টিম ওয়ার্ক।
এখনও পর্যন্ত ‘মন্টু পাইলট’-এর রেসপন্স ভালই। আলো-আঁধারি মাখা সিনগুলো বেশ অন্য রকম। শুটিং কোথায় হয়েছিল?
বিশ্বাস করুন, দেখে মনে হবে, সবটা বুঝি বানানো। আদপে তা নয়। খুব পুরনো একটা বাড়ি। একটা বারান্দা ছিল সেই বাড়িতে, যার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে একটা মোটা গাছের গুঁড়ি চলে গিয়েছে। সেখান দিয়ে নিচু হয়ে যেতে হয়। না দেখলে সত্যিই বিশ্বাস হবে না। সূর্যের আলো সেখানে প্রবেশ করে না। ছাদ সারাতে হয়েছে। নয়তো বৃষ্টির জল ভাসিয়ে দিচ্ছিল গোটা ইউনিট।
সাধারণ দর্শক কেন যৌনপল্লির গল্প দেখবেন? কী বিশেষত্ব রয়েছে ‘মন্টু পাইলট’-এর?
সোলাঙ্কি।
‘মন্টু পাইলট’ সমাজের এমন কিছু মানুষের জীবনযাত্রার গল্প শোনায়, একটা নির্দিষ্ট ‘ওয়ে অব লাইফ’-এর গল্প তুলে ধরে। এই ধরনের পৃথিবীতে যাঁরা বাঁচেন, তাঁদের প্রতিনিয়ত যে ইনার কনফ্লিক্ট, সেটাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
তা সিরিয়াল ছেড়ে হঠাৎ ওয়েব সিরিজে ঝুঁকলেন কেন?
আমি মনে করি বদল হল কনস্ট্যান্ট। তাল মিলিয়ে চলতেই হবে। এখন সময়টাই এ রকম। প্রত্যেকের হাতে ফোন। সব সময় তো আর টেলিভিশন দেখা সম্ভব হয় না।
কিন্তু ওয়েব সিরিজ কি সিরিয়ালের ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে না?
হ্যাঁ, এফেক্ট তো পড়ছেই। টেলিভিশনকেও তাই অন্য ভাবে ভাবতে হবে। দেখা যাক কী হয়।
‘দোসর’, ‘কাল’ থেকে হালফিলে ‘আমি সিরাজের বেগম’ অথবা ‘মন্টু পাইলট’... ব্যাটিংটা কিন্তু একই ভাবে করে যাচ্ছেন তিনি, চান্দ্রেয়ী ঘোষ।