‘প্যায়ার কিয়া জা', 'বম্বে টকি', 'রোটি কপড়া অউর মকান'-এরকম একাধিক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন শশী কপূর আমাদের। স্টার কিডের বাইরেও যে তাঁর স্বতন্ত্র একটা পরিচয় রয়েছে, তা অভিনয় দিয়েই প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি।
তাঁর কৃতিত্বের জন্য প্রচুর অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন তিনি। দাদাসাহেব ফালকে, পদ্মভূষণ, দু'বার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১০ সালে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন শশী।
তিনি অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক এবং সহ পরিচালকও ছিলেন। সব মিলিয়ে ১৭৫টিরও বেশি ছবিতে কাজ করেছেন তিনি।
শশী কপূর ছিলেন অত্যন্ত খোলামেলা মনের মানুষ। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, তাঁর শৈশবের কোনও কিছু নিয়েই রাখঢাক করেননি। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মায়ের কাছে তিনি ছিলেন অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান।
তাই জন্মের আগেই তাঁকে নষ্ট করে দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিলেন মা। এমনকি, শশী নিজেও ছেলেবেলায় একবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে শশী নিজেই জানিয়েছিলেন এ কথা।
১৯৯৫ সালে ওই সাক্ষাৎকারে শশী জানান, মা রামসারনি মেহরা কপূর তাঁকে ‘ফ্লাকি’ বলে ডাকতেন। কারণ, শশীর জন্ম তাঁর মা একেবারেই মেনে নিতে পারেননি। শশীর আগে তাঁর আরও চার ভাই ছিলেন। রাজ কপূর এবং শাম্মি কপূরের মাঝের দু'জন মারা যান। তারপর তাঁদের একটা বোন হয়।
ব্যস, আর সন্তান নিতে চাননি তাঁর বাবা-মা। কিন্তু তার পাঁচ বছর পরই অযাচিতভাবে শশী কপূর চলে আসেন তাঁর মায়ের গর্ভে। যা একেবারেই মেনে নিতে পারেননি মা। তখন চিকিত্সা বিজ্ঞানে গর্ভপাত অতটা প্রচলিত ছিল না। তাই কখনও সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে বা সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পা পিছলে পড়ে বা কুইনাইন খেয়ে ভ্রূণ নষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শশী জন্ম নেন।
এমনকি ছেলেবেলায় শশী কপূর একবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন। ওই সাক্ষাৎকারে সে বিষয়েও বিস্তারিত জানান তিনি।
ম্যাট্রিকে খুব খারাপ ফল করেছিলেন শশী কপূর। সেটা নিয়ে ভীষণ অবসাদেও ছিলেন। ছুটি কাটাতে তাঁকে মহারাষ্ট্রের মাথেরানে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর নাসিকের দেওলালির একটি বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করা হয়। শাম্মি কপূর তাঁকে ওই স্কুলে ছেড়ে আসেন।
কিন্তু ওই স্কুলে একেবারেই মন বসছিল না শশীর। তিনি আরও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছিলেন। তখন বাড়িতে একটা সুইসাইড নোট পাঠিয়েছিলেন।
তাতে লেখা ছিল, "খাবার একেবারেই ভাল নয়। আমার এখানে ভাল লাগছে না। তুমি যদি আমাকে এখান থেকে নিয়ে না যাও, আমি আত্মহত্যা করব।" এর পর মায়ের নির্দেশে শাম্মি কপূর ওই বোর্ডিং স্কুল থেকে তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন।
১৯৫৮ সালে মালয়েশিয়ায় একটি শো করতে গিয়েছিলেন শশী ও তাঁর স্ত্রী জেনিফার। কিন্তু কোনও কারণে সেই শো বাতিল হয়ে যায়। শো করে ফিরে তাঁরা বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টাকার অভাবে ফিরতে পারছিলেন না। পরে রাজ কপূর টিকিট কেটে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। মুম্বই ফিরে বিয়ে করেছিলেন শশী ও জেনিফার। তাঁদের তিন সন্তান— কুণাল, কর্ণ এবং সঞ্জনা কপূর।
মাঝে বেশ অর্থকষ্টে কাটিয়েছিলেন তিনি। একটি সাক্ষাত্কারে শশী কপূরের বড় ছেলে কুণাল এক বার জানিয়েছিলেন, ১৯৬০-এর শেষ দিকে শশী কপূরের হাতে কোনও কাজ ছিল না। টাকার অভাবে শশী তাঁর প্রিয় স্পোর্টস কারটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। স্ত্রী জেনিফারও অর্থের অভাবে বাড়ির জিনিস বিক্রি করেছিলেন।
স্ত্রী জেনিফার কেন্ডেল কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫০ বছর বয়সে মারা যান। সেই সময় শশী কপূরের বয়স ছিল ৪৬ বছর। দ্বিতীয় বার বিয়ে করেননি শশী। স্ত্রীর মৃত্যুর পর খুবই ভেঙে পড়েন তিনি।
২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর রুপোলি পর্দার সেই অমলিন হাসি, মায়াবি চোখ আর সুদর্শন চেহারার শশী কপূরকে শেষ বারের জন্য বিদায় জানায় চলচ্চিত্র জগৎ। শশীর প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গেই কপূর সাম্রাজ্যের একটি প্রজন্মের অবসান হয়ে যায়।