কোনও দিন হয়েতা খোঁপাও করেত পারি

ফ্যাশনদুরস্ত হওয়ার ফান্ডা দিলেন টলিউড স্টাইল আইকন জিৎ। মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ততখন বয়স ১৬ কী ১৭। জিৎ টালিগঞ্জের ‘বস’ হওয়ার স্বপ্ন সবেমাত্র দেখতে শুরু করেছেন। কিন্তু অভিনয় করেননি একটাও ছবিতে। একটা বার্থডে পার্টির নেমন্তন্নে যেতে হবে বলে ড্রেস কিনতে গিয়েছেন নিউ মার্কেটে। সেই পোশাক পরে পার্টিতে গিয়েছেন। পর দিন হঠাৎ খেয়াল হল আবার একটা পার্টি রয়েছে। কিন্তু পোশাক? ওয়ার্ড্রোবে নতুন কিছু তো আর নেই! সোজা চলে গেলেন নিউ মার্কেটের সেই দোকানে। বললেন যে পোশাকটা নিয়ে গিয়েছিলেন, সেটা পছন্দ হয়নি। তাই পাল্টে অন্য পোশাক নেবেন। “পোশাক পাল্টে অন্য একটা নিলাম।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৪ ০০:০৫
Share:

নতুন ছবি ‘গেম’য়ে জিৎ। নতুন স্টাইল

তখন বয়স ১৬ কী ১৭। জিৎ টালিগঞ্জের ‘বস’ হওয়ার স্বপ্ন সবেমাত্র দেখতে শুরু করেছেন। কিন্তু অভিনয় করেননি একটাও ছবিতে। একটা বার্থডে পার্টির নেমন্তন্নে যেতে হবে বলে ড্রেস কিনতে গিয়েছেন নিউ মার্কেটে। সেই পোশাক পরে পার্টিতে গিয়েছেন। পর দিন হঠাৎ খেয়াল হল আবার একটা পার্টি রয়েছে। কিন্তু পোশাক? ওয়ার্ড্রোবে নতুন কিছু তো আর নেই! সোজা চলে গেলেন নিউ মার্কেটের সেই দোকানে। বললেন যে পোশাকটা নিয়ে গিয়েছিলেন, সেটা পছন্দ হয়নি। তাই পাল্টে অন্য পোশাক নেবেন। “পোশাক পাল্টে অন্য একটা নিলাম। সেটা পরেই গেলাম পার্টিতে। তখন পয়সা কোথায় যে রোজ রোজ নতুন পোশাক পরে যাব! অগত্যা...” হেসে বলেন জিৎ।

Advertisement

কাট টু ২০১৪। ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম ফ্যাশন সচেতন নায়ক তিনি। এক্সপেরিমেন্ট করতে ভয় পান না। রিস্টলেটস, নেকপিসেস, কানের দুল— এ সবের রীতিমতো ভাণ্ডার রয়েছে জিতের ওয়ার্ড্রোবে। এই সব অ্যাকসেসরি নিয়ে এতটাই তাঁর ইন্টারেস্ট যে ছবির শু্যটিংয়ের সময় নিজের ওয়ার্ড্রোব থেকেও কিছু জিনিস নিয়ে চলে যান। স্টাইলিস্ট যা দিচ্ছেন, তার সঙ্গে ম্যাচ করে প্রয়োজন মতো পরে নেন ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা অ্যাকসেসরিগুলো। ‘গেম’ ছবির একটা গানে জামার বোতামের মতো দেখতে একটা দুলও পরেছেন উনি। আর ঘড়ি? বড় ডায়ালের ঘড়ি সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন। তবে বড় বলতে হাতে টেবল ক্লক পরে বেড়ান না।

আনন্দplus -এর পাঠকদের জিৎ শোনালেন তাঁর ফ্যাশনদুরস্ত হওয়ার গল্প।

Advertisement

পোশাক

কে বলেছে শুধুমাত্র মেয়েদের জন্যই তোলা থাকবে গোলাপি আর বেগুনি রংগুলো? জিৎ এ কথা মানতে নারাজ। ‘গেম’য়ে ‘বাম চিকি’ গানে শুভশ্রীর পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে সে রঙের জামা পরতেও জিতের কোনও আপত্তি ছিল না। “সবটাই অ্যাটিটিউডের ব্যাপার। রং পছন্দ হলে সেটা পরতে ঘাবড়াই না। শুধু মনে রাখি আমি যেন সেই পোশাকটা ক্যারি করতে পারি,” বললেন জিৎ। শুধু রঙিন নয়, সাদা পোশাক নিয়েও জিৎ এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করেন। এক সময় জিতেন্দ্র আর মিঠুন চক্রবর্তীকে দেখা যেত সাদা জামা, সাদা প্যান্ট আর সাদা জুতো পরতে। তবে তখনকার সাজপোশাক আর স্টাইলের সঙ্গে ২০১৪-র স্টাইলের অনেক পার্থক্য রয়েছে। মাঝেমধ্যে সাদার একঘেয়েমি ব্যাপারটা ভেঙে দেওয়ার জন্য জিতের পছন্দ ভেস্টে হাল্কা হলুদের ছোঁয়া। অথবা জামার কলারে।

করবেন না যেন

যদি ঠিক করেন এই গরমে সাদা জামা সাদা প্যান্ট পরবেন, তা হলে দু’টো পোশাকের ফেব্রিকটা অবশ্যই আলাদা বাছবেন। না হলে কিন্তু ফ্যাশন স্ট্রিটে আপনি একদম বেমানান। “দুবাইয়ের মরুভূমিতে ‘অল-হোয়াইট’ পোশাকে শু্যটিং করেছি। পরেছি সাদা লিনেনের ট্রাউজার। সঙ্গের শার্টটা কিন্তু লিনেনের ছিল না। পরেছিলাম মলমলের সাদা জামা,” বলছেন জিৎ।

জুতো

কোন পুরুষ কী ধরনের জুতো পরেন, তা দেখে নাকি বোঝা যায় ছোটখাটো জিনিসের প্রতি তাঁর নজর কতটা। কোনও পুরুষকে দেখলেন পার্টিতে একটা দারুণ স্যুট পরে ঢুকতে। কিন্তু পায়ে এক জোড়া জবরজং লেস আপ বুট জুতো। এক নজরেই আপনি বুঝবেন তিনি আর যাই হন, ‘ডিটেল ম্যান’ নন। কী ধরনের জুতো পরবেন তা নিয়ে জিৎ বরাবরই বেশি সচেতন। “আমি ঠিক জানি কী শেপ-য়ের জুতো পরলে আমাকে মানাবে ভাল। আমার পায়ের গোড়ালির জায়গাটা বেশ চওড়া। তাই আমি কোনও দিন জিপ ছাড়া লম্বা বুট পরতে পারি না,” জিৎ বলেন। অনেককেই দেখা যায় বেশ টিকোলো বুট পরতে। “কিন্তু আমার ওই ছুঁচলো বুট একদম পছন্দ নয়। আমার ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হল এমন একটা শেপ-এর জুতো, যেগুলোর সামনের দিকটা একটু স্ক্যোয়ারিশ। তাই বলে খুব চওড়া বা একদম স্ট্রেট কাট দেওয়া জুতো আমার পছন্দ নয়। ইনফর্মাল জায়গায় আমি ছোট অ্যাঙ্কল লেন্থ মোজা পরি। ফর্মাল জায়গায় মোজা আর জুতো ম্যাচ করে পরি। গরমে পছন্দ স্যান্ডালস আর লোফার্স,” জানান তিনি।

করবেন না যেন

ক্যাজুয়াল ড্রেস হলে জুতোর রং নিয়ে পরীক্ষা করতেই পারেন। যদি ফর্মাল পোশাক পরেন, তা হলে না করাই ভাল। পোশাককে কমপ্লিমেন্ট করে জুতোর রং বেছে নেওয়াটা দরকার। “বেল্ট আর জুতো যেন একে অন্যকে কমপ্লিমেন্ট করে। গঙ্গা-যমুনা হয়ে গেলে বিশ্রী লাগবে,” বলছেন জিৎ।

পারফিউম

সুগন্ধী নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁরা এ বিষয়ে একমত। বেশি সংখ্যক পুরুষমানুষ নাকি একটা গাড়ি ভাল না খারাপ সেটা যাচাই করার পদ্ধতিটাই মেনে চলেন যখন তাঁরা পছন্দের সুগন্ধীটি কিনতে যান। সফিস্টিকেশনটা সবারই চাই। কিন্তু তার সঙ্গে আবার দরকার নির্ভরশীলতা আর পারফর্ম্যান্স!

“একটা সময় ছিল, যখন নানা ধরনের পারফিউম নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতাম। কিন্তু আজকাল আমার আর কোনও স্পাইসি পারফিউম পছন্দ হয় না। ম্যাক্সিমাম চার ধরনের সুগন্ধী আমার পছন্দের। আর সেগুলো রিফ্রেশিং আর স্ট্রং হতেই হবে,” বলছেন জিৎ। সঙ্গে এটাও জানান যে অডি টয়লেট থেকে পারফিউম তাঁর অনেক বেশি পছন্দের।

করবেন না যেন

অনেকেই শার্টের সব জায়গায় পারফিউম স্প্রে করে থাকেন। “সেটা একদম না করাই ভাল। যখন কারও সঙ্গে দেখা হয়, আমরা হ্যান্ড শেক অথবা হাগ করি। তাই ঠিক কব্জির পেছন আর কানের নীচের দিকে পারফিউম স্প্রে করে দেখুন। তবে দু’হাতের কব্জিতে পারফিউম লাগিয়ে তা আবার ঘষবেন না যেন,” বলছেন জিৎ। আরও জানাচ্ছেন, যদি মিস্ট্রি ফ্যাক্টরটা বাড়াতে চান, তা হলে দু’তিনটে ফ্লেভার মিক্স করতেও পারেন। “খেয়াল রাখতে হবে এই মিক্সটা যাতে কোনও উদ্ভট গন্ধ না তৈরি করে,” বলছেন জিৎ।

চুল

যে কোনও অভিনেতার ক্ষেত্রেই চুল নিয়ে দারুণ পরীক্ষানিরীক্ষা করাটা শক্ত। কারণ? চরিত্রের লুকটা মাথায় আগে রাখতে হয়। তার পর নিজস্ব স্টাইল। “তবে এ বার ভাবছি চুলটা বাড়ালে কেমন হয়? অনেক দিন ধরেই তো চুলটা ছোট করে কেটে রেখেছি। যদি ফিল্মের চরিত্রের লুক বজায় রাখার অসুবিধে না থাকে, তা হলে এ বার ভাবছি চুলটা বাড়াব,” বলছেন জিৎ। বিদেশে এখন মেল বান রাখার চল উঠেছে। যাকে বলা হয় ‘মান’। অগোছালো চুলকে খোঁপার মতো করে বেঁধে রাখাটাও ওখানে স্টাইল স্টেটমেন্ট। অ্যাকাডেমি অনুষ্ঠানে তো জেয়ার্ড লেনো ও ভাবেই খোঁপা বেঁধে অস্কার নিতে গিয়েছিলেন। “এক সময় ডেভিড বেকহ্যামকেও আমি দেখেছি ও ভাবে চুলটা বাঁধতে। যদি চুলটা বড় করতে পারি, তা হলে হয়তো ওই ‘মান’ স্টাইলটাও ট্রাই করার কথা ভাবব!” বলে চমকে দিলেন জিৎ।

অবশ্যই করবেন

জিতের স্ত্রী মোহনা প্রায়ই বলেন তাঁকে চুলের যত্ন নিতে। “কিন্তু সেটা আমি একদম করি না। তবে আমি ছেলেদের বলব যেন আমার মতো এ ব্যাপারে কুঁড়ে না হয়। রেগুলার হেয়ার স্পা করাটা দরকার,” বলছেন তিনি।

রোদচশমা

১৯৫২তে অপটিক্যাল ডিজাইনার রেমন্ড স্টেজম্যান এমন এক রোদচশমার নকশা তৈরি করেছিলেন, যার পুরুষালি আবেদন ফ্যাশন দুনিয়ার অনেককেই চমকে দিয়েছিল। পরে অবশ্য মহিলাদেরও পছন্দ হয়েছিল সেই ওয়েফেয়ারার চশমার ডিজাইন। জন লেনন থেকে বব ডিলান, মেরিলিন মনরো থেকে জন এফ কেনেডি— সবাইকেই এক সময় এই রোদচশমা পরতে দেখা গিয়েছে। ওয়েফেয়ারার তো বটেই, তার সঙ্গে জিতের পছন্দ ‘এভিয়েটর গ্লাসেস’, অর্থাৎ পাইলট গ্লাসেস, যা এক সময় ডিজাইন করা হয়েছিল পাইলটদের চোখকে হাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য।

“রোদচশমার প্রতি আমার অসম্ভব একটা ফ্যাসিনেশন রয়েছে। শপিংয়ে গেলে ওগুলো কিনবই কিনব। যখন পছন্দ হয় একসঙ্গে অনেকগুলো কিনে ফেলি। কোনও স্পোর্টিং ইভেন্ট থাকলে আমার স্পোর্টি রোদচশমা পছন্দের,” বলছেন জিৎ।

করবেন না যেন

স্ট্রং জ-লাইন আর চওড়া চিকবোন হলে গোল বা এভিটয়েটর ফ্রেম মানায় ভাল। মুখের আকার বরফি বা পানের মতো হলে রেকট্যাঙ্গুলার রোদচশমা কেনা উচিত।

“এমনটা যেন না হয় যে মুখটা খুব ছোট অথচ কিনে বসেছেন ঢাউস একটা রোদচশমা,” বলছেন জিৎ।

স্কার্ফ আর টুপি

আন্তর্জাতিক ফ্যাশন দুনিয়ায় নানা ধরনের স্কার্ফ পরার চল শুরু হয়েছে বেশ কিছু মরসুম ধরেই। তা সে স্কটল্যান্ডের সীমান্ত এলাকার মেষপালকদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আধুনিক ডিজাইনের ‘শেপার্ড স্কার্ফ’ ই হোক বা রংবেরঙের ‘ক্যামোফ্লাজ স্কার্ফ’। স্টাইল সচেতন পুরুষদের জন্য গলায় একটুকরো লম্বা রুমালই নাকি কামাল করে দিতে পারে। “সিনেমায় গান শ্যুট করতে গেলে আমি স্কার্ফ পরি। তখন আন্তর্জাতিক স্টাইলগুলো অনুসরণ করি। বাস্তব জীবনে সাধারণত আমি স্কার্ফ পরি না,” বলছেন জিৎ।

তবে নানা ধরনের টুপি পরতে ওঁর খুব ভাল লাগে। ‘গেম’-এর শ্যুটিংয়ের সময় দুবাই থেকে আধ ডজন স্কাল ক্যাপ কাম এক্সটেনশন কিনে এনেছিলেন তিনি। মরুভূমির মধ্যে শ্যুটিং করতে গিয়ে সেগুলো নিজের পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে পরে নিয়েছিলেন।

“নর্ম্যাল স্কাল ক্যাপের সঙ্গে এক্সটেনশন লাগানো সেগুলোতে। তার ওপর রুপোলি তারা লাগানো। পরলে বেশ ইন্টারেস্টিং একটা লুক আসে,” বললেন তিনি।

করবেন না যেন

শেষে মুচকি হেসে বলেন জিৎ, “নিজের পছন্দমতো টুপি পরুন ক্ষতি নেই, কিন্তু কাউকে টুপি পরাতে দেবেন না যেন!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement