যাঁদের কোনও ‘ব্যাক আপ’ নেই, আমি তাঁদের প্রতিনিধি, ‘রক্তবীজ’-এর সাফল্য তাঁদের উৎসাহ দেবে

পুজোয় মুক্তি পেয়েছে নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘রক্তবীজ’। ছকভাঙা পথে হেঁটেও সাফল্যের স্বাদ পেয়েছেন নির্মাতারা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৪০
Share:

‘রক্তবীজ’ ছবির শুটিং ফ্লোরে (বাঁ দিকে) শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায় (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

পুজোর চারটি ছবির প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ্যে। নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘রক্তবীজ’ বক্স অফিসের দৌড়ে প্রথমে খানিক পিছিয়ে থাকলেও লোকমুখে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং তার পর থেকেই ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়েছে দৌড়ে। পরিচালক জুটির অনুরাগীরা শুরু থেকেই জানতেন, এই ছবি শিবু-নন্দিতা ঘরানার ছবি নয়। শুরু থেকেই ছক ভেঙেছেন পরিচালকদ্বয়। পুজোর প্রতিযোগিতায় আরও তিনটি হেভিওয়েট ছবির মাঝে নিজেদের ছবি এনেছেন। ছবির প্রেক্ষাপট এ বার চেনা ছকে পারিবারিক গল্পের বাইরে বেরিয়ে হয়েছে সন্ত্রাসবাদ। সব মিলিয়ে ঝুঁকি ছিলই। কিন্তু কোন পথে সাফল্য এল? খোলসা করলেন শিবপ্রসাদ।

Advertisement

এই ছবি নিয়ে শুরু থেকে কোনও রকম দ্বিধা কি কাজ করেছিল? শিবপ্রসাদ বললেন, ‘‘একদমই নয়। আমরা আমাদের ছবি নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। ছবিটা করতে সময় লেগেছে। কারণ, বাজেটটা বেশি ছিল।’’ পরিচালক বিশ্বাস করেন, যে কোনও ছবি মুক্তির জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। ‘রক্তবীজ’-এর জন্যও তাই পুজোর মরসুমকে বেছেছিলেন তাঁরা। শিবপ্রসাদ বললেন, ‘‘লকডাউনের পর মনে হয়েছিল, এমন কিছু ছবি থাকে যেগুলো ফেলে রাখা উচিত নয়। এই ছবিটাও সে রকম ছবি।’’

‘রক্তবীজ’ ছবির একটি দৃশ্যে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

‘রক্তবীজ’-এর সাফল্য কি আগামী দিনে ছবির বিষয় নির্বাচনে তাঁকে আরও সাহস জোগাবে? শিবপ্রসাদ এই বক্তব্য মেনে নিয়ে বললেন, ‘‘‘ইচ্ছে’ ছবিটা সফল না হলে তো ‘মুক্তধারা’ তৈরির সাহস পেতাম না। কোনও স্টার ছাড়া যে ছবি সফল হতে পারে, এই ভরসা তো দর্শকই জুগিয়েছিলেন।’’ এরই সঙ্গে পরিচালক যোগ করলেন, ‘‘এর পরেও যে ছবিগুলো ভাবা আছে, সেগুলো একটু অন্য ধরনেরই হতে চলেছে। কিন্তু আমার ধারণা, দর্শকের ভাল লাগবে।’’

Advertisement

‘রক্তবীজ’-এর সাফল্যকে রাহুল দ্রাবিড়ের রিভার্স সুইপ হিসাবে দেখতে চাইছেন শিবপ্রসাদ। তাঁর কথায়, ‘‘যে শটগুলো আমাদের ক্রিকেট ব্যাকরণের বাইরে ছিল, সেগুলোকে পিচে ফিরিয়ে আনতে ‘রক্তবীজ’ হয়তো প্রথম পদক্ষেপ।’’ পরিচালকের মতে, তাঁরা প্রচেষ্টা করেছেন। দর্শকের ছবি পছন্দ হয়েছে। এর বেশি তাঁদের কিছু প্রত্যাশা নেই। কিন্তু এই ছবির সাফল্যের নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে বলে মনে করেন শিবপ্রসাদ। তাঁর কথায়, ‘‘এক দিকে যেমন পুজোর আবহ রয়েছে, তেমনই ভাই-বোনের সম্পর্কের নাটকীয়তাও রয়েছে।’’

‘রক্তবীজ’ ছবির একটি দৃশ্যে আবীর চট্টোপাধ্যায় এবং মিমি চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

তবে সাফল্যের মধ্যেও কোথাও যেন একটু হতাশাও দানা বেঁধেছে শিবপ্রসাদের মনে। কারণ, পরিচালকের মতে, মাল্টিপ্লেক্সে ‘রক্তবীজ’ প্রথম সপ্তাহে আশানুরূপ শো পায়নি। শিবপ্রসাদ বললেন, ‘‘যে শো পেয়েছি সেখানে দর্শকাসন কম। ফলে আজকে ছবির যে ব্যবসা হচ্ছে তার জন্য ছবি দায়ী নয়, দায়ী মাল্টিপ্লেক্স।’’ পুজোয় মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বাঘা যতীন’ এবং ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’-র পরিবেশক পিভিআর আইনক্স। ইন্ডাস্ট্রির এক সূত্রের মতে, মাল্টিপ্লেক্সে দেব বা কোয়েল অভিনীত ছবির ভাল শো থাকাটা স্বাভাবিক। অবশ্য অন্য উদাহরণও দিলেন শিবপ্রসাদ। প্রিয়া সিনেমার কর্ণধার ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’ ছবিতে অভিনয় করেছেন। শিবপ্রসাদের মতে, ইন্ডাস্ট্রিতে প্রযোজক এবং পরিবেশক এই দুই সত্তাকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। তিনি মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘আমি কিন্তু প্রিয়াতে সন্ধ্যায় শো পেয়েছি। মিতিন মাসি সেখানে দুপুরে শো পেয়েছে।’’ পরিচালক বিশ্বাস করেন, ছবি ভাল হলে দর্শক ঠিক সেই ছবি দেখে নেন। প্রেক্ষাগৃহে না হলে ভবিষ্যতে ওটিটিতেও দেখে নেন। ছবির ফলাফল দেখে শুক্রবার থেকে মাল্টিপ্লেক্সে শোয়ের সংখ্যা বাড়বে বলেও আশাবাদী পরিচালক।

শহরের প্রেক্ষাগৃহে ‘রক্তবীজ’-এর বর্তমান পরিস্থিতি দেখে শিবপ্রসাদের মনে হচ্ছে, ‘‘মানুষ খাবার খেতে চাইছেন। আমার কাছে ভাল পদ রয়েছে। কিন্তু রেস্তরাঁয় জায়গা নেই! বিষয়টা এ রকম জায়গায় দাঁড়িয়েছে।’’ তবে একই সঙ্গে পরিচালক বিশ্বাস করেন যে, তিনি বাংলা ইন্ডাস্ট্রির একটা বড় সংখ্যক নির্মাতাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন, যাঁদের কোনও রকম ‘ব্যাক আপ’ নেই। শিবপ্রসাদের কথায়, ‘‘আমাদের ছবির পেছনে কোনও বড় প্রযোজক বা পরিবেশক নেই। সেখানে ‘রক্তবীজ’ যদি জেতে, তা হলে ভবিষ্যতে বহু প্রযোজক এবং পরিচালক বাংলায় ছবি তৈরি করতে মনে জোর পাবেন।’’

‘রক্তবীজ’ ছবির মাধ্যমে দীর্ঘ দিন পর বাংলা ছবিতে ফিরেছেন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি মুক্তির পর অভিনেতার সঙ্গে শিবপ্রসাদের কোনও কথা হয়েছে? পরিচালক বললেন, ‘‘বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। তবে শুরু থেকেই এই ছবি নিয়ে ভিক্টরদা কনফিডেন্ট ছিলেন।’’ কথাপ্রসঙ্গেই স্মৃতিচারণ করলেন পরিচালক। বললেন, ‘‘ভিক্টরদা আমাকে বলেছিলেন, ছবির পোস্টার উল্টো লাগালেও দর্শক ছবিটা দেখবেন! আর এটাও বলেছিলেন যে, আমাদের ছবিতে সরস্বতী এবং লক্ষ্মী— দুই দেবীরই আশীর্বাদ ঝরে পড়বে।’’ এখন সেই ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যাওয়ায় খুশি শিবপ্রসাদ। শুক্রবার জাতীয় স্তরে মুক্তি পেয়েছে ‘রক্তবীজ’। কিন্তু খুব একটা টেনশন করতে নারাজ পরিচালক বললেন, ‘‘রাজ্যে ভাল ফল করেছে বলেই জাতীয় স্তরে এক শতাংশ হলেও আমি নিশ্চিত, ছবিটা দর্শক দেখবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement