শিবপ্রসাদ, মধুমিতা, সৌরভ, ত্রিধা, মৈনাক, রুদ্রনীলের কাছে ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’-এর মানে কী?
‘বাঁধনে বাঁধিব তোমায় আঁখিতে বাঁধিব’... তার থেকে আচমকাই যদি একটি রাত মধুরাত হয়ে ওঠে?
যে ভাবে দেখা গিয়েছিল শক্তি সামন্তের ‘আরাধনা’ ছবিতে। ঝড়জলের এক রাতে শর্মিলা ঠাকুরকে দেখে গলে গিয়েছিলেন রাজেশ খন্না। মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিলেন। একুশ শতক যাকে ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ বলে। কিছুটা ঝোঁকের বশে, কিছুটা যুগলের সম্মতিতে, একটি রাতের ভালবাসা যদি শরীরী আশ্লেষে ডুবেই যায়? কী হয় তাতে?
বলিউডে বাস্তবেও এই নিয়ে ছুঁৎমার্গ নেই। রণবীর সিংহের যেমন মাত্র ১২ বছরে এই অভিজ্ঞতা। রণবীর কপূরকে একটা সময় দীপিকা পাড়ুকোন বলেছিলেন, অভিনেতা যেন সঙ্গে সব সময়ে কন্ডোম রাখেন! আর টলিউড? এক রাতের প্রেমনিশির উদাহরণ আছে তার? কোন কোন তারকা এই পথে হাঁটতে আগ্রহী? খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।
টম ক্রুজকে দেখে মনে হয়েছিল...ইসস যদি সামনাসামনি পেতাম!
প্রেম দিবস আর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় মু্দ্রার এ পিঠ-ও পিঠ। সদ্য মুক্তি পেয়েছে উইনডোজ প্রোডাকশনের ‘বাবা বেবি ও...’। যে ছবি অন্য ধারার প্রেমের কথা বলেছে। প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতা নিজেও মনে মনে যথেষ্ট রোম্যান্টিক। ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ নিয়ে কোনও দিন ভেবেছেন? শিবপ্রসাদের স্পষ্ট জবাব, ‘‘আমি এই পথে বিশ্বাসই করি না। মন না ছুঁয়ে আগে শরীর ছোঁব? ওই ভাবনায় আমি নেই। আমার কাছে আগে জায়গা করে নেয় যে কোনও মানুষের মন। তার থেকে ভালবাসা। তার পরে তো অন্য কিছু ভাবব!’’ একুশ শতকের কিন্তু শরীর ছোঁয়া নিয়ে কোনও ছুঁৎমার্গ নেই। প্রেম কি তা হলে আবছা? মানতে নারাজ প্রযোজক। তিনি মনে করে, আগে মন ছুঁতে চাওয়া প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে থেকে যাবে। ছেলেবেলা, অপরিণত মন অনেক সময়েই প্রিয় তারকার সঙ্গেও রাত কাটাতে সাহসী হয়ে ওঠে মনে মনে...। শিবপ্রসাদ অবশেষে অকপট, ‘‘রাত কাটানোর ইচ্ছে কোনও দিন জাগেনি। তবে ইনফ্যাচুয়েশন তো আজও রয়ে গিয়েছে। হলিউড অভিনেতা টম ক্রুজের প্রতি। শাহরুখ খানের প্রতি। ছেলেবেলায় টম ক্রুজ অভিনীত ‘ককটেল’ দেখেছি স্কুল পালিয়ে। মনে হয়েছিল, সারা সপ্তাহ শুধু ওঁকেই দেখি। সমুদ্রতটে, খোলা আকাশের নীচে টমের ঊর্ধ্বাঙ্গ উন্মুক্ত। দেখে পুরো পাগল হয়ে গিয়েছিলাম!’’
সম্পর্ক ভাঙার চেয়ে ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড হলে ক্ষতি কী?
ত্রিধা চৌধুরী। যাঁর বিকিনি পরা ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট হলেই আগুন! পোশাক থেকে ভঙ্গিমা— কিচ্ছুতে ছুঁৎমার্গ নেই নায়িকার। প্রেমদিবসের আগে তিনি দুবাইয়ে। বুর্জ খলিফার শহরে। সেখানে কি ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ ঘটবে? ত্রিধা ভাঙেননি। তবে এক রাতের প্রেমকে সমর্থন জানিয়েছেন খোলা মনে। তাঁর কথায়, ‘‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড নতুন কিছু নয়। আগেও ছিল। এখন অনেকটাই সহজ হয়েছে।’’ তাঁর আরও যুক্তি, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এক রাতের সঙ্গী বেছে নেওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে। বিয়ে বা সম্পর্কে যাওয়ার আগে যদি কেউ এই পন্থা বেছে নেন, অসুবিধে কোথায়? পাশাপাশি এ-ও মেনে নিয়েছেন, এই নিশিযাপনে প্রেম থাকে না। শুধুই কামনায় মাখামাখি। তবে যাঁরা এই পথে হেঁটেছেন, হাঁটছেন বা হাঁটবেন, তাঁদের ছোট করে দেখবেন না তিনি। মডেল-অভিনেত্রীর মতে, এমন রাত আসতেই পারে। তার জন্য কাউকে সমালোচনার কারণ নেই। তার পরেই বিস্ফোরক, ‘‘সম্পর্ক, বিচ্ছেদ, তার থেকে বেরিয়ে আসার মতো অনেক সমস্যার থেকে তো এটা ভাল, তাই না?’’
পরিচিতকে জানার বদলে অচেনার খোঁজ বেশি আকর্ষণীয়...
রুদ্রনীল ঘোষ নাকি প্রেমে স্নাতকোত্তর! গুঞ্জন বলছে, প্রচুর অভিজ্ঞতাও আছে। তাঁর অন্দরমহলও যে কোনও মেয়েকে আকৃষ্ট করবে। পুরনো দিনের পালঙ্কে ধবধপে বিছানা! বারান্দায় ফুলের জলসা। অভিনেতা-রাজনীতিবিদের এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে? প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেলেছেন তিনি। দাবি, ‘‘প্রেম হয়েছে। কিন্তু এক রাতের প্রেম তো হয়নি! আসলে আমি চাইনি বলেই হয়নি হয়তো।’’ কিন্তু এই প্রজন্ম যে অনায়াসে চেয়ে ফেলছে! সঙ্গে সঙ্গে যুক্তি, ‘‘আমি তো এই প্রজন্মের নই। তাই শুধুই শরীরী আকর্ষণকে প্রেমের তকমায় মুড়ে উপভোগের বাসর সাজাতে রাজি নই!’’ মদন শর কখন, কাকে বিদ্ধ করে, কেই বা জানে! সে ভাবেই ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ যদি ডাক দিয়ে যায়? রুদ্রনীল অকপট, ‘‘সাড়া দেব। তবে এমন কাউকে চাইব, যিনি সব বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। রাতের অনেকটাই কেটে যাবে কথা বলতে বলতে!’’ শুধু কথা? আর কিচ্ছু না! অভিনেতার সহাস্য দাবি, নিশিযাপনে যা হয়, সবটাই হবে। এবং সে ক্ষেত্রে তিনি অপরিচিতাকে পেতে পছন্দ করবেন। অভিনেতার ব্যাখ্যা, পরিচিতকে ফের আবিষ্কার করার চাইতে অচেনাকে পরতে পরতে চোখের সামনে দেখার উত্তেজনাই আলাদা! এবং নিজের পালঙ্কে নয়, প্রেয়সীকে নিয়ে যেতে চান এমন কোথাও যেখানে মোবাইল টাওয়ার থাকবে না। ‘‘কিছুতেই চাইব না, পরস্পরকে আবিষ্কারের মুহূর্তে বাদ সাধুক ফোনের ঘণ্টি!’’, সপাট রুদ্রনীল।
কারওর সঙ্গে প্রাতরাশ মানেই বিয়ে! নিশিযাপন করলে তো...
‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ কথাটি শুনে ঠিক এই প্রতিক্রিয়া মধুমিতা সরকারের। ‘‘কারও সঙ্গে প্রাতরাশ করছি মানেই তাঁর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয় সংবাদমাধ্যম। এক রাত কাটানোর খবর পেলে তো গায়ে অন্য তকমা দিয়ে দেবে!’’, বক্তব্য তাঁর। মধুমিতার আরও স্পষ্ট কথা, নিশিযাপন নিয়ে তাঁর নিজেরই যথেষ্ট ছুঁৎমার্গ আছে। ভালবাসার বদলে নিছক শারীরিক সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী নন তিনি। এমনকি তাঁর বন্ধু-বান্ধবরাও নাকি এই ধরনের কোনও আলোচনা করেননি। ফলে, বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেই তাঁর যথেষ্ট অস্বস্তি।
আমার ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ বহু রাত হয়ে গিয়েছে...
ইদানীং, প্রেম নিয়ে শহুরে চর্চায় ত্রয়ীর নাম এগিয়ে। অনিন্দিতা বসু-সৌরভ দাস-মধুমিতা সরকার। সৌরভ দাস মহিলা মহলে দিব্যি জনপ্রিয়। নারী চরিত্র বেজায় জটিল হলেও নাকি বেশ সামলে নেন। তাঁর জীবনে এমন ঘটেছে কখনও? সৌরভ বলেছেন, ‘‘কোনও সুযোগই নেই। কারণ, এক রাত কাটানোর পরেই আমি সেই নারীর প্রেমে পড়ে যাব! ওঁর সঙ্গে তখন আর এক রাত নয় বহু রাত কাটিয়ে ফেলব। এ রকমই আমার হয়েছে।’’ অন্যদের মতো তাঁরও কি বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে? সৌরভের মতে, তিনি প্রচণ্ড অনুভূতিপ্রবণ। তাই প্রেমে পড়ে যান। সেখানে স্থায়ীত্বের বিষয়টি চলে আসে। উদাহরণ হিসেবে বলেন, ‘‘আমি দীপিকা পাড়ুকোনকে পাগলের মতো চাই। তা বলে এক রাতের জন্য নয়। চাইলে জীবনভর চাইব। এটাই আমার নীতি।’’ তাঁর যুক্তি, যাঁদের অনুভূতি কম, শরীর ঘিরে অনেক জিজ্ঞাসা, তাঁরা হয়তো পারবেন এক রাতের জন্য কাউকে বেছে নিতে।
কাজের খাতিরে ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ করতে পারি
সম্পর্কের গল্পে টেক্কা দেন পরিচালক মৈনাক ভৌমিক। এমন সম্পর্কও তো আছে, ঘটনাচক্রে হয়তো যার আয়ু একটিমাত্র রাত। এমন সম্পর্ক দেখেছেন? ‘চিনি’র পরিচালকের কথায়, ‘‘জানি, আধুনিক প্রজন্মের কাছে বিষয়টি বেশ জনপ্রিয়। তবু বলব, দিনের শেষে বা একটি রাতের পরে মানুষ সম্পর্কই খুঁজবে। এটা যেন এক ধরনের ছেলেমানুষি। সেই ছেলেমানুষিতে আমি নেই। যতই তাতে কষ্ট থাকুক, আমি সম্পর্কেই বিশ্বাসী।’’ পাশাপাশি মৈনাকের অভিজ্ঞতা বলছে, একটি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার পরে মানুষ একটা তাৎক্ষণিক আশ্রয় খোঁজে। কিংবা নিজের ব্যথা মুছতে গিয়ে নিজেকে আরও ধ্বংস করতে চায়। তখনও এই ধরনের পন্থা অবলম্বন করে কেউ কেউ। এক রাতের জন্য নিজেকে কারও কাছে বিলিয়ে দেওয়া। কমবয়সে সেটাই মজার চোখে দেখা হয়। বেশ এক রাতের সম্পর্ক হল। আবার ফুরিয়েও গেল! শারীরিক প্রেমে গভীরতা খুঁজতে যাওয়া বা চাওয়া বৃথা। মৈনাক কোনও দিন এই পথে হাঁটবেন? সাফ জবাব, ‘‘ইচ্ছেই নেই কোনও! আমি কাজের খাতিরে ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ করতে পারি। নিছক সঙ্গলোভে নয়।’’