ভর্তি হয়েছিলেন মুম্বইয়ের ল’ কলেজে। কিন্তু ওকালতি আর করা হল না। পরিবর্তে দেবেন বর্মা পা রাখলেন ইন্ডাস্ট্রিতে। তিনি বলিউডের আইকনিক কমেডিয়ানদের মধ্যে অন্যতম।
১৯৩৭ সালের ২৩ অক্টোবর দেবেনের জন্ম গুজরাতের কচ্ছ প্রদেশে। তার পর অবশ্য শৈশবের কিছু দিন কাটে মুম্বইয়ে। কিন্তু বেশি দিন থাকা হল না মুম্বইয়েও। পরিবারের সঙ্গে দেবেন চলে গেলেন পুণে। সেখানে ডাক্তারি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন তাঁর দিদি।
পঞ্চগনীর একটি স্কুল থেকে পাশ করার পরে দেবেন ভর্তি হন পুণের নওরসজি ওয়াদিয়া কলেজ ফর আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সে। সেখানেই অভিনয়ের নেশা পেয়ে বসে দেবেনকে।
পরের গন্তব্য মুম্বইয়ের (তখন বম্বে) সরকারি ল’ কলেজ। কিন্তু ছ’মাসের বেশি ক্লাস করলেন না। তখন তাঁর মনপ্রাণ জুড়ে শুধুই অভিনয়। যোগ দিলেন একটি নাটকের দলে।
সেই নাটকের দলের একটি স্টেজ শো-এর সময় দর্শকাসনে ছিলেন বি আর চোপড়া। তিনি দেবেনকে সুযোগ দেন ‘ধর্মপুত্র’ ছবিতে। ১৯৬১ তে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি।
ছবিটি বক্স অফিসে সে ভাবে সফল হতে পারেনি। তবে ছবির সুবাদে বিদেশে কিছু স্টেজ শো-এ অংশ নেওয়ার সুযোগ পান দেবেন। দেশে ফিরে চাকরি পান এভএস স্টুডিয়োজ-এ। মাসিক বেতন ছিল ১৫০০ টাকা।
কাজের সূত্রে দেবেন প্রায়ই চেন্নাই (তখন মাদ্রাজ) যেতেন তখন। এই সময়ে তাঁর অভিনয়ের খুঁটিনাটি আরও নিখুঁত হয়।
১৯৬৩ সালে মুক্তি পেল দেবেন বর্মা অভিনীত ‘গুমরাহ’। ছবিতে তিনি অশোককুমারের পরিচারকের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়।
এর পর মুম্বইয়ে থেকে হিন্দি ছবিতে এক টানা কাজ করবেন বলে দেবেন বর্মা চুক্তি ভেঙে এভিএম স্টুডিয়োজের কাজ ছেড়ে দেন।
ক্রমে ‘দেবর’, ‘মিলন’, ‘অনুপমা’-র মতো ছবির সঙ্গে বলিউডে দেবেনের পায়ের নীচের জমি মজবুত হতে থাকে।
১৯৭৫ সালে ‘চোরি মেরা কাম’ ছবিতে দেবেনের অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে নেয়। কমেডিয়ান এবং চরিত্রাভিনেতা, দুই দিকেই দেবেন নিজেকে কার্যত অপরিহার্য করে তুলতে পেরেছিলেন।
দেবেনের ব্যস্ততা এই পর্যায়ে পৌঁছয় যে, তিনি একসঙ্গে ষোলোটি ছবিতেও অভিনয় করতেন এক সময়ে। সম্পর্কের খাতিরে তিনি কাউকে ‘না’ বলতে পারতেন না।
দাদামণি বা আশোককুমারকে তিনি বিশেষ সম্মান করতেন। পরিশ্রমী ও সদালাপী দেবেনও অশোককুমারের প্রিয়পাত্র ছিলেন। তাঁকে এক দিন বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেন অশোককুমার। সেখানে দেবেনের সঙ্গে আলাপ হয় অশোকুমারের মেয়ে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
আলাপ থেকে ক্রমে প্রেম। কিন্তু পছন্দের পাত্র হলেও দেবেনের সঙ্গে মেয়ে প্রিয়ার বিয়েতে নিমরাজি ছিলেন অশোককুমার। তাঁর বড় মেয়ে ভারতীও বিয়ে করেছিলেন এক গুজরাতি চিকিৎসককে। তাই তিনি চেয়েছিলেন রূপা কোনও বাঙালি তরুণকে বিয়ে করুক। শেষে কাকা কিশোরকুমারের উদ্যোগে বিয়ে হয় রূপা ও দেবেনের।
এক বার অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে দেবেনকে মুম্বই থেকে চেন্নাই যেতে হয়েছিল। শোনা যায়, ফেরার পথে তাঁর একটি ব্যাগ খোয়া যায়। সেখানে ছিল তাঁর পাওয়া তিনটি পুরস্কার। সেগুলি আর ফিরে পাননি তিনি।
তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য ‘মিলন’, ‘বুঢঢা মিল গ্যয়া’, ‘মেরে অপনে’, ‘অন্নদাতা’, ‘মালিক’, ‘ফির কব মিলোগি’, ‘অর্জুন পণ্ডিত’, ‘দুসরা আদমি’, ‘খট্টা মিঠা’, ‘সফেদ ঝুট’, ‘গোলমাল’, ‘নাস্তিক’, ‘জলমহল’ এবং ‘আঙ্গুর’।
বাসু চট্টোপাধ্যায়, হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়, গুলজারের মতো পরিচালকের পছন্দের অভিনেতা ছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ের পরিচালকদের কাছ থেকেও কুর্নিশ আদায় করে নিতে সফল হন। অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু ছবি প্রযোজনা ও পরিচালনাও করেছেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকে ‘আন্দাজ অপনা অপনা’, ‘হালচাল’, ‘ইয়ে দিল্লগি’, ‘আকেলে হম আকেলে তুম’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘ক্যায়া কহেনা’-সহ বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন এই জনপ্রিয় অভিনেতা। সাদা কালোর পাশাপাশি রঙিন ছবির যুগেও তাঁর ছিল অনায়াস গতি।
শোনা যায়, এক সময় তিনিও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়ে হোঁচট খান। কোনও এক ছবির সেটে তরুণী সহকারী পরিচালকের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ মেনে নিতে পারেননি তিনি। এর পরই ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রি থেকে গুটিয়ে নেন নিজেকে। ২০০৩ সালে তাঁর অভিনীত শেষ ছবি মুক্তি পেয়েছিল।
পাঁচ দশকেরও বেশি সময় বলিউডের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে থাকা এই অভিনেতা জীবনের মঞ্চ থেকে বিদায় নেন ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর। বলিউডের রোশনাই আগের থেকে আরও অনেক বাড়লেও তাঁর মতো অভিনেতার শূন্যস্থান পূরণ হওয়া কঠিন।