রূপঙ্কর, মনোময়, ইমন, রাঘব
সারেগামাপা- অনুষ্ঠানের সেরা নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে বই কমছে না। জয় সরকার ঘুষ খেয়ে অযোগ্যকে যোগ্যতার শিরোপা দিয়েছেন। অর্কদীপ মিশ্র ‘সারেগামাপা সেরা’ হওয়ার যোগ্যই নন। রবিবার চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই নেটমাধ্যম তোলপাড় এই অভিযোগে। সোমবার প্রতিবাদ জানিয়ে সবার প্রথমে মুখ খুলেছিলেন শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র। তিনি জয় সরকারের স্ত্রী-ও। তাঁর মতোই প্রতিবাদী ইমন চক্রবর্তীও। বিতর্ক বাড়ায় মঙ্গলবার সরাসরি নিজের সামাজিক পাতায় সমস্ত অভিযোগের জবাব দেন জয় স্বয়ং। ওই দিন দুপুরেই নেটমাধ্যমে জয়ের সমর্থনে সরব আরেক ‘অতিথি বিচারক’ রূপঙ্কর বাগচী। যাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, ‘‘ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে নীহারিকা, অনুষ্কার বদলে অর্কদীপকে সেরা বাছা হয়েছে! শ্রীকান্ত আচার্য, জয় সরকার এমন করতেই পারেন না।’’
শুরুতেই সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রূপঙ্কর। তার পরেই কষাঘাত, ‘গরম, অতিমারি, নির্বাচন...সব মিলিয়ে অসহ্য অবস্থা। তার মধ্যেই অর্কদীপ মিশ্রের প্রথম হওয়া, জয় সরকারের ঘুষ খাওয়া নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে! আপনারা পারেনও।’ রূপঙ্কর যদিও এই বিতর্কের দুটো দিক খুঁজে পেয়েছেন।
জাতীয় পুরস্কারজয়ী শিল্পীর মতে, এর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক--- দু’টি দিকই আছে। যেমন? রূপঙ্কর বলেছেন, এখনও বাংলা গানের প্রতি আলাদা দরদ রয়েছে বাঙালির। এই বিতর্ক তারই সাক্ষী। পাশাপাশি তাঁর মতে, সমান আকর্ষণীয় জি বাংলার গানের প্রতিযোগিতাও। তাই শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও সেটি এখনও সবার চর্চার বিষয়। স্তুতির পরেই নেটাগরিক, দর্শক-শ্রোতার চূড়ান্ত নিন্দা করেছেন গায়ক, ‘আপনারা সমালোচনা করতেই পারেন। তা বলে অর্কদীপের মা-বাবা তুলে কটু কথা বলবেন! এত বিকৃত মানসিকতা?’ অর্কদীপের সমর্থনে তিনি আরও জানান, প্রতিযোগী অর্কদীপের পাশাপাশি ‘ব্যক্তি’ অর্কদীপকেও তিনি চেনেন। এর আগে, রূপঙ্করের ‘কৃষ্টি পটুয়া’ নাট্য দলে অর্কদীপ ‘জেহাদ’ নাটকে গান এবং অভিনয় করেছেন। শিল্পীর দাবি, ‘অর্কদীপ গানপাগল। গানের বাইরে অন্য কোনও কথা বলতেই পারে না।’ শুধুই লোকগান নয়, অন্য ধারা, অন্য ভাষার গান নিয়েও সমান জ্ঞানী অর্কদীপ, এ কথাও জানাতে ভোলেননি তিনি।
রূপঙ্কর জানান, শুধু অর্কদীপ নন নীহারিকাও তাঁর পূর্ব পরিচিত। একাধিক গানের প্রতিযোগিতায় ছোট থেকে অংশ নিয়েছেন এই শিল্পী। এই সূত্রে এঁদের তিনিও ভালবাসেন, পছন্দ করেন।
তার পরেই তাঁর তোপ বিচারকদের যোগ্যতা, বিচারপদ্ধতির সমালোচনা এবং ‘ঘুষ নেওয়া’র মতো মারাত্মক অভিযোগের বিরুদ্ধে। শ্রীকান্ত আচার্য, জয় সরকারকে বহু দিন ধরে চেনেন রূপঙ্কর। তাই এঁরা ব্যক্তিগত রাগ বা অপছন্দের কারণে যোগ্যদের সরিয়ে অন্য কারওর হাতে ‘সম্মান’ তুলে দেবেন এটা যেমন ভাবতে পারছেন না তেমনি অর্কদীপকেও কোনও ভাবেই ‘অযোগ্য’ মনে করছেন না গায়ক। একই সঙ্গে তাঁর সমর্থন বাকি ‘গুরু’দের প্রতিও। ‘মনোময় ভট্টাচার্য, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, ইমন চক্রবর্তীকেও ছেড়ে কথা বলছেন না কেউ। এটা ঠিক নয়।’
ইমন চক্রবর্তী নিজের দলকে জেতাতে অর্থ খরচ করেছেন, এমন মন্তব্যও উঠে এসেছে বিতর্কে। রূপঙ্করের ব্যঙ্গ, আজকের দিনে কেউ অর্থ খরচ করবেন দল জেতাতে! এটা বোধহয় বিশ্বাসযোগ্য নয়। নিজের বক্তব্যে অনড় থাকার পাশাপাশি শিল্পীর আফসোস, ‘‘প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে অর্কদীপ দেখছি বেজায় ঝামেলায় জড়িয়ে গেল! কোথায় আনন্দ করে ঘুরবে, উদযাপন করবে মা-বাবা-বন্ধুদের সঙ্গে! বদলে প্রতি মুহূর্তে কুঁকড়ে থাকতে হচ্ছে।’’
লাইভে এসে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘গুরু’ ইমন চক্রবর্তীও। তাঁর মতে, ‘নীহারিকা প্রথম হলেই যে অভিযোগ থেমে যেত, তা নয়। তখন বলা হত, অর্কদীপ কেন প্রথম হল না? ও তো বাংলা গান গেয়েছিল? তা হলে বাংলা গান শোনানো হচ্ছে না বাংলা চ্যানেলে! আপনাদের এই অভিযোগ চলতেই থাকবে’। তার পরেই ইমনের প্রশ্ন, ‘আপনাদের সব বিষয়েই এত বক্তব্য কেন?’ জাতীয় পুরস্কারজয়ী শিল্পীর পরামর্শ, সবাই অনুষ্ঠান দেখছেন। ভালওবাসছেন। তা হলে মন থেকে প্রতিযোগীদের আশীর্বাদ করা উচিত সবার। তাঁর দাবি, কাউকে ভাল না বলতে পারলে খারাপ বলার অধিকারও নেই।
‘সারেগামাপা’ প্রতিযোগিতার আর এক ‘গুরু’ মনোময় ভট্টাচার্য আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানিয়েছেন, ‘‘গুরু হিসেবে আমি এবং বাকি যাঁরা রিয়েলিটি শো-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁরা কিন্তু বিচারকদের কোনও ভাবেই প্রভাবিত করেননি। বরং, তাঁদের মেনে নিতে হয়েছে বিচারকদের মতামত। গুরুরা প্রতিযোগীদের তৈরি করে দিয়েছেন মাত্র। শো-এ বিচারকদের মতামতই চূড়ান্ত ছিল।’’ বিচারকদের মতামত নিয়ে গুরুদের মধ্যে কখনও দ্বিমত তৈরি হয়েছে? মনোময় স্বীকার করেছেন, ‘‘দ্বিমত তৈরি হতেই পারে। আমি যেমন মনে করি, ‘যুগ্ম সেরা’ বাছা যেতেই পারত। সেই অনুযায়ী অর্কদীপের সঙ্গে নীহারিকা বা অনুষ্কাও প্রথম হতে পারত।’’ তবে বিচার অস্বচ্ছ ছিল, এই অপবাদ মানতে নারাজ তিনিও।
রাঘব চট্টোপাধ্যায় আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানান, গুরু হিসেবে এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলতে চান না। তিনি বললেন, " সেরা নির্বাচন মুম্বইয়ের বিচারকদের হাতে ছিল। আমাদের কিছু করার ছিল না।"