ছোট থেকেই রঙিন পরিবেশে বড় হয়েছেন ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনীর মেয়ে, এষা দেওল। কিন্তু যথেষ্ট পরিচিতি থাকার পরেও বলিউডে নিজের জায়গা মজবুত করতে পারেননি এষা। এমনকি তাঁর জন্যই ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেননি বোন অহনাও।
এষা দেওল এবং করিনা কপূর ছিলেন স্কুলের সহপাঠী। স্কুলের পরে এষা পাড়ি দেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। সেখান থেকেই উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করেন তিনি। দেশে ফিরে বলিউডে কেরিয়ার শুরুর চেষ্টা করেন।
মায়ের কাছেই অভিনয়ের হাতেখড়ি এষার। তিনি কোথাও প্রথাগত প্রশিক্ষণ নেননি। নাচও শেখেন মায়ের কাছেই। তবে মেয়েদের অভিনয়ে জগতে পা রাখা মেনে নিতে পারেননি ধর্মেন্দ্র। মায়ের উৎসাহেই এষা অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
ধর্মেন্দ্রকে অন্ধকারে রেখেই বলিউডে পা রাখেন এষা। ২০০২ সালে তিনি প্রথম ছবিতে সই করেন। ছবির নাম ছিল ‘কোই মেরে দিল সে পুছে’। তাঁর বিপরীতে নায়ক ছিলেন আফতাব শিবদাসানি। কিন্তু এই ছবি বক্স অফিসে সফল হয়নি।
প্রথম থেকেই এষার উপর প্রত্যাশার চাপ ছিল। তাঁরা বাবা, মা এবং বৈমাত্রেয় দুই দাদা তারকা। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই চাপের মুখেই কেরিয়ার শুরু করেন এষা।
সে সময় অভিষেক বচ্চন, করিনা কপূর, তুষার কপূর, হৃতিক রোশন, বিবেক ওবেরয়, ফারদিন খানের মতো নিজেদের পরিবারে দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিনেতারা কেরিয়ার শুরু করছিলেন। এঁদের সঙ্গেও পাল্লা দিতে হয়েছে এষাকে।
কেরিয়ারের শুরুতে এষার পর পর ছবি ফ্লপ করতে থাকে। অন্য দিকে তাঁর বান্ধবী করিনার কেরিয়ারও প্রথম দিকে নড়বড়ে ছিল, কিন্তু ‘কভি খুশি কভি গম’ ছবির সাফল্য তাঁকে পরিচিতি দেয়।
এ রকম একটা সময়ে এষা সুযোগ পান ‘এলওসি: কার্গিল’ ছবিতে। তিনি ছাড়া এ ছবিতে অভিষেক ও করিনাও ছিলেন। সবার ভিড়ে এ ছবিতে আলাদা করে নজর কাড়তে পারেননি এষা।
২০০৪ সালে এষা সুযোগ পান ‘ধুম’ ছবিতে। এই ছবির জন্য তিনি অনেক ওজন কমিয়ে ফেলেন। এর আগে তাঁর চেনা চেহারার থেকে অনেক বেশি সাহসী অবতারে তিনি ধরা দেন এই ছবিতে। তিনি এই ছবিতে বিকিনিও পরেন। বক্স অফিসে ‘ধুম’ সুপারহিট হয়।
কেরিয়ার এগোলেও একক নায়িকা হিসেবে এষা কোনও ছবিতে ছাপ রাখতে পারছিলেন না। বহু তারকাখচিত ছবির অংশ হয়েই থাকতে হচ্ছিল। সে সময়ে তাঁর বদমেজাজ নিয়েও অনেক অভিযোগ শোনা যেত।
এক বার আর এক অভিনেত্রী অমৃতা রাওকে তিনি সবার সামনে চড় মেরেছিলেন। কারণ ‘প্যায়ারেমোহন’ ছবির প্রিমিয়ারে তাঁর সম্বন্ধে অমৃতা নাকি এমন কিছু বলেছিলেন, যা এষা মেনে নিতে পারেননি।
পরে এষা বলেন, ওই ঘটনার জন্য তাঁর বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। অন্য দিকে অমৃতা বলেন, তিনি ওই দিনের কথা আর মনে রাখতে চান না।
এমনকি, প্রাণের বন্ধু করিনার সঙ্গেও এষার সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যায়। দুই অভিন্নহৃদয় বান্ধবীর মুখ দেখা অবধি বন্ধ হয়ে যায়। কারণ দু’জনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টেক্কা দিচ্ছিলেন করিনাই। বান্ধবীর এই সাফল্য এবং তাঁর ক্রমাগত ব্যর্থতা নাকি মেনে নিতে পারেননি হেমা-কন্যা।
কোন নায়কের বিপরীতে অভিনয় করবেন তা নিয়েও দুই সুন্দরীর রেষারেষি তীব্র ছিল বলিউডে। বিবেক ওবেরয়ের সঙ্গে এষার সম্পর্ক নিয়েও সে সময় বলিউডে তীব্র গুঞ্জন ছিল।
কিন্তু সব কিছুর পরেও কেরিয়ারে সাফল্য পাচ্ছিলেন না এষা। প্রধান নায়িকা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। নিজের ভাবমূর্তি অনুযায়ী ছবি নির্বাচনেও এষার ভুল রয়ে গিয়েছিল।
২০০৮ সালে ‘হাইজ্যাক’ ছবিতে শেষ বারের মতো নায়িকা হিসেবে দেখা গিয়েছিল এষাকে। তার পর তিনি অভিনয় থেকে বড় বিরতি নেন। কারণ তাঁর কেরিয়ার মুখ থুবড়ে পড়েছিল। নায়িকা থেকে তিনি হয়ে গিয়েছিলেন সহনায়িকা।
এর পর ধর্মেন্দ্র মেয়েকে শেষ বারের মতো সুযোগ দেন। শর্ত দেন, হয় তাঁকে সফল ছবির অংশ হিসেবে প্রমাণ করে দেখাতে হবে। নয়তো বসতে হবে বিয়ের পিঁড়িতে।
উপায় না দেখে হেমা নিজেই মেয়ের জন্য একটি ছবি প্রযোজনা করেন। ছবির নাম ছিল ‘টেল মি ও খুদা’। ছবির পরিচালকও মাঝপথে চলে যান। শেষে পরিচালনার ভারও নেন হেমা নিজেই।
এই ছবিতে অভিনয় করেন বিনোদ খন্না, ঋষি কপূর, ফারুখ শেখ, দীপ্তি নাভাল, সলমন খান এবং ধর্মেন্দ্র, হেমা মালিনীও। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না।
এই ছবির সঙ্গেই শেষ হয়ে যায় এষার বলিউড পর্ব। ২০১১ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। পরের বছরই বিয়ে করেন তিনি, ছোটবেলার বন্ধু ভরত তখতানিকে।
এষার বিয়ের অনুষ্ঠানে ধর্মেন্দ্র এলেও আসেননি সানি ও ববি দেওল। যদিও তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক খুব তিক্ত ছিল না। কিন্তু শোনা যায়, ধর্মেন্দ্র প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি। তবে অভয় দেওল হাজির ছিলেন এষার বিয়েতে।
এষার কেরিয়ার দেখে তাঁর ছোট বোন অহনা আর বলিউডে পা রাখেননি। এখন এষা ব্যস্ত তাঁর স্বামী ও দুই সন্তানের সংসার নিয়ে। মাঝে মাঝে তাঁকে দেখা যায় মা ও বোনের সঙ্গে নাচের মঞ্চে। পাশাপাশি দেখা যায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।