সুদর্শন মডেল হিসেবে বরাবরই জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু কোনওদিনই বলিউডের প্রথম সারির নায়ক হয়ে উঠতে পারেননি ডিনো মোরিয়া। প্রত্যাশা জাগিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে এলেও তাঁর কেরিয়ার থেকে গিয়েছে সংক্ষিপ্ত হয়েই।
ডিনোর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৯ ডিসেম্বর। তাঁর বাবা ছিলন ইতালীয়। মা, কেরলের মেয়ে। দাদা নিকোলো এবং ভাই সান্তিনোর সঙ্গে ডিনোর বেড়ে ওঠা বেঙ্গালুরুতেই। বেঙ্গালুরুর মিলিটারি স্কুল এবং ক্ল্যারেন্স হাইস্কুলের পরে স্নাতক স্তরে ডিনোর পড়াশোনা সেন্ট জোসেফস কলেজে।
কলেজের পর থেকেই ডিনো অল্পবিস্তর মডেলিং শুরু করেন। সুঠাম চেহারা এবং সৌম্যদর্শন মুখে মডেলিংয়ের দুনিয়ায় জনপ্রিয়তা পেতে সময় লাগেনি।
মডেলিং করতে করতেই সুযোগ ছবিতে। ১৯৯৯ সালে মুক্তি পায় ডিনোর প্রথম ছবি ‘প্যায়ার মেঁ কভি কভি’। রাজ কৌশলের পরিচালনায় এই ছবিতে ডিনো স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন নবাগত রিঙ্কি খন্না এবং সঞ্জয় সুরীর সঙ্গে।
ছবিটি ব্যর্থ হলেও জনপ্রিয় হয়েছিল এর গান। তবে আশ্চর্যের বিষয়, এই ছবির মূল কুশীলবরা পরবর্তী জীবনে সে রকম সফল হতে পারেননি।
২০০০ সালে ডিনো অভিনয় করেন তামিল ছবি ‘কান্দুকোন্দাইন কান্দুকোন্দাইন’-এ। বলিউডের তুলনায় তিনি অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে অভিষেকের পরে।
বছর দুয়েক পরে ‘রাজ’ এবং ‘গুনাহ’ ছবিতে অভিনয় করেন ডিনো। দু’টি ছবিতেই তাঁর অভিনয় দর্শকদের নজর কেড়েছিল।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘বাজ: এ বার্ড ইন ডেঞ্জার’, ‘শশশশসস…’, ‘প্ল্যান’, ‘ইনসাফ: দ্য জাস্টিস’, ‘চেহরা’, ‘অকসর’, ‘হলিডে’, ‘জুলি’, ‘আপ কি খাতির’, ‘লাইফ মেঁ কভি কভি’-সহ বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন ডিনো।
তবে ধীরে ধীরে নায়ক থেকে পার্শ্বনায়কের ভূমিকায় চলে যেতে থাকেন ডিনো। ‘ওম শান্তি ওম’, ‘দশ কহানিয়াঁ’, ‘ভ্রম’, ‘মিটিং সে মিটিং তক’, ‘অনামিকা’, ‘হর পল’, ‘গুমনাম-দ্য মিস্ট্রি’, ‘অ্যাসিড ফ্যাক্টরি’, ‘প্যায়ার ইম্পসিবল’, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’-সহ বেশ কিছু ছবি উজ্জ্বল তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে।
তবে ছবির সুযোগ এলেও ডিনো রয়ে যান পিছনের সারিতেই। প্রত্যাশিত জনপ্রিয়তা অধরাই থেকে যায়। অভিনয়ের সুযোগ কমে যাওয়ায় শেষে তিনি প্রযোজক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। ২০১২ সালের ছবি ‘জিসম টু’ ছিল তাঁরই প্রযোজিত।
কিন্তু এর পর ডিনোকে প্রযোজক হিসেবেও আর সেভাবে পায়নি বলিউড। ২০১০-এ টেলিভিশনে রিয়্যালিটি শো ‘খতরোঁ কে খিলাড়ি’-তেও অংশ নেন তিনি।
কেরিয়ারের মতো টানাপড়েনের সাক্ষী থেকেছে ব্যক্তিগত পরিসরে ডিনোর সম্পর্কও। ‘রাজ’ ছবির নায়িকা বিপাশা বসুর সঙ্গে দীর্ঘ দিন সম্পর্ক ছিল ডিনোর। প্রায় ৬ বছরের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় ২০০২ সালে।
পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে ডিনো জানিয়েছিলেন, তাঁদের দু’জনেরই বয়স তখন কম ছিল। সে কারণেই কাছাকাছি এসেছিলেন। পরে সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি। তবে প্রেম ভেঙে যাওয়ার পরেও ডিনো এবং বিপাশার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রয়েছে।
পরে জন আব্রাহাম, হরমন বাওয়েজা-সহ একাধিক পুরুষ এসেছেন বিপাশার জীবনে। ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল তিনি বিয়ে করেন কর্ণ সিংহ গ্রোভারকে। অন্য দিকে, ডিনোর সঙ্গেও অভিনেত্রী লারা দত্ত, ফ্যাশন ডিজাইনার নন্দিতা মহান্তিকে জড়িয়ে গুঞ্জন শোনা গিয়েছে। তবে ডিনো এখনও অবিবাহিত।
ব্যক্তিগত পরিসরের পাশাপাশি ডিনো খোলামেলা তাঁর কেরিয়ার নিয়েও। তাঁর দাবি, তিনি বেছে বেছে ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাই তাঁর ছবির সংখ্যা কম। স্বজনপোষণকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চান না তিনি।
ডিনোর কথায়, এক জন অভিনেতা বা অভিনেত্রী চাইবেনই তাঁর সন্তানকে সাহায্য করতে। তার মধ্যে তিনি দোষের কিছু দেখেন না। ‘রাজ’-এর নায়ক মনে করেন, স্বজনপোষণ একটা সময় অবধি সাহায্য করতে পারে। কিন্তু শেষ অবধি জয়ী হয় প্রতিভাই।
অতীতের হার্টথ্রব ডিনোকে এখন দেখা যাচ্ছে ওয়েব সিরিজেও। ‘হস্টেজেস’-এর দ্বিতীয় সিরিজে তিনি সম্পূর্ণ খলনায়কের চরিত্রে। সম্প্রতি ‘মেন্টালহুড’ বলে একটি ওয়েব সিরিজেও তাঁকে দেখা গিয়েছে।
ওয়েব সিরিজ ছাড়াও ডিনো কাজ করছেন ‘হেলমেট’ ছবিতে। জানিয়েছেন, ভাল সুযোগ পাননি বলেই এত দিন কাজ করেননি।
অভিনয়ে সে ভাবে এখন দেখা না গেলেও ডিনো সক্রিয় ফ্যাশন দুনিয়ায়। এ ছাড়াও রেস্তরাঁ এবং ফিটনেস সেন্টারের মালিক তিনি।
অনেক প্রত্যাশা জাগিয়ে শুরু করলেও ডিনোর নামের পাশে বসে যায় ‘বিস্মৃত’ পরিচয়। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে আবার নতুন ইনিংস শুরু করতে চাইছেন তিনি।