রণজয়
প্র: সিনেমা করতে করতে ছোট পর্দায় এলেন কেন?
উ: বহু দিন ধরেই চ্যানেল থেকে যোগাযোগ করছিল। মাঝে অতিমারির সময়ে আমিও সেই ভাগ্যবানদের দলে ছিলাম, যাঁদের হাতে দু’-একটা কাজ ছিল। কিন্তু কাজের পরিমাণ কমছিল। স্ক্রিপ্ট পড়ছিলাম, কিন্তু ভাল লাগছিল না। আর্থিক দিকটাও তো বিবেচনা করতে হয়। আর লীনাদির (গঙ্গোপাধ্যায়) লেখনী, শব্দচয়ন... আমার খুব পছন্দের। অন্য কারও সঙ্গে কাজ করতেও আপত্তি নেই। তবে লীনাদির সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে ছিল। সেই সুযোগটা যখন এল, না করতে পারিনি। পরে যেদিন ‘গুড্ডি’ ধারাবাহিকে অনুজের চরিত্রটা শুনি, বেশ ভাল লাগে। অভিনেতা হিসেবে বিভিন্ন ধরনের চরিত্র খুঁজি ঠিকই। কিন্তু অনুজের চরিত্রের এত স্তর রয়েছে, যে কাজটা খুব ইন্টারেস্টিং বলে মনে হল।
প্র: আপনার চরিত্রটা কেমন?
উ: ধারাবাহিকে অনুজ একজন আইপিএস অফিসার। তার মা নেই, বাবার দ্বিতীয় বিয়ে সে মেনে নিতে পারে না। সে ট্রান্সফার নিয়ে দার্জিলিঙে যায়। সেখানেই গুড্ডির সঙ্গে দেখা। গুড্ডিরও মা নেই। তাদের পথ কোথাও একটা মিলে যায়। তবে এটা তথাকথিত প্রেমের গল্প নয়। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই গল্পটা বোনা হয়েছে।
প্র: এখন যদি ভাল সিনেমা বা সিরিজ়ের প্রস্তাব পান...
উ: কিছু ছবি হাতে রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। বাংলায় রয়েছে ‘সীমান্ত’, ‘জালবন্দি’। ‘বিধান’ নামে একটা হিন্দি ছবি আছে। একটা দক্ষিণী ছবিও মুক্তি পাবে। এর পরেও ভাল চিত্রনাট্য পেলে অবশ্যই করব।
প্র: ‘ম্যায় মুলায়ম’-এ গোবিন্দ নামদেবের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
উ: অনেক সিনিয়র অভিনেতা। কিন্তু সেটে সহজ করে মিশতেন, পরিবেশ এত কমফর্টেবল রাখতেন যে, সহজেই শট হয়ে যেত। কোনও শট ভাল লাগলে নিজে এসে প্রশংসা করতেন।
প্র: মুম্বইয়ের টান বাড়ছে? এখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্রম মুম্বই?
উ: আসলে শুরুর দিকে তো মুম্বইয়ে ছিলাম। তখন থেকেই ওটা দেওয়া রয়েছে আর পাল্টানো হয়নি। আর মুম্বই হোক বা দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি, কাজের প্রস্তাব পেলে সব দিকে যাব। কিন্তু কাজ করে কলকাতাতেই ফিরব। কারণ শিকড়টা এখানেই।
প্র: ‘গুড্ডি’র শুটিং তো পাহাড়ে হয়েছে? সেই অভিজ্ঞতা কেমন?
উ: পাহাড়ে ঘুরতে গেলে যে মেজাজে যাই, শুটিংয়ে কিন্তু সেটা হয় না। আমরা যখন দার্জিলিঙে শুটিং করছি, তখন তুষারপাত হচ্ছে। এ দিকে গল্প অনুযায়ী মে মাস দেখানো হচ্ছে। ফলে শটের সময়ে আমায় বারেবারে জ্যাকেট খুলতে হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা ভয়ঙ্কর। ওই ঠান্ডায় জ্যাকেট খুলে যে কী ভাবে শুটিং করেছি! তুষারপাতের জন্য অনেক দিন শুটিং বাতিলও হয়ে গিয়েছে। আগে শুটিং ভেস্তে গেলে মজা হত, ভাবতাম আজ তো ছুটি। কিন্তু এখন খারাপ লাগে। অনেক বছর তো হল ইন্ডাস্ট্রিতে। এখন বুঝতে পারি, দু’দিনের শুটিং ক্যানসেল হলে প্রযোজকের কত টাকা নষ্ট হয়। তবে সব কিছুর পরেও আউটপুট ভাল হয়েছে। আর আমাদের টেকনিশিয়ানরাও খুব খেটেছে। মহাকালের মন্দিরে শট ছিল। সেখানে ক্যামেরা, লাইট কাঁধে নিয়ে ওরা উঠেছে। তাকদা বাংলো, লেপচাজগৎ, কালিম্পঙেও শুটিং করেছি।
প্র: সোহিনীও (সরকার) তো গিয়েছিলেন...
উ: ও যখন এসেছিল, সে দিন ডে অফ ছিল। আশপাশে একটু ঘুরলাম। আমরা পাহাড়ে এত ঘুরেছি যে, দেখার বাকি কিছু নেই। তবে দার্জিলিঙে এমন স্নোফল আগে দেখিনি। সেটা আমাদের কাছে একদম নতুন অভিজ্ঞতা।
প্র: সোহিনীর সঙ্গেও তো অনেকদিন লিভইনে আছেন?
উ: সেমি-লিভইন বলা যায়। কখনও ও আমার বাড়িতে চলে আসে, কখনও আমি ওর বাড়িতে চলে যাই। কখনও যে যার মতো থাকি। আর আমাদের পরিবারও এ ব্যাপারে খুব উদার মানসিকতার। আমরা একে অপরকে পছন্দ করি, একসঙ্গে চলতে চাই, সেটাকে সকলে সম্মান করে।
প্র: বিয়ের পরিকল্পনা কত দূর?
উ: বিয়ের প্ল্যানিং তো নিজেদের মধ্যে চলতেই থাকে। সম্পর্কের প্রায় তিন বছর হয়ে গেল। সব কিছু ঠিক করে দিনটা জানাব। শুধু তো আমাদের উপরে ব্যাপারটা নির্ভর করছে না। এত দিন অতিমারি চলল। এখন যুদ্ধ-যুদ্ধ হাওয়া। তবে আমরা খুব জমকালো কিছু করব না। খুব সাদামাঠা ভাবে বিয়ে করার ইচ্ছে।
প্র: সাদামাঠা কেন?
উ: আসলে আমরাও খুব সিম্পল। আমরা অভিনেতা। ‘স্টার’ হয়ে দূরের আকাশের নক্ষত্র হতে চাই না, মানুষের মাঝে মাটির কাছাকাছি থাকতে চাই। যে মানুষদের জন্য আমাদের কাজ, তাঁদের সঙ্গে জুড়ে-জুড়ে থাকতে ভালবাসি। আমার চেয়েও সোহিনীর পরিচিতি তো বেশি। কিন্তু আমরা খুব সাধারণ ভাবে থাকি, রিকশা করে কখনও ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি। এ-দিক ও-দিক মেলাতেও আমাদের দেখা পাওয়া যায়। আর ঠিক এ ভাবেই আমরা বাঁচতে চাই।