(বাঁ দিকে ) আকিরা কুরোসাওয়া। (ডান দিকে) শুভ্রজিৎ মিত্র। ছবি: সংগৃহীত।
পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্রের বৈঠকখানা ঘর সেখানেই সাজানো রকমারি তলোয়াড়, ছুরি, ভোজালি-সহ ধারালো সব অস্ত্র। বিনা অনুমতিতে যে যে অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ, সেই সব অস্ত্র ছবিতে ব্যবহার করবেন। সম্প্রতি সেই সব অস্ত্রের ছবি সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নিয়েছেন ‘দেবী চৌধুরাণী’র পরিচালক। যদিও পরিচালক সব লাইসেন্স নিয়ে অস্ত্র ব্যবহার করছেন। এত দিনে ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই জেনে গিয়েছেন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস ‘দেবী চৌধুরাণী’ নিয়ে মেগা ছবি বানাচ্ছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক শুভ্রজিৎ। দেবী চৌধুরাণীর ভূমিকায় শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, ভবানী পাঠকের চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন চক্রবর্তীর মতো অভিনেতারা। কিন্তু হঠাৎ এত ধারালো অস্ত্র নিয়ে কী করছেন পরিচালক, প্রশ্ন করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তাতে পরিচালক জানান, এই সব অস্ত্র নাকিই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রশিক্ষণের জন্য। প্রশিক্ষক বা অ্যাকশন ডিরেক্টররা আসছেন গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কেউ ‘আদিপুরুষ’ ছবির প্রশিক্ষক, আবার কেউ ‘পিএস ১’-এর। তালিকায় রয়েছেন বলিউডের নামজাদা অ্যাকশন প্রশিক্ষক ও। তা হলে কি দক্ষিণের ছবির মতো অ্যাকশনের ঝলক দেখা যাবে এই ছবিতে?
এক মুহূর্ত বিলম্ব না করেই শুভ্রজিৎ বলেন, ‘‘এই ছবি কোনও দক্ষিণী ছবির রিমেক হবে না। এখানে ‘আরআরআর’ বা অন্য ছবির মতো উড়ে উড়ে কালারিপাত্তু করবেন না অভিনেতারা। বরং অনেক রিসার্চ করে বানানো হচ্ছে এই ছবি। আসলে ধনুর্বেদ সংহিতা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ করা হবে। একটা সময় ভারতীয় মার্শাল আর্টকে ধুয়েমুছে শেষ করে ফেলে ব্রিটিশ ও মোগল শাসকেরা। সেটাই ফিরিয়ে আনা হবে আমার ছবিতে। তবে আমার এই ছবির অনুপ্রেরণা হলেন বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক কুরোসাওয়া।’’ শুভ্রজিৎ জানান, বিশ্ববন্দিত পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া তাঁর ‘রসমন’, ‘রান’, ‘সেভেন সামুরাই’ ছবিতে যে ভাবে জাপানের মার্শাল আর্টকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান, শুভ্রজিৎ তাঁর ‘দেবী চৌধুরাণী’-তে দেশীয় মার্শাল আর্টকে সেই উচ্চতায় নিয়ে যাবেন। যদিও অস্ত্র হাতে নিতেই খানিক রক্তপাত হয়েছে পরিচালকের। আঙুল কেটেছে তাঁর। খানিক রসিকতা করেই শুভ্রজিৎ বলেন, ‘‘লোকে ঘাম ঝরায়। এই ছবি করতে গিয়ে আমি রক্ত ঝরাচ্ছি।’’
খুব শীঘ্রই প্রশিক্ষণ শুরু করবেন শ্রাবন্তী, প্রসেনজিৎ, বিবৃতি, অর্জুনেরা। প্রত্যেকেরই অ্যাকশন দৃশ্য রয়েছে। ইতিমধ্যেই শুটিংয়ের রেকি সেরেছেন। কলকাতায় ২০ শতাংশ শুটিং হবে, বাকি শুটিং হবে পুরুলিয়া-বীরভূমের মতো জেলায়। তবে শুভ্রজিতের এই ছবি বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে নতুন ধারা সূচনা করবে বলেই আশাবাদী পরিচালক। শুধু ছবির অ্যাকশন দৃশ্যের শুটিংয়ের জন্যই বরাদ্দ করা হয়েছে ২০ দিন! হাল আমলে গোটা বাংলা সিনেমার শুটিং হয় ১২-১৫ দিনে। সেই দিক থেকে ব্যতিক্রমী ‘দেবী চৌধুরাণী’।