যিশু সেনগুপ্ত
প্র: এই মুহূর্তে বাংলার সবচেয়ে ব্যস্ত অভিনেতা আপনি, যাঁকে কোনও না কোনও বিমানবন্দরে নিয়মিত দেখা যায়।
উ: হ্যাঁ, একটু বেশিই ট্রাভেল করতে হচ্ছে (হাসি)। কলকাতা, মুম্বই, হায়দরাবাদ... তবে এই দু’বছরের অনেকটা সময়ই তো লকডাউনে কাটল। এখন স্টার জলসার ‘সুপার সিঙ্গার সিজ়ন থ্রি’-র জন্য কলকাতা ফিরলাম। আবার ১৭ তারিখে মুম্বই চলে যাব।
প্র: অতিমারি এবং পেশাগত চাপ কী ভাবে ব্যালান্স করলেন?
উ: ভাল-মন্দ মিলিয়েই কাটছে। সকলেই অল্পস্বল্প ধাক্কা খেয়েছি। অনেকেই কাছের মানুষ হারিয়েছি। তার মধ্যেও সকলকে কাজ করে যেতে হয়েছে। গত বছর লকডাউনে ‘সুপার সিঙ্গার’-এর কিছু এপিসোড বাড়ি থেকে শুট করেছিলাম। তার পর সব খুলতে স্টুডিয়োয় গিয়েই শুট করেছি। সিনেমার কাজও করেছি। গত জুলাইয়ে লকডাউনের পরে ‘অভিযান’ প্রথম বাংলা ছবি, যেটা শুট হল। সৌমিত্র জেঠুর মতো লোকও ঝুঁকি নিয়ে কাজ শুরু করলেন। সেটে সৌমিত্র জেঠুর সঙ্গে কাটানো সময়গুলো এখন বারবার মনে পড়ে। তার পর তো হিন্দি, তেলুগু সব ছবিতেই কাজ করেছি। মুম্বইয়ে লকডাউন উঠতেই ‘অন্তিম’-এর প্যাচ ওয়ার্কের জন্য যেতে হল।
প্র: অতিমারিতে দুই মেয়েকে সামলালেন কী করে?
উ: হ্যাটস অফ টু দেম। ওরা কী করে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে, সেটা ভেবেই অবাক লাগে! আমার মনে হয়, ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশের মতো বাচ্চারাও ওয়ারিয়র। আমার ছোট মেয়েটা তো কিছুই বুঝছে না। শুধু জানে করোনাভাইরাস একটা অসুখ, বাইরে বেরোলে শরীর খারাপ হবে। দু’বছর ধরে স্কুল যেতে পারছে না। স্কুলে তো আমরা শুধু পড়াশোনা করতে যাই না, সোশ্যাল বিহেভিয়ার শেখার জায়গা ওটা। বন্ধুদের সঙ্গে মেশা, বড়দের শ্রদ্ধা করা, একসঙ্গে মিলে কিছু করা... সেগুলো থেকেই আমরা মানুষ হই। শুধু পড়াশোনা করে কেউ মানুষ হয় বলে আমার মনে হয় না। ওদের বড় হওয়ার জায়গায় একটা ফাঁক থেকে গেল।
প্র: কোভিড রোগীদের সাহায্যের কাজ কেমন চলছে?
উ: এই ২ জুলাই সেফ হোম বন্ধ করলাম। আমার নিজস্ব ফাউন্ডেশন থেকে অন্যান্য কাজ করে চলেছি। এর মধ্যে তিন-চারবার সুন্দরবনে গিয়েছি ত্রাণ নিয়ে। কলকাতায় একটা ক্লিনিক খোলার কথা চলছে, যেখানে ফ্রি মেডিক্যাল চেকআপ ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকবে।
প্র: ছোট পর্দায় আগেও সঞ্চালনা করেছেন। বৃহত্তর দর্শকের কাছে পৌঁছনোর তাগিদ না কি অন্য কিছু, কোন বিষয়টা এই মঞ্চে আপনাকে ফিরিয়ে আনে?
উ: এখানে আমি নিজেকে তুলে ধরতে পারি। এই মঞ্চে আমি যিশু সেনগুপ্ত। একটা শো হোস্ট করার আলাদা মজা আছে। দর্শকের কাছে সত্যিকারের হাসি-কান্না তুলে ধরতে হয়। বৃহত্তর দর্শকের বিষয়টা আমি কোনও দিনই বুঝিনি, শুধু অভিনয়টাই বুঝি। গান-বাজনা ভালবাসি। একটা সময়ে প্রফেশনালি ড্রামস বাজাতাম, যে কারণে মিউজ়িক্যাল শোয়ে উৎসাহ পাই। মনে হয় ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছি।
প্র: ‘সুপার সিঙ্গার সিজ়ন থ্রি’-এ নতুন কী থাকছে?
উ: ফরম্যাটে খুব বেশি বদল হয়নি। অন্য রাজ্য থেকেও প্রতিযোগী থাকবেন। কাশ্মীর থেকে একজন প্রতিযোগী পেয়েছি আমরা। বিচারকের আসনে কুমার শানু, কৌশিকী চক্রবর্তী থাকছেন। তা ছাড়া আরও একটি চমক রয়েছে।
প্র: হিন্দি, দক্ষিণে এই মুহূর্তে যে কাজগুলো করছেন, অভিনেতা হিসেবে তা কতটা সন্তুষ্টি দিচ্ছে?
উ: অনেক ধরনের চরিত্র পাচ্ছি, ভাল লাগছে কাজ করতে। তবে এই মুহূর্তে আগের চেয়ে আরও বেশি বাছাই করে কাজ করছি। আগে হয়তো এতটা বাছাই করতাম না। আমি ভাগ্যবান যে, হিন্দি-দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি থেকে আমার কাছে নানা ধরনের চরিত্র আসছে। চরিত্র ছোট না বড়, তা নিয়ে আমি কোনও দিনই ভাবিনি। ছবিতে চরিত্র কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটাই আসল। আমার সেরা কাজ যদি জিজ্ঞেস করেন, তা হলে বলব নিজের সেরাটা দেওয়া এখনও বাকি আছে। যদিও ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘আবহমান’, ‘এক যে ছিল রাজা’, ‘রাজকাহিনী’র চরিত্রগুলো আমার খুব প্রিয়।
প্র: অন্য ইন্ডাস্ট্রির কাজের জন্য বাংলা ছবির কাজ কি উপেক্ষিত হচ্ছে?
উ: তা কেন! ‘অভিযান’, ‘বাবা, বেবি ও’ করলাম। শিবুর (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে আরও একটা ছবি করব। শুধু বাংলা নয়, সব ভাষার ক্ষেত্রেই বাছাই করে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মধ্যে তিনটে হিন্দি ছবি, চারটে ওয়েব সিরিজ় ছেড়েছি।
প্র: সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবিটি না করা নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তা একটু খোলসা করবেন?
উ: কী বিতর্ক? আমি তো কিছু জানি না।
প্র: আপনি ছবিটি করতে চান না, সৃজিতের সঙ্গে কাজ করতে আপত্তি আছে— এমনটাই শোনা যাচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিতে।
উ: আমি এ রকম কথা বলিনি! যারা বলছে এটা, তারাই এর জবাব দিতে পারবে। ছবিটার জন্য আমি এখনই কোনও কথা বলতে পারব না, এটাই বলেছিলাম। অতিমারির জন্য অনেক কিছু ঘেঁটে গিয়েছে। আমার অন্যান্য ছবিগুলোর ডেট নিয়েও সমস্যা চলছে। ব্যস, এটুকুই আমি বলেছি। তার বাইরে কিছু জানি না।