তিনি একাধারে বলিউড অভিনেত্রী। অন্য দিকে ইন্ডিয়ান নেটবল টিম ও বাস্কেটবল দলের ক্যাপ্টেন। সর্বগুণসম্পন্না বলতে যা বোঝায়, ইনিও ঠিক তাই।
টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রাচী তেহলান চলতি বছরের অগস্ট মাসেই বিয়ে করেছেন। পাত্র রোহিত সারোহা।
দিল্লির ফার্ম হাউজে করোনা বিধি মেনেই বসেছিল বিয়ের আসর। সেখানে প্রাচীকে দেখে চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না।
লাল লেহঙ্গা ও ভারী গয়নায় প্রাচীকে লাগছিল দুরন্ত। মায়ের সঙ্গে আবেগঘন মুহূর্তের ছবি পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
প্রি-ওয়েডিং সেরেমনি শুরু হয়েছিল ভাত সেরেমনির মাধ্যমে অগস্টের ৩ তারিখে। এর পর হয় মেহন্দি। গায়েহলুদ অনুষ্ঠানও হয়েছিল রীতি মেনেই। সঙ্গীতে ঠাকুমার সঙ্গে নাচেন প্রাচী। দিল্লির ওই ফার্ম হাউজে অনুষ্ঠানে ছিলেন ৫০ জন আমন্ত্রিত।
তাঁকে একেবারেই চেনা যাচ্ছিল না বলেছিলেন নেটাগরিকরা। সেই ছবিগুলিও লকডাউনে ভাইরাল হয়েছিল।
কোনও ছবিতে তিনি গায়ে হলুদের পোশাকে সনাতনী সাজে ধরা দিয়েছেন। টিকলি, ভারী গয়না, হলুদ ওড়নায় মন জিতেছেন অনুরাগীদের। তাঁর স্বামী রোহিতও কিন্তু কম যান না। বিয়ের একটি অনুষ্ঠানে রোহিত পরেন সাদা পাঞ্জাবি। মাথায় ছিল লাল বাঁধনি পাগড়ি। তখন প্রাচীর পরনে একেবারে ভিন্ন ধরনের সবুজ লেহঙ্গা।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে প্রাচী নজর কেড়েছিলেন ফুলের গয়নাতেও। কে বলবে ইনিই ৫৪তম ন্যাশনাল গেমসে নেটবলে স্বর্ণপদক বিজয়িনী।
হলুদ ফ্যান্সি লেহঙ্গাতেও নজর কেড়েছেন ২০১০ কমনওয়েলথ গেমসের নেটবল টিমের অধিনায়ক। তাঁর হাসি মন ভোলানো বলেন প্রত্যেকে।
শুধু কমনওয়েলথই নয়, মেজর এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপেও তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন ভারতীয় দলকে।
তাঁরই নেতৃত্বে ২০১১ সালে সাউথ এশিয়ান বিচ গেমসে রৌপ্য পদক জেতে ভারত। আন্তর্জাতিক স্তরে সেটাই ছিল এই খেলায় ভারতীয় কোনও দলের পাওয়া প্রথম পদক। তার পর ‘কুইন অব দ্য কোর্ট’ বলেও ডাকা হয়ে থাকে প্রাচীকে।
তবে শুধু খেলা আর অভিনয় নয়, পড়াশোনাতেও মেধাবী ছাত্রী ছিলেন তিনি। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক তিনি।
এর পর আইএমটি গাজিয়াবাদ থেকে মার্কেটিং ম্যানেজমেন্টে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন প্রাচী। পরবর্তীতে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে দিল্লির অপর একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচআর অ্যান্ড মার্কেটিংয়ে তিনি এমবিএ-ও করেছেন।
এরই মাঝে সাব-জুনিয়র খেলেছেন জাতীয় স্তরে, অনূর্ধ্ব ১৭-তে দিল্লির হয়ে ৮ বার মাঠে নেমেছেন বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশিপে। পদকও পেয়েছেন একাধিক। অনূর্ধ্ব ১৯-এও দিল্লির প্রতিনিধি ছিলেন প্রাচী।
আন্তঃকলেজ বিভাগে বাস্কেটবল, নেটবল সবেতেই প্রাচী এনেছেন পদক। সেই মেয়েটিকেই একেবারে অন্য রকম লাগছিল বিয়ের দিন।
স্বামীর সঙ্গে বিয়ের মঞ্চে আসার সময়ও লাজুক হাসি মাঠের দাপুটে চ্যাম্পিয়নের মুখে। প্রাচীর ক্ষেত্রে মাঠ থেকে পর্দায় আসাটাও কিন্তু বেশ অন্যরকম ছিল।
অভিনয়ে আসবেন বলে ১৫ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলেন তিনি। অভিনয়ে আসার অফার পেয়েই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন প্রাচী।
তবে মহিলা ক্রীড়াবিদদের বঞ্চনার কারণেই খেলা থেকে সরে আসছেন, এ কথাও উল্লেখ করেছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্পোর্টস অ্যাচিভার’। এই সম্মানও পেয়েছেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী হিসেবে।
ধারাবাহিকে জনপ্রিতার মাঝেই সুযোগ পেয়েছেন পঞ্জাবি ও দক্ষিণী ছবিতে অভিনয় করার।
এ হেন বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন প্রাচী প্রেমে পড়লেন দিল্লির ব্যবসায়ীর। রোহিত সারোহা এক জন পরিবেশপ্রেমীও। বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পেও যুক্ত রোহিত। ভালবাসেন পশুদের, ভালবাসেন প্রকৃতিকে।
প্রায় ৭-৮ বছর চিনতেন রোহিতকে। কিন্তু অনেক দিন যোগাযোগ ছিল না। লকডাউনেই আবার কাছাকাছি আসেন দু’জনে। সিদ্ধান্ত নেন একসঙ্গে পথ চলার।
বিয়ের দিন মনের মতো সেজেছিলেন প্রাচী। স্বামীও চোখ ফেরাতে পারছিলেন না তাঁর দিক থেকে। সিঁদুর দানের মুহূর্তও শেয়ার হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
পরিবারের প্রত্যেককে নিয়ে আনন্দে মেতে উঠেছিলেন প্রাচী। লকডাউনে আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছিলেন পরিবারের সঙ্গে। তবে বিয়ের অনুষ্ঠানে কারও মুখেই কিন্তু মাস্ক ছিল না। বিধি মেনেই বিয়ে হয়েছিল যদিও।
মেহন্দি সেরেমনিতে খোলা চুলে জাঙ্ক জুয়েলারিতে প্রাচীকে দেখে মেলানোই যাচ্ছিল না ইনিই হাইরেটেড টিআরপি ধারাবাহিক ‘দিয়া অউর বাত্তি’র লাজুক অভিনেত্রী।
স্বামীর সঙ্গে পাউট করেও ছবি পোস্ট করেছিলেন বিয়ের মঞ্চ থেকে। তবে সম্প্রতি তাঁর একটি ছবি ভাইরাল হয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এর আগে যদিও সুইমসুটে হট ফটোশ্যুটেও দেখা গিয়েছে প্রাচীকে। তবে এ বার একেবারে আলাদা। বিয়ের পর প্রথম বার স্বামীর সঙ্গে মুম্বই এসেছিলেন অভিনেত্রী। যদিও ঠিক মধুচন্দ্রিমা নয়। সেই সময়ই আবেগঘন পোস্ট করেছেন প্রাচী।
লিখেছেন, নিজেকে পিডিএ অর্থাৎ পাবলিক ডিসপ্লে অব অ্যাফেকশনের দুনিয়ায় স্বাগত জানাচ্ছি। একসঙ্গে যুগলে সমুদ্রতটে বেড়াতে আসা। আর তার পর?
তিনি লিখেছেন, ‘ফার্স্ট মাচি টুগেদার’। এই ছবিটা পারফেক্ট হওয়া উচিত তাই না? এ কথা যোগ করে নিজের এবং স্বামীর একটি লিপলকের ছবি দিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই ছবিই ভাইরাল হয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ছবি পোস্টের পরই শুভেচ্ছার বন্যায় ভেসেছেন প্রাচী।