‘পাঁচফোড়ন’ (সিজ়ন ওয়ান)
সময় অস্থির। হাতের কাছে বিকল্প অনেক। দর্শকের নজরে থাকার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছেন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের নির্মাতারা। গত দেড় বছরে সিনেমা হলের দুর্দিনে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলি হয়ে উঠেছে বিনোদনের অন্যতম স্তম্ভ। নজরে থাকার প্রতিযোগিতাও বেড়েছে তীব্র। বিদেশি সিরিজ়-সিনেমার হাত ধরে এখন দেশজ ভাষাতেও অ্যান্থলজি ছবি-সিরিজ় জায়গা করে নিচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলিতে। ভিন্ন ভিন্ন পরিচালকের তৈরি একাধিক স্বতন্ত্র কাহিনির সমষ্টি অ্যান্থলজি। ছবি বা সিরিজ়, দু’টি মাধ্যমেই তা হতে পারে। হিন্দির সঙ্গেই বাংলা এবং দক্ষিণী ভাষার অ্যান্থলজি ছবিও নজর কাড়ছে। তবে ওটিটি যে এই জঁরের প্রবর্তক, তা একেবারেই নয়। বরং বড় পর্দার রমরমার দিনেও, অ্যান্থলজি ছবির নিজস্ব আবেদন ও বাজার ছিল। রামগোপাল বর্মার ‘ডরনা মানা হ্যায়’ বাণিজ্যিক ভাবে সফল হয়েছিল। পরে ‘দশ কহানিয়া’র মতো হিন্দি ছবি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল।
হিন্দিতে এগিয়ে নেটফ্লিক্স
সিনেমা হলের হিট ফর্মুলাকেই ওটিটির শুরুর দিনে কাজে লাগাতে চেয়েছেন হিন্দি ছবির পরিচালকেরা। কর্ণ জোহর, দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়, জ়োয়া আখতার এবং অনুরাগ কাশ্যপ মিলে তৈরি করেছিলেন ‘বম্বে টকিজ়’। হিন্দি ছবির একশো বছর পূর্তি উপলক্ষে সেটি ছিল তাঁদের ট্রিবিউট। তাঁরাই নেটফ্লিক্সের জন্য পরে তৈরি করলেন ‘লাস্ট স্টোরিজ়’ (২০১৮) এবং ‘গোস্ট স্টোরিজ়’ (২০২০)। দু’টি সিরিজ়ই মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল। তবে নেটফ্লিক্সের কাছে এই ফরম্যাটের গ্রহণযোগ্যতা হয়তো তুলে ধরতে পেরেছিলেন হিন্দি ছবির প্রথম সারির চার পরিচালক। এ বছর কর্ণ জোহরের প্রযোজনা সংস্থা থেকে আরও একটি অ্যান্থলজি ছবি ‘অজীব দস্তানস’ দর্শকের কাছে পেশ করা হল। বাকি তিনটি গল্প নিয়ে সমালোচনা হলেও, নীরজ ঘেওয়ানের ‘গিলি পুচি’ কর্ণের মান বাঁচিয়েছিল।
ছবির পাশাপাশি হিন্দি অ্যান্থলজি সিরিজ়েও বিনিয়োগ করতে উৎসাহী নেটফ্লিক্স। তিনজন পরিচালকের নির্দেশনায় তৈরি ‘রে’-র নিয়ে বিতর্ক হলেও, দর্শক সিরিজ়টি দেখেছেন। অন্য প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়া ‘জ়িন্দগি ইন শর্টস’ও এখন স্ট্রিমিং হচ্ছে নেটফ্লিক্সে।
অতিমারি শুধু কঠিন বাস্তব নয়, বরং নতুন সৃষ্টির এক গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক। অ্যামাজ়ন প্রাইমের অ্যান্থলজি ছবি ‘আনপজ়ড’-এর প্রতিটি গল্প অতিমারি ও তা থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ঘিরে। এই সিরিজ়টি ভাল প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। সংখ্যায় বেশি না হলেও, অ্যামাজন প্রাইমও ট্রেন্ডে শামিল।
‘অজীব দস্তানস’
আঞ্চলিক ভাষায় অ্যান্থলজি
বাংলা খানিক পিছিয়ে। তবে একেবারে যে দূরে, তা-ও নয়। এসভিএফ ফিল্মসের ‘হইচই’ প্ল্যাটফর্মে ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছিল অ্যান্থলজি সিরিজ় ‘পাঁচফোড়ন’ (২০১৯)। জয়া আহসান, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ঋদ্ধি সেন-সহ একাধিক শিল্পী অভিনয় করেছিলেন সিরিজ়ে। এটির দ্বিতীয় সিজ়নও এসেছে। এ বছর এসেছে সিরিজ় ‘ব্রেকআপ স্টোরি’। সংস্থার অন্যতম কর্ণধার মহেন্দ্র সোনি ট্রেন্ডটির জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘অ্যান্থলজি একটি পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ। দু’ঘণ্টা সময়সীমার মধ্যে এটিতে একটি ছবির চেয়ে অনেক বেশি খোরাক থাকে দর্শকের জন্য। ওটিটিতে দর্শক বিঞ্জ ওয়াচ করেন। এই ধরনের গল্পে দর্শক বৈচিত্রের স্বাদ পান। এই ফরম্যাটে আর্ট, এক্সপেরিমেন্টাল বা কমার্শিয়াল ছবি বানানো যায়।’’ জ়ি ফাইভে এসেছিল সিরিজ় ‘ভালবাসার শহর’। বাংলার তিন পরিচালক অর্জুন দত্ত, শিলাদিত্য মৌলিক এবং ইন্দ্রাশীস আচার্য হিন্দি অ্যান্থলজি ছবি ‘থ্রি কোর্স মিল’-এর শুটিং সদ্য শেষ করেছেন।
দক্ষিণী ভাষাতেও একাধিক অ্যান্থলজি ছবি নজর কেড়েছে। প্রকাশ রাজ এবং কল্কি কেঁকলা অভিনীত তামিল ‘পাভা কাড়িগাল’ তার মধ্যে অন্যতম। ‘ভিসারানাই’, ‘ইলামাই ইধো ইধো’-সহ একগুচ্ছ ছবি রয়েছে।
‘মডার্ন লাভ’
সর্বকালীন ইংরেজি
টেলিভিশনের লিমিটেড সিরিজ় ফরম্যাটে অ্যান্থলজি বরাবর জনপ্রিয় ছিল। তার অনেকগুলিই এখন ওটিটিতে স্ট্রিমিং হয়। তবে অ্যামাজ়ন প্রাইমের ‘মডার্ন লাভ’ সিরিজ়টি সর্বস্তরে প্রশংসিত। এটির দ্বিতীয় সিজ়নও আসছে। এ ছাড়া পঁাচটি সিজ়ন ধরে চলা ‘ব্ল্যাক মিরর’-এর মতো আইকনিক সিরিজ় তো রয়েছেই। ডিজ়নি প্লাস হটস্টারের ‘রুম ১০৪’, ‘লঞ্চপ্যাড’-সহ নেটফ্লিক্স-অ্যামাজ়নে একাধিক ছবি-সিরিজ় রয়েছে।
অ্যান্থলজি ছবি-সিরিজ় যদি মান না ধরে রাখতে পারে, তবে দর্শক হারাবে প্ল্যাটফর্ম।