প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়
প্র: আপনার হাতে এখন পরপর কাজ। দেড় বছর বাড়িবন্দি থাকা পুষিয়ে নিচ্ছেন?
উ: ঠিক পুষিয়ে নেওয়া বলব না। যে ছবিগুলো আগামী দিনে করছি, সব ক’টাই অনেক আগে থেকে ঠিক ছিল। করোনার জেরে সব পিছিয়ে এখন একটু ঘাড়ে ঘাড়ে হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে অ্যামাজ়নের ওয়েব সিরিজ় ‘স্টারডাস্ট’-এর শুটিংও চলছে। ওটার জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। শারীরিক, মানসিক সব দিক থেকে। একটা অন্য রকমের লুক রয়েছে, আলাদা আলাদা বয়স দেখানো হচ্ছে। তাই এই হিন্দি সিরিজ়ের মাঝে অন্য কিছু করতেও পারছিলাম না।
প্র: বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
উ: ওর ‘উড়ান’, ‘সেক্রেড গেমস’ বা ‘একে ভার্সাস একে’ আমার খুব পছন্দের। মনিটরে বসে থাকা পরিচালক নয় বিক্রমাদিত্য। ও সবটা দেখে। কোনও ইগো নেই। একটা জলের বোতল সরিয়ে দিতে হলেও, নিজের হাতে সেটা করবে। হিমাংশু রায়ের মতো ডায়নামিক চরিত্রে অভিনয় করতে পারাটাও আমার কাছে গর্বের। ভারতীয় সিনেমায় মানুষটার বিরাট অবদান। আমার সহ-অভিনেতারাও দুর্দান্ত— অপারশক্তি খুরানা, অদিতি রাও হায়দরি...
প্র: লকডাউন কাটিয়ে প্রথম যখন ক্যামেরার মুখোমুখি হলেন, ঠিক কী রকম অনুভূতি হয়েছিল?
উ: ওই সময়ে আমি মেন্টাল ব্লকের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। হিন্দি সিরিজ়ের প্রস্তুতিতে নিজেকে যথাসম্ভব ব্যস্ত রেখেছিলাম। প্রচুর হোমওয়ার্ক করেছি। নিজের খামতিগুলো শোধরানোর চেষ্টা করতাম। অতিমারির মধ্যে প্রথমে পরমের (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) ছবি ‘অভিযান’-এর শুটিং করেছিলাম। শুটিং করতে গিয়ে বুঝতে পারছিলাম, আমি নিজের মধ্যে নেই। শুটের দ্বিতীয় দিন খানিকটা স্বাভাবিক হলাম। হিন্দি সিরিজ় করতে গিয়েও এটা হয়েছে। যত সময় এগিয়েছে, নিজেকে তত বেশি করে ফিরে পেয়েছি।
প্র: দর্শককে হলমুখী করতেই কি দেব-জিতের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন?
উ: আমি একটা ধারণা ভাঙতে চাইছিলাম। সকলে ভাবছিলেন, প্রসেনজিৎ কিছু নির্দিষ্ট লোকের সঙ্গেই কাজ করেন। দেব-জিতের প্রযোজনায় আমার ছবি করাটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। একজন সুপারস্টারের ব্যানারে আর একজন সুপারস্টার কাজ করছে, এটাই বলে দিচ্ছে টলিউডের মানসিকতা।
প্র: এর মধ্যে মুম্বইয়ে বেশ কিছু কাজের প্রস্তাব পেয়েছেন...
উ: প্রস্তাব পেয়েছি, কিন্তু আমাকে ‘না’ করতে হয়েছে। একটা কমার্শিয়াল ছবির প্রস্তাব ছিল। লন্ডনে টানা শুট করতে হত। ইচ্ছে থাকলেও পারিনি। অ্যামাজ়নের সিরিজ়ের কাজ এখনও বাকি রয়েছে। তার পর কলকাতার কমিটমেন্ট তো আছেই।
প্র: বাংলাদেশে ‘ব্যাঙ্ক ড্রাফট’ নামে একটি ছবি করছেন?
উ: কথা চলছে। আমি নিজেও বেশি কিছু জানি না।
প্র: আপনার ছেলে মিশুক এখন কলকাতাতেই থাকছে। অনেক দিন পরে ওকে কাছে পেলেন...
উ: এখন এখানেই থাকবে মিশুক। লন্ডনের স্কুল তো শেষ হয়ে গেল। এ ছাড়া সব পড়াশোনা এখন অনলাইনেই হচ্ছে। এটিকে কলকাতার অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়েছে। মিশুক ফুটবল নিয়ে প্যাশনেট। লন্ডনেও পড়াশোনার পাশপাশি খেলাধুলো করত।
প্র: আপনাদের তৃতীয় প্রজন্ম আর সিনেমায় আগ্রহী নয়?
উ: এখন দু’বছর ও ফুটবলেই পুরোপুরি মন দেবে। তবে খেলাধুলোর ক্ষেত্রে কোনও কিছুই আগে থেকে বলা যায় না। প্রচুর খাটতে হবে। ভবিষ্যতে কলকাতার মাটিতে খেলতে চাইলে, এখানে ট্রেনিং নেওয়া জরুরি। মিশুক নিজেও তা-ই চাইছে। পরে হয়তো বিদেশে গিয়ে ট্রেনিং নেবে। আমি তো দেখছি, এখনকার প্রজন্ম ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবল নিয়ে বেশি আগ্রহী। আমার ছেলে বলেই সিনেমায় আসতে হবে, এমন তো নয় (হাসি)! যে কাজটা করতে চাইছে মন দিয়ে করুক। খেলাধুলো নিয়ে যত দিন থাকতে চায়, থাকুক। খেলোয়াড়দের নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে থাকতে হয়।
প্র: ফুড-অ্যাপ নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে কী বলবেন? ভাল করতে গিয়ে কি মন্দ হল?
উ: বাস্তব একটা সমস্যা তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু বিষয়টার গুরুত্ব বুঝলেন না মানুষ। ট্রোল করা এখন ফ্যাশন হয়ে গিয়েছে। সুইগি লাক্সারি নয়, জরুরি পরিষেবা। কেউ দূরে বসে বয়স্ক মা-বাবার জন্য খাবার অর্ডার করছেন, সেটা এল না! বাড়িতে অসুস্থ রোগীর জন্য ওষুধ অর্ডার করলেন, সেটা না পেলে মানুষ আতান্তরে পড়বেন না? কমবয়সি মেয়ে রাস্তায় ক্যাবের জন্য দাঁড়িয়ে, এ দিকে ড্রাইভার ট্রিপ ক্যানসেল করে যাচ্ছে... এই সমস্যাগুলো রোজ দেখছি। অনলাইন পরিষেবাগুলোর উপরে নজরদারির কথা বলতে চেয়েছিলাম। বিষয়ের গভীরতা না বুঝেই ‘খাবার না পেয়ে, প্রসেনজিৎ প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীকে টুইট করলেন’ — বলে ট্রোলিং শুরু হয়ে গেল! এতটা বোকা নই যে, ভাবনাচিন্তা না করে কাজটা করেছি। ওঁরা আমাদের সুপ্রিমো। একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে ওঁদের টুইট করতেই পারি আমি।