দেবলীনার সে কাল এবং এ কাল।
ছোটবেলা থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন ছিল দেবলীনা কুমারের। পড়াশোনার সঙ্গে সমান তালে চলছিল নাচের প্রশিক্ষণ। তবে সেই বয়সে নিজের ৭৮ কেজি ওজনের শরীরকে অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছাপূরণের পথে অন্তরায় বলে মনে হত দেবলীনার। সেই বাধা পেরতেই শরীরচর্চার দিকে মনে দিয়েছিলেন তিনি। বলিউডের শিল্পা শেট্টি, বিপাশা বসুদের মতোই বর্তমানে টলিউডে দেবলীনাকে দেখে জিমে যেতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন অনেকে। তবে আগাগোড়াই কি এ রকম ছিলেন তিনি? বৃহস্পতিবার অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে ভেসে উঠল আজ থেকে প্রায় ১১ বছর আগের ছবি। ফোলা গাল, মেদবহুল শরীরের সেই অষ্টাদশী দেবলীনার সঙ্গে বর্তমানের ‘রঙ্গবতী’-র মিল খুঁজে পাওয়া দায়।
কী ভাবে এল এই পরিবর্তন? উত্তর খুঁজতে আনন্দবাজার ডিজিটালের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল দেবলীনার সঙ্গে।
ওজন বেশি হলেও কোনও রকম শারীরিক অস্বস্তিতে ভোগেননি দেবলীনা। নাচ করতেও আগাগোড়াই স্বছন্দ বোধ করতেন তিনি। তবে নিজেকে আয়নায় দেখে হীনমন্যতায় ভুগতেন। তাঁর মনে হত, মেদবহুল চেহারার জন্যই নাচের জৌলুস খানিক কমে গেল বুঝি! দেবলীনা জানালেন, “ছোটবেলায় ভাবতাম অভিনেত্রী হতে গেলে রোগা হওয়া প্রয়োজন। তখনও বিদ্যা বালন বা অপরাজিতাদির (অপরাজিতা আঢ্য) মতো অভিনেত্রীদের ছক ভাঙা কাজগুলো বুঝতাম না। কলেজের তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত আমার ওজন বেশি ছিল। এর পর ধীরে ধীরে শরীরচর্চায় মন দিই।”
তবে শুরুতেই জিমের কড়া নাড়েননি দেবলীনা। বাড়িতেই প্রশিক্ষক রেখে শুরু করেছিলেন শরীরচর্চা। মেদ ঝরিয়ে তন্বী হতে খাওয়াদাওয়ার উপর কড়া নজরদারি ছিল তাঁর। কিন্তু এই বিধিনিষেধ মেনে কয়েকদিন কাটানোর পর অভিনেত্রী বুঝেছিলেন খুব বেশিদিন কড়া ডায়েট করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তাই যাতে রসনায় না ছেদ পড়ে, সেই তাগিদে আরও বেশি মন দেন শরীরচর্চায়। জিম যেতে শুরু করেন প্রতিদিন।
বর্তমানে তিনি নিজের ওজন কমিয়ে এনেছেন ৫৮ কেজিতে। দেবলীনার কথায়, “অনেকেই জোর করে জিম যান, শরীরচর্চা করেন। তবে আমার কাছে কিন্তু এটা একটা অভ্যাসের মতো । একদিন জিম না করতে পারলেই মন খারাপ লাগে।” লকডাউনে কী ভাবে নিজেকে ঠিক রাখছেন অভিনেত্রী? কী ভাবে চলছে শরীরচর্চা? দেবলীনা জানালেন, ২০১৭ সালেই বাড়িতে কিছু মেশিন কিনে একটি ছোট জিম তৈরি করে ফেলেছিলেন তিনি। আপাতত সেখানেই ঘাম ঝরিয়ে নিজেকে সতেজ রাখছেন অভিনেত্রী। অতিমারির সময় এই শরীরচর্চাই নাকি তাঁর সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। অবসর পেলে দিনে দু’বেলাও জিম করেন তিনি।
দেবলীনার ইনস্টাগ্রাম স্টো রি।
গত বছর লকডাউনে নতুন রান্না শিখেছিলেন দেবলীনা। এই বছর লকডাউনে তাই পাকা রাঁধুনির মতো পরিবারের সদস্যদের মুখে তুলে দিচ্ছেন রকমারি পদ। নিজের রসনাতৃপ্তিতেও খামতি রাখছেন না। হাসতে হাসতে দেবলীনা বললেন, “আমি সপ্তাহে ৪-৫ দিন মাটন খাই। তবে অল্প পরিমাণে। বিকেল হলে দুধ চা খাই। আবার মাঝেমধ্যে ইচ্ছা হলে রাতে বিরিয়ানিও খেয়ে ফেলি। এ সব খাওয়ায় কোনও অসুবিধা নেই। মাপ বুঝে ক্যালোরি ঝরিয়ে ফেললেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।” তবে আগের লকডাউনের মতো এ বার আর সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ার উপায় নেই। তাই বাড়িতে চালানোর মতো এক ধরণের বিশেষ সাইকেল কেনার পরিকল্পনা করছেন তিনি।
তা হলে কি অভিনেত্রী হওয়ার জন্যই সত্যিই মেদ ঝরানো প্রয়োজন? এখনও কি এমনটাই মনে করেন দেবলীনা?
না। এই ভাবনাকে বহুকাল আগেই মন থেকে মুছে ফেলেছেন দেবলীনা। তবে নিজের শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখতে শরীরচর্চার পরামর্শ দিচ্ছেন অভিনেত্রী।